শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘আমি চাইনি, যে আমাকে ঠকিয়েছে, তাকে সবার সামনে লজ্জা দিতে’

আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২০, ০৪:৩২

অভিনেত্রী মনিরা আকতার মিঠু। আমাদের প্রচলিত গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের চাকচিক্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের মেধা-যোগ্যতায় ছোট পর্দায় শক্ত এক অবস্থান গড়েছেন তিনি। একাধারে কাজ করছেন চলচ্চিত্রেও। তার সাম্প্রতিক কাজ নিয়ে কথা বলেছেন বিনোদন প্রতিদিনের সঙ্গে। সাক্ষাত্কারটি নিয়েছেন তানভীর তারেক


একেবারে মঞ্চের কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে। নিজের ক্যারিয়ারের এই সাফল্যকে কীভাবে দেখেন আপনি?

কখনো মনে হয়, এই ইন্ডাস্ট্রিতে সবচেয়ে সৌভাগ্য নিয়ে কাজ করছি আমি। সেই শুরু থেকেই। কারণ ক্যামেরার সামনে দাঁড়াব, এটাই কোনোদিন ভাবিনি। কাকতালীয়ভাবে বড়ো ভাইয়ের (প্রখ্যাত অভিনেতা চ্যালেঞ্জার) অনুরোধে হুমায়ূন আহমেদের নাটকের সেটে যাই। সেই থেকে শুরু। তাই ওপরওয়ালার পরে আমার জীবনে যাকে গুরু মেনেছি, কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করি তিনি হুমায়ূন আহমেদ।

দীর্ঘদিন হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কাজ করার পর এখনকার অনেক নির্মাতার সঙ্গেও তো আপনি স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করছেন। বলা ভালো দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ সাফল্যেও রহস্য বলবেন?

ঐ যে বললাম আমি দারুণ ভাগ্যবতী! তবে এ সময়ে মোস্তফা কামাল রাজ, অমি, বান্নাহ, রেদওয়ান রনি থেকে শুরু করে অনেকের সঙ্গেই কাজ করেছি। কাজ করার যোগ্যতাই আমাকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। আমি কোনোদিন কারো কাছে কাজের জন্য যাইনি। আর আমার সেই অর্থে গ্ল্যামারও নেই। ইন্ডাস্ট্রিতে যত কু-কথা শুনি, সেসব কিছুই আমাকে ফেস করতে হয়নি। আমি একের পর এক কাজ করে গিয়েছি। কাজই আমাকে কাজের পথ দেখিয়েছে। এখনো তা-ই।

কিন্তু প্রায়ই তো শুনি টিভি ইন্ডাস্ট্রির হতাশার কথা। নির্মাতা আর সিনিয়রদের আক্ষেপের কথা। পারিশ্রমিক নিয়ে নানান জটিলতার কথা...

হ্যাঁ। এসব আমাকেও ফেস করতে হয়েছে। এখনো হয়। এখনো অনেকের কাছেই টাকা পাই। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি কখনোই কোনো সংগঠনের কাছে বিচার চাইনি। আমি চাইনি, যে আমাকে ঠকিয়েছে, তাকে আবার সবার সামনে লজ্জা দিতে। তবে এটাও ঠিক, সবাই যে ইচ্ছে করে শিল্পী সম্মানী মেরে দেয়, তা কিন্তু না। কেউ কেউ আছেন, অল্প বাজেটে কাজ ধরে ২ দিনের শুটিং অনেকদিন লাগিয়ে দেয়। তখন সবকিছুতেই তালগোল পাকিয়ে যায়। আবার কারো কারো অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে শিল্পীদের টাকা মেরে দেওয়া। তাদের নাম নিতে চাই না। আমি বরাবরই ইতিবাচক একজন মানুষ।

এবারে ‘শেফালী খালা’ চরিত্রের কেমিস্ট্রির কথা শুনতে চাই।

‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’-এর এই চরিত্রটি কিন্তু আমার জীবনের অন্যতম টার্নিং। এখন পর্যন্ত ঈর্ষণীয় এক সাফল্য। তবে নাটকটির শুরুতে কিন্তু রাজ আমাকে খুবই ছোট একটা চরিত্র দিয়েছিল। অল্প কিছু সিক্যুয়েন্স। আমি করতে চাইনি প্রথমে। কিন্তু রাজের কোনো ব্যাপারে আমি ‘না’ বলতে পারি না। এটা শুনলে আবার অন্যেরা মাইন্ড করতে পারে। তাই বলে রাখি, আমি যখন আজকের মনিরা মিঠু হইনি, রাজ যখন আজকের রাজ হয়নি, তখন থেকেই আমাদের পরিচয়। আমরা এই শহরে দুই ভাইবোনের মতো। তাই দাবি বলি আর একসঙ্গে কাজের জুটি বলি, রাজের ব্যাপারে আমার অন্য হিসাব।

এখন তো শিল্পীদের নাটকে অভিনয়ের বাইরে বিভিন্ন স্টেজ, টিভিসি থেকে বাড়তি উপার্জনের একটি পথ তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার কাজের খবর শুনতে চাই।

না, আমি অভিনয়েই স্বাচ্ছন্দ্য। দেখুন, বিশাল বড়ো কোম্পানির দুটি বিজ্ঞাপন আমি অতি সম্প্রতি ফিরিয়ে দিয়েছি। কারণ ওরা যে অল্প পারিশ্রমিক আমাকে অফার করেছে, তাতে ভেবেছি, এর চেয়ে আমার নাটকে অভিনয় করাটাই শ্রেয়। অথচ বাইরে থেকে অনেকেই মনে করে বিজ্ঞাপন করলেই বুঝি সবাই লাখ লাখ টাকা ইনকাম করে। এটা ভুল ধারণা। অবশ্যই আমার মাপের সম্মানী দিলে আমি বিজ্ঞাপনে কাজ করব। কিছু কাজ করেছিও।

চলচ্চিত্রেও আপনার স্বচ্ছন্দ যাতায়াত। এই জায়গাটায় আপনি কতটা কমফোর্টেবল?

খুবই ভালো। আমি যেমন ফুল কমার্শিয়াল ছবি ‘পোড়ামন’-এর কাজ করেছি, তেমনি ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্রের কাজ করেছি। তবে প্রত্যেকটা চরিত্রেই দর্শকেরা ভিন্নতা পেয়েছে। সামনে আসছে ‘বিশ্বসুন্দরী’সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রের কাজ। শাকিব খান, আরেফিন শুভ, সিয়াম থেকে শুরু করে অনেকের সঙ্গেই কাজ করেছি। একেকটি কাজের অভিজ্ঞতা একেক রকম। এভাবেই কাজের ভেতরে ডুবে থাকতে চাই। ব্যক্তিগতভাবে আমি সিঙ্গেল মাদার। তাই জীবনের নানান চড়াই-উতরাই আমিও দেখেছি, পার করেছি। এই অভিনয়, এই ইন্ডাস্ট্রিকে পরিবার হিসেবে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে আছি। আজীবন এমনটাই হাসিখুশি সবার প্রিয় হয়ে থাকতে চাই।

ইত্তেফাক/বিএএফ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন