শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দু’জন খ্যাতিমান বর্ষীয়ান শিল্পীর ইত্যাদির প্রতি ভালোবাসা

আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০১৯, ০৩:৫৯

দীর্ঘদিন পর আবারো টেলিভিশনের পর্দায় ফিরছেন খ্যাতিমান অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান ও মাসুদ আলী খান। আর এই দুই গুণী অভিনেতাকে একসঙ্গে ক্যামেরার সামনে নিয়ে আসছেন নন্দিত নির্মাতা, উপস্থাপক হানিফ সংকেত তার ২৯ নভেম্বর প্রচারিতব্য ইত্যাদির মাধ্যমে। গত ৪ নভেম্বর ঢাকার ফাগুন অডিও ভিশনের নিজস্ব শুটিংস্পটে তাদের এ দৃশ্যধারণ করা হয়।

উল্লেখ্য, টানা ৪ মাসেরও বেশি সময় হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন খ্যাতিমান অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। তখন নিয়মিতই তার খোঁজ-খবর রাখতেন হানিফ সংকেত। একদিন হাসপাতালে এটিএম শামসুজ্জামানকে দেখতে গেলে সুস্থ হয়ে আবারো ইত্যাদির মাধ্যমে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেন তিনি। আর তাই সুস্থ হয়ে বাসায় এলে তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তাকে নিয়ে ইত্যাদির জন্য একটি নাট্যাংশ নির্মাণ করেন হানিফ সংকেত।

এ প্রসঙ্গে এটিএম শামসুজ্জামান বলেন, ‘কথায় আছে, রাখে আল্লা মারে কে। আমার যখন শারীরিক অবস্থা চরম খারাপ ছিল তখন আমার অবস্থার কথা জানতে পেরে অসংখ্য মানুষ আমার জন্য হাত তুলে দোয়া করেছেন আল্লাহর কাছে। তাদের দোয়ায় আমি সুস্থ হয়ে আপনাদের সামনে ফিরে এসেছি। আমি যখন অসুস্থ ছিলাম তখন আমার মনে হচ্ছিল আমি কী আর ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে পারবো। আবার কী অভিনয় করতে পারবো। এই সময় ইত্যাদির হানিফ সংকেত আমার কাছে এলেন।

বললেন, আপনাকে আমরা নিয়ে যাবো, আপনার একটুও হাঁটতে হবে না। তিনি তার কথা রাখলেন। শুধু নিয়ে যাওয়াই নয়, চেয়ারে বসিয়ে কয়েকজনকে দিয়ে দোতালায় ওঠালেন এবং ক্যামেরার সামনে দাঁড় করালেন। পরম ধৈর্য্যসহকারে বেশ সময় নিয়ে আমাদের পর্বটি ধারণ করলেন এবং শুটিং শেষে আবার বাসায় পৌঁছে দিলেন। তার আপ্যায়ন, শিল্পীর প্রতি সম্মান সবসময় আমার ভালো লাগে। এবারো তার সেবাযত্ন আমাকে মুগ্ধ করেছে।’

আরো পড়ুন: তনু হত্যার বিচার কি পাব না?

দর্শকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন আগের মতো অভিনয় করতে পারি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমার হায়াত আছে আপনাদের যেন আনন্দ দিতে পারি, সুখ দিতে পারি।’

এদিকে গত ৬ অক্টোবর ৯০ বছরে পদার্পণ করেছেন আরেক বর্ষীয়ান অভিনেতা মাসুদ আলী খান। ৯০ বছরে পা রেখে ইত্যাদির মাধ্যমে তিনিও আবার দীর্ঘদিন পর টেলিভিশনে অভিনয়ে ফিরলেন।

ইত্যাদিতে অভিনয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রায় ৬ বছর আগে একটা দুর্ঘটনার ফলে আমার শিরদাঁড়ার একটা অংশ ভেঙে যায়। ফলে আমার পক্ষে আর অভিনয় করা সম্ভব হতো না। অভিনয় করতে না পারলেও মনে তো একটা খেদ থাকেই। কারণ আমি নিয়মিত রেডিও-টেলিভিশনে অভিনয় করতাম। আর ইত্যাদি আমার অত্যন্ত প্রিয় একটা অনুষ্ঠান। এতে আমি বরাবরই অংশগ্রহণ করতাম। আমি মনে একটা আশা পোষণ করছিলাম যে, যদি জীবনে কোনো অনুষ্ঠান করা আর না-ই হয় তবে এই জীবন সায়াহ্নে এসে ইত্যাদির একটা পর্বে আমি অভিনয় করবোই। তাই এবার ইত্যাদির মাধ্যমে আপনাদের সামনে আসা। যতদিন বাঁচি আমি যেন মাঝেমধ্যে আপনাদের সাক্ষাত্ পাই। সেই দোয়া চাই।’

নন্দিত নির্মাতা হানিফ সংকেত বলেন, ‘বর্ষীয়ান এই অভিনয়শিল্পীরা আমাদের জাতীয় সম্পদ। আজকাল মিডিয়াতে দেখা যায় একটু বয়স হলে তার জন্য আর কোনো চরিত্র থাকে না। কারণ অধিকাংশ নাটকেই কোনো বাবা-মা বা বয়স্ক চরিত্র দেখা যায় না। আর কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার খোঁজ-খবর নেওয়া শুধু সেলফিতেই সীমাবদ্ধ থাকে। তবে আমার নাটক বলেন, ইত্যাদি বলেন, সব জায়গায়ই এসব গুণী শিল্পীদের একটা বিশেষ স্থান থাকে। এই দুই গুণী অভিনেতা ইত্যাদির নিয়মিত শিল্পী। দীর্ঘদিন দূরে থাকার পর পরিবারের একজন সদস্য ফিরে এলে যেমন আনন্দ হয় ইত্যাদিতে আবার তাদের পেয়ে আমিও তেমনি আনন্দিত। যদিও তাদের এই দূরে থাকাটা ছিল অসুস্থতার কারণে। তবে তাদের সেই অভিনয় দ্যুতি এখনও আছে। ইত্যাদির প্রতি তাদের এই ভালোবাসার কাছে আমি ঋণী।’

ইত্তেফাক/বিএএফ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন