শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

১৫ জুলাই মায়ের পাশে সমাহিত হবেন এন্ড্রু কিশোর

আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২০, ০২:৫১

‘জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের মরদেহ আগামী ১৫ জুলাই রাজশাহীতে মায়ের সমাধির পাশে সমাহিত করা হবে। মৃত্যুর আগে এন্ড্রু কিশোর নিজেই বলে গেছেন তাকে যেন মায়ের পাশেই সমাহিত করা হয়। সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’ এন্ড্রু কিশোরের বড় বোনের স্বামী ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাস মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, শিল্পীর ছেলেমেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় লেখাপড়া করেন। তারা দেশে ফেরার জন্য বিমানের টিকিট সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে তারা দেশে ফিরবেন। এ কারণে তার মরদেহ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, ছেলেমেয়ে আসার পর খ্রিষ্টিয়ান মিশন হাসপাতালসংলগ্ন কবরস্থানে আগামী ১৫ জুলাই এন্ড্রু কিশোরকে সমাহিত করা হবে। এর আগে ঐদিন তার মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে রাখা হবে। উল্লেখ্য দেশের প্লে-ব্যাক সম্রাট কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর প্রায় ১০ মাস ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে ৬ জুলাই সন্ধ্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি আটবার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী।

এদিকে এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুতে তার নিজ শহর রাজশাহী থমকে গেছে। করোনা পরিস্থিতিতেও তার মরদেহ শেষবারের মতো একনজর দেখতে মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় ভক্তদের ভিড় জমে। সেখানেই তার বোন ডা. শিখা বিশ্বাস ও ভগ্নিপতি ডা. প্যাট্রিক বিপুলের বাসা-ক্লিনিক। এই বাড়িতেই গত সোমবার সন্ধ্যায় এন্ড্রু কিশোর মারা যান। পরে রাত সাড়ে ৯টায় তার মরদেহ মহিষবাথান থেকে মহানগরীর লক্ষ্মীপুরে রামেক হাসপাতালের হিমঘরে নেওয়া হয়। তখনো লাশবাহী গাড়ির পেছনে ছিল ভক্ত ও আত্মীয়-স্বজনের মাতম।

রাজশাহীর এই কৃতী সন্তানের মৃত্যুতে নগরীর মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট রাজশাহীর সভাপতি ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার ঘোষ, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামারউল্লাহ সরকার, রাজশাহী থিয়েটারের সভাপতি নিতাই কুমার সরকার, মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগার রাজশাহী আবদুল লতিফ চঞ্চল, ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি ডা. এফ এম এ জাহিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন মাসুদসহ অনেকেই শোক জানিয়েছেন।

ভক্ত মারিয়ার আবদার

মাঝ বয়সি মারিয়া মাড্ডি। থাকেন রাজশাহী শহরের উপকণ্ঠ নওদাপাড়ায়। সংসারে সচ্ছলতা আনতে স্বামীর সঙ্গে মানুষের জমিতে কৃষি মজুরের কাজ করেন। চোখ-মুখে রোদে পোড়ার দাগ স্পষ্ট। প্লে-ব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুর খবর পেয়ে কৃষিকাজ ছেড়ে ছুটে এসেছেন প্রিয় শিল্পীর মুখখানা শেষ বারের মতো একবার দেখতে। মঙ্গলবার রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় এন্ড্রু কিশোরের বড় বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাড়ি ও কাম ক্লিনিকের প্রধান দরজার কাছে তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। জিগ্যেস করা হলে মারিয়া আবদারের ছলে বলেন, ‘গত রাতে শুননু এ্যন্ডু কিশোর মারা গেছেন। তাই একবার দেখতে আসেছি। একটু দেখার ব্যবস্থা করিদিত বলেনতো।’ ভক্ত মারিয়া আরো বলেন, ‘আমি ছোট বেলা থাকতেই ঐ মানুষটার মেলা গান শুনেছি। খুব সুন্দর গান করেন। ’

এন্ড্রু কিশোরের শেষ ইচ্ছা পূরণ হয়নি ’

কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারেসহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের শিল্পী এন্ড্রু কিশোরের জীবনের শেষ ইচ্ছা পূরণ হয়নি। তিনি তার পৈতৃক ভিটায় একটি ‘প্রার্থনা কুঞ্জ’ করতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তার কাকা তো ভাই পূর্ণদান বাড়ৈ। গত সোমবার সন্ধ্যায় এই গুণী সংগীতশিল্পীর মৃত্যুর সংবাদ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় অবস্থানরত তার আপনজনদের কাছে পৌঁছলে তারাসহ উপজেলাবাসীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকেই টিভির সামনে বসে এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যু সংবাদ শুনেছেন আর কেঁদেছেন। উপজেলার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ এই গুণী শিল্পীর এভাবে চলে যাওয়া যেন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। তারা এই শিল্পীর স্মৃতি রক্ষার্থে তার নামে কোটালীপাড়ায় সংগীত একাডেমি বা স্কুল স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।

ইত্তেফাক এসি
 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন