বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঝুঁকি নিয়ে বসবাস আট হলের শিক্ষার্থীদের

আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ০১:০৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন আটটি হলের শিক্ষার্থীরা। অনুপযোগী হওয়া সত্ত্বেও উপায় না থাকায় শিক্ষার্থীদের থাকতে হচ্ছে এসব ঝুঁকিপূর্ণ হলে। অনেক পুরোনো এসব ভবনের ছাদের আস্তর খসে পড়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের শিকদার মনোয়ারা ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণার সাত বছর পরেও সেখানে থাকছেন শিক্ষার্থীরা। শুধু কুয়েত মৈত্রী হল নয়, এমন আরো সাতটি হলে রয়েছে এ ধরনের জীবনের ঝুঁকি। হলগুলো হলো হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, মাস্টারদা সূর্য সেন হল, সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, ফজলুল হক মুসলিম হল, শহীদুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হল।

সরেজমিনে দেখা যায়, শামসুন্নাহার হলের বারান্দা ও বিভিন্ন রুমের দেওয়ালের আস্তরণ খসে পড়েছে, ছাদসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে অসংখ্য ফাটল। অনেক স্থানেই ছাদের কংক্রিট থেকে আলাদা হয়ে গেছে মরিচা পড়া রড। আবার কোথাও কংক্রিট খসে পড়ে রডের সঙ্গে কোনো রকমে ভর করে আছে ভবনের ছাদ। এমনকি ছাদের বিভিন্ন অংশের বিমে বড়ো ধরনের ফাটল ধরেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনে বাস করছেন ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। ভবনগুলোতে বেশ কয়েকবার সংস্কার করলেও তা মানসম্মত হয়নি বলে দাবি করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্র প্রতিনিধিরা।

হলের শিক্ষার্থীরা জানান, ১৯৬৭ সালে সূর্য সেন হল প্রতিষ্ঠিত হয়। হলটির উত্তর ব্লকের বেশ কয়েকটা স্থানে ফাটল ও পলেস্তারা খসে পড়া জায়গায় প্রশাসন সংস্কারকাজ করলেও সেখানে আবারও ফাটল ধরেছে। হলটি অনেক পুরোনো হওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। হল প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে। ব্যবস্থা নেওয়া হলেও পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে হলটি। এ বিষয়ে সূর্য সেন হল ছাত্র সংসদের সহসভাপতি মারিয়াম জামান খান সোহান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে যে অর্থ বরাদ্দ আসে, তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয় না। কাজ হলেও তা মানহীন বলে জানান তিনি। সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ঘুরে দেখা যায়, হলের বারান্দা ও রুমের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। হলের পূর্ব পাশের অবস্থা জরাজীর্ণ। সেখানে হলের বেইজমেন্ট ফ্লোরেও ফাটল দেখা দিয়েছে।

এস এম হলের শিক্ষার্থীরা জানান, ক্যান্টিনে খাবার খাওয়ার সময় ওপর থেকে প্রায়ই পলেস্তারা খসে পড়ে। এছাড়া হলের বারান্দার কয়েকটি অংশ ক্রমেই ভেঙে পড়ছে। অন্যদিকে জগন্নাথ হলের গোবিন্দ চন্দ দেব ও জ্যোতির্ময় গুহঠাকুর ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। ভবন দুটি সংস্কার করা না হলে যে কোনো সময় বড়ো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। জহুরুল হক হলে দেখা যায় প্রায় একই অবস্থা। হলের বিভিন্ন অংশে পলেস্তারা খসে পড়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, যে কোনো সময়ে বাংলাদেশে বড়ো ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে অনেক বেশি।

শুধু পুরাতন ভবন নয়, নবনির্মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল, কবি সুফিয়া কামাল হলের ভবনেও ফাটল রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিজয় একাত্তর হলের তৃতীয় তলার বিমের পাশে, মেঘনা ব্লকের গেমসরুমের ছাদে, মসজিদের দেওয়ালে বড়ো রকমের ফাটল রয়েছে। হলের ওয়াশরুমের ছাদ চুইয়ে পড়ছে পানি। একই অবস্থা নবনির্মিত ছাত্রী হল কবি সুফিয়া কামাল হলের। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলে হেলে পড়ে হলের পশ্চিম পাশের একটি ভবন। হল প্রশাসন বলছে, ইঁদুরের উত্পাতে এমনটা হয়েছে। সলিমুল্লাহ হলের বারান্দা, বেশ কয়েকটি রুমেও রয়েছে বড়ো ধরনের ফাটল। শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থী তুরান আহমেদ বলেন, প্রতিনিয়ত হলের ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ার ঘটনা ঘটছে। যেকোনো সময় শিক্ষার্থীরা এ পলেস্তারার আঘাতে আহত হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষজ্ঞদল সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, সূর্য সেন হলসহ মোট চারটি হলের সব কটি ভবন জরিপ করে। চারটি হল সংস্কার কার্যক্রমের টিমপ্রধান ছিলেন অধ্যাপক ড. সৈয়দ ইশতিয়াক আহমাদ। ঐ বিশেষজ্ঞ দল ভবনগুলোর অবস্থা ভালো নয় বলে জানান। তারা জানান, যেকোনো মাত্রার ভূমিকম্প হলেই বড়ো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অতি দ্রুতই ভবনগুলো সংস্কার করা উচিত।

প্রভোস্ট কমিটির আহ্বায়ক ও বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ বছরেরও বেশি পুরোনো বেশকিছু ভবন আছে। এসব ভবনের বেশকিছু অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে, কোনো ভবন জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। তবে এসব ভবন সংস্কারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে। আশা করি সংস্কারের পর এসব ভবনে ভয়ের কিছু থাকবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ ীয় ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির জন্য প্রশাসন ছাত্রদের সুযোগ-সুবিধার দিকে নজর রাখে না। প্রশাসনের এমন উদাসীনতা ১৫ অক্টোবরের মতো আরেকটি দিন ডেকে আনতে পারে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এটা আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগজনক। শুধু হলে নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু আবাসিক এলাকার ভবনও এ হুমকির মুখে। আমরা এসব নিয়ে কাজ করছি। ঐসব এলাকায় নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।