গুণী রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী লিলি ইসলাম। গানের পাশাপাশি তিনি শিক্ষকতার সঙ্গেও জড়িত রয়েছেন। এছাড়া রবীন্দ্রসংগীত সংগঠন ‘উত্তরায়ণ’-এর পরিচালক তিনি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে দেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও তার খ্যাতি রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে অন্য সবকিছুর মতো রবীন্দ্রসংগীতের বিভিন্ন অনুষ্ঠানও কমেছে। তবে অনলাইনের মাধ্যমে তিনি ব্যস্ত রয়েছেন প্রতিনিয়ত। সার্বিক এই বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বিনোদন প্রতিদিনের সঙ্গে। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন মোস্তাফিজ মিঠু
কেমন আছেন?
আমরা এমন সময়ে আছি ভালো থাকাটা এখন হয়ে ওঠে না। প্রায় খবর পাই প্রিয় অনেক মানুষ চলে যাচ্ছেন এই করোনায়। আজ (গতকাল) সকালেও কলকাতার একজনের চলে যাওয়ার খবর পেলাম।
আমরা সংকটময় সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এ অবস্থায় সময় কীভাবে পার করছেন?
গানের পাশাপাশি আমি শান্ত মরিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও নিয়মিত অনলাইনের ক্লাস হচ্ছে। তা নিয়ে ব্যস্ত আছি। আগে তো ক্লাসের টাইমে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। এখন দিনের বিভিন্ন সময় এ নিয়ে ব্যস্ততা যাচ্ছে। এছাড়া আমার সংগঠন ‘উত্তরায়ণ’ নিয়ে ব্যস্ততা চলছে। প্রতি রবিবার ‘শ্রোতার আসর’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান হচ্ছে অনলাইনে। এখানে আমাদের শিক্ষার্থীরা উপস্থাপনা করছেন। গানও তারা গাইছেন। এতে করে তাদের নিয়মিত চর্চাটা হচ্ছে।
‘উত্তরায়ণ’-এর বর্তমান কার্যক্রম নিয়ে বলুন...
করোনার কারণে সবকিছুই তো বন্ধ এখন। অনলাইন এখন ভরসা। আমাদের সংগঠনের ১০ বছর পূর্ণ করলো। এ বছর ইচ্ছা ছিল ২ দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্য দিয়ে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান করবো। সেটি তো হলো না। বনানীতে একটি একাডেমি শুরু করার কথা ছিল। সেটিও বন্ধ এখন। এখন মূলত অনলাইন ক্লাস ও অনুষ্ঠান চলছে।
বাংলাদেশের পাশাপাশি পশ্চিবঙ্গেও আপনার খ্যাতি রয়েছে। রবীন্দ্র চর্চার ক্ষেত্রে দুই জায়গার পার্থক্যটা কেমন দেখেন?
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আমরা যতটা চর্চা করি পশ্চিবঙ্গে তেমনটা হয় না। এখানে সারাদেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত রবীন্দ্র চর্চার সুযোগ রয়েছে। পশ্চিবঙ্গে কিন্তু এটা নেই। কারণ সেখানে বাঙালিদের বাইরে রবীন্দ্রনাথের চর্চা নেই। কিন্তু রবীন্দ্র চর্চার পাশাপাশি প্রয়োগটাও প্রয়োজন। আমাদের রবীন্দ্রসংগীত চর্চা বেশি হলেও প্রয়োগটা কম। সেক্ষেত্রে কলকাতা অনেক এগিয়ে। তাদের সিনেমা থেকে শুরু করে সংস্কৃতি প্রায় সব জায়গায় রবীন্দ্রনাথ রয়েছেন। ঘরে রবীন্দ্রনাথের ছবি থাকছে। আমাদের এখানে এমনটা নেই। শুধুমাত্র রবীন্দ্রনাথের জন্ম দিবস আর মৃত্যু দিবস ছাড়া তাকে নিয়ে কোনো আয়োজন নেই। এমনকি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়েও আমাদের কোনো আয়োজন থাকে না। বিটিভিতে এমন সময় তাদের নিয়ে অনুষ্ঠান করা হয় যখন কেউ টেলিভিশন দেখেন না।
তরুণ অনেকেই তো রবীন্দ্রসংগীত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিখছেন। তাদের মধ্যে সম্ভাবনাটা কেমন দেখেন?
সুযোগের অভাবে অনেক তরুণ চর্চাটা নিয়মিত করতে পারেন না। সেই সুযোগটা কিন্তু আমাদের তৈরি করে দিতে হবে। আবার অনেকে কয়েকটি গান শিখেই দ্রুত এগিয়ে যেতে চায়। চর্চা ছাড়া ওপরে ওঠা যায় না। এমন দৃষ্টান্ত কেউ দেখাতে পারবে না। তাই সুযোগ ও চর্চা দুটিই প্রয়োজন।
ইত্তেফাক/বিএএফ