শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জাবির ভর্তি পরীক্ষা : কেন্দ্র পরিদর্শন নিয়ে উপাচার্যের ইঁদুর-বিড়াল খেলা

আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:১০

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ‘এ’ ইউনিট (গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদ) এবং ‘এইচ’ ইউনিটের (ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি) ভর্তি পরীক্ষা সোমবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার মাঝেও চলছে আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি। পরীক্ষা চলাকালে প্রতিদিনই উপাচার্যকে কালো পতাকা প্রদর্শন করছেন তারা। 

আন্দোলনকারীরা উপাচার্যকে পরীক্ষা কেন্দ্রে অবাঞ্চিত ঘোষণা করলেও ‘চোরাগুপ্তা’ কেন্দ্র পরিদর্শন করছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। এনিয়ে আন্দোলনকারী এবং উপাচার্যের মধ্যে ‘ইঁদুর-বিড়াল’ খেলা চলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সোমবার ভর্তি পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন দুপুর ২টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। এর আগে রবিবার বিকেল ৫টার দিকে শেষ শিফটের পরীক্ষা চলাকালে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করেন উপাচার্য। 

আরও পড়ুন : ছাত্রদলের উপর হামলায় ডাকসু ভিপির নিন্দা

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদেরর শিক্ষকদের মধ্যে তার অনুসারীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় ভর্তি পরীক্ষার প্রথম দিন উপাচার্য সেখানকার পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। পরীক্ষার শেষ শিফটে কাউকে না জানিয়ে কেন্দ্র পরিদর্শনে যান তিনি। যাতে আন্দোলনকারীরা তার পরিদর্শনে যাওয়ার বিষয়টি জানতে না পারে এবং কোন ধরনের বাঁধার সম্মুখীন না হন। 

সোমবার মধ্যাহ্ন বিরতির পরপরই পদার্থবিজ্ঞান অনুষদের কেন্দ্র পরিদর্শন করেন উপাচার্য। সে বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষকই তার অনুসারী। এজন্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে লুকোচুরি করে কেন্দ্র পরিদর্শন করেন উপাচার্য।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মো. আশিকুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, ‘উপাচার্য আমাদের সঙ্গে ইঁদুর-বিড়াল খেলা খেলছেন। এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে কেন্দ্র পরিদর্শন করে উপাচার্য হাস্যকর কাজ করছেন। তিনি চোরাগোপ্তা পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে ঘৃণিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ অফিসের মাধ্যমে তা প্রচার করছেন। আমরা দুর্নীতির দায়ে তাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছিলাম। এখন তিনি নৈতিকভাবেও ভেঙ্গে যাচ্ছেন।’

আন্দোলনকারী শিক্ষক ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, ‘উপাচার্যকে আমরা অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছি। তাকে প্রতিরোধের ঘোষণা আমরা কখনই দেইনি। উপাচার্য তার নৈতিক বোধ শক্তি হারিয়েছেন। এজন্য তিনি চোরাগোপ্তা কেন্দ্র পরিদর্শন করে নিজের অবস্থান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তার নৈতিক শক্তি থাকলে জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইতেন না। বিচারের মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করতেন। আমরা শুধু এই উপাচার্যের পদত্যাগই চাই না। বরং একজন দুর্নীতিবাজের শাস্তিও দাবি করছি আমরা।’

এদিকে উপাচার্যের সঙ্গে পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে না গিয়ে সোমবার দুপুর তিনটায় আলাদাভাবে নতুন কলা ভবনের পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আমির হোসেন। উপাচার্যের সঙ্গে কেন্দ্র পরিদর্শনে না যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, ‘সবাই মিলে একসঙ্গে কেন্দ্র পরিদর্শনের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে আগের বছরগুলোতে প্রথম দিন সবাই একসঙ্গে পরিদর্শনে বের হতাম। কিন্তু এবার উপাচার্যের কেন্দ্র পরিদর্শনের বিষয়ে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি।’

এর আগে দুপুর একটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণে উপাচার্যকে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে কালো পতাকা প্রদর্শন করেছে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন বিভাগের ২১জন শিক্ষক এ কর্মসূচীতে অংশ নেন। এসময় বক্তারা বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে পরীক্ষা কেন্দ্রে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে। এই ভয়ে লুকোচুরি করে পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করছেন তিনি। আর দুইটা ছবি তুলে প্রচারের মাধ্যমে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে চলছে। আন্দোলনকারীরা উপাচার্যকে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে। তিনদিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও উপাচার্য তার অবস্থান পরিষ্কার না করে ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা এই ধৃষ্টতার উচিত জবাব দিবে বলে জানান আন্দোলনকারীরা।

ইত্তেফাক/কেআই