শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘জীবনটা খুবই ছোট জনপ্রিয় জীবন আরো ছোট’

আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২০, ০২:৫৭

নিজের গাওয়া ‘তোমার কোনো দোষ নেই’ অ্যালবামটি দিয়েই মনির খান সাধারণ শ্রোতাদের প্রিয় হয়ে ওঠেন। ৫ নভেম্বর ১৯৯৬ সালে প্রকাশ পায় অ্যালবামটি। মিল্টন খন্দকারের কথা ও সুরে এই অ্যালবামের রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে একেবারেই কাছের মানুষকে সম্মাননা জানিয়ে বিরল এক দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করলেন তিনি। কথা বলেছেন নানা প্রসঙ্গে। লিখেছেন তানভীর তারেক।

এই উদ্যোগের পরিকল্পনা কী হঠাত্ করেই?

না, ঠিক হঠাত্ করে না। আমার ফ্যানক্লাবসহ ৩টি সংগঠন রয়েছে, যারা আমাকে ভালোবেসে গত দেড়যুগ ধরে আগলে রেখেছে। এখানে প্রায় লাখের ওপরে সক্রিয় সদস্য। ওদেরই পরিকল্পনা ও প্রস্তাবনা ছিল। তখন ভাবলাম আমাদের সহকর্মী শিল্পীদের সঙ্গে তো দেখা, আলাপ-আড্ডা সবসময়ই হয়। কিন্তু যে ছেলেটি আমার সেই রেকর্ডিংয়ে চা এনে দিত, আমার হারমোনিয়াম বসিয়ে দিত, আমার পোস্টার লাগাতো দেয়ালে দেয়ালে, তাদের প্রতি আমার একটা ঋণ আছে। ওরা কিন্তু আমাদের দেখলে বলে বা ভাবে—এই যে অমুক শিল্পীর প্রথম রেকর্ডিংয়ে আমি এটা করেছিলাম। কিন্তু আমরা হয়তো ভুলে যাই। সে কারণেই এই আয়োজন। এটি ছিল মূলত কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটা দিন।

বাংলা গানের এই ধারাবাহিক চর্চায় অগণিত জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন আপনি। জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন একাধিকবার। একটা প্রশ্ন রাখতে চাই আপনার কাছে, জনপ্রিয়তা বা কোটি ভিউ আর সৃজনশীল দামি কাজ কী এক? আমরা তো এখন গুলিয়ে ফেলছি...

এটা কখনোই এক ছিল না। দেখুন, সস্তা জিনিসের সাময়িক আকর্ষণ থাকবেই। কিন্তু সেটাকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের আচরণ কী হবে সেটাই মূল বিষয়। একটা মানহীন কাজকে যদি ভিউ গুনে আপনি কদর করেন তাহলে সমাজ ভুল পথে হাঁটবে। যত যাই বলেন, আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি লোকগান। এর চর্চা না করে অতি আধুনিকতা আমাদের কখনোই দীর্ঘমেয়াদি টেকেনি, টিকবে না। ইদানিংকালের অশ্লীল কথার কিছু গান আমরা বুঝে না বুঝে শেয়ার দিচ্ছি। একজন সচেতন শ্রোতা হিসেবে এটি আপনি অন্যায় করছেন। কারণ তাতে যারা সত্যিকার অর্থে সৃজনশীল চর্চা করছেন তারা হতাশ হচ্ছেন। অন্যদিকে তারাও মানহীন আরেকটি কাজ করার উত্সাহ পাচ্ছে। তাই এসব কাজকে প্রমোট করার ক্ষেত্রে আমাদের সচেতন থাকা উচিত।

আপনি আপনার এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একেবারেই চারণ মানুষদের যে সম্মান দেখালেন, ঠিক উল্টো চিত্রও তো দেখা যায়। অনেকে একটি গান হিট হয়ে গেলে অগ্রজদের অসম্মান করে কথা বলে...

দেখুন, এগুলো এক ধরনের না পাওয়ার বেদনা বা অস্থিরতা থেকে বলে। পারিবারিক শিক্ষার অভাব থেকেই হয়। জীবনটা খুবই ছোট, জনপ্রিয় জীবন আরো ছোট। তাই এত বড়াইয়ের কিছুই নেই এখানে। তবে আমি বলবো, এসব অন্যায়কারীদের ডেকে আমাদের সুধরে দিতে হবে।

সে জন্য আপনারা তো এখন অনেক ক্ষেত্রেই সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় হচ্ছেন। গানের অনেকগুলো সংগঠন এখন সরব। এ বিষয়ে আশাবাদ কতটুকু আপনার?

আমি সবসময় আশাবাদী মানুষ। যেমন আমিই আধুনিক গানে সর্বপ্রথম নিজের গানের কপিরাইট করি। কারণ কপিরাইট আওতায় কিন্তু উন্নত দেশে ৫৩% আয় হয়। বাকি ৪৭% ভিন্ন খাতে। সুতরাং এটা একটা বড় ইন্ডাস্ট্রি। আমি শুধু গানের কথা বলছি না। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তাই। আমি তো আমার পরিণত বয়সে গান ছেড়ে মুদি দোকান দেবো না। দিলেও আমি সেই ব্যবসায় লাভ করতে পারবো না। কারণ আমি গানটাই শিখেছি। তাই এটা আমার সম্পদ। এটাকে সুরক্ষার দায়িত্বও আমাদের। আমার মনে হয়, সমন্বিত চেষ্টায় শিল্প-সংস্কৃতির প্রতিটি বিষয় কপিরাইটের আওতায় আসবে এবং সুষ্ঠুভাবে তা সকলের মাঝে বণ্টন হবে।

আপনার নতুন গানের পরিকল্পনা বলুন...

আমি তো গতবছরই নতুন ১০০ গানের ঘোষণা দিয়েছি। সেগুলোর কাজ চলছে। নিয়মিত ইউটিউবে গান রিলিজ করছি।

কাভার গান গাওয়া নিয়েও প্রশ্ন আসছে। প্রশ্ন উঠেছে লোক সুরকে সংগৃহীত বলে চালিয়ে দেওয়ার বিষয়টিও। আপনার মতামত শুনতে চাই—

এটাকে অন্যায় বলবো না। বলবো অলসতা। আমি তো চাইলেই প্রথম জীবনে জনপ্রিয় তারকাদের গান গেয়ে স্টেজ করে ভালো ইনকাম করতে পারতাম। কিন্তু তা না করে আমি মিল্টন খন্দকার, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, আলাউদ্দিন আলী, শেখ সাদী, আলম খানদের পেছনে কেন ঘুরেছি। একদিন দু-দিন না, অনেকদিন তাদের পেছনে লেগে থেকেছি। এই পরিশ্রম করেছি বলেই আজ যত্সামান্য পরিচিতি বা ভালোবাসার জায়গা তৈরি হয়েছে। তাই আমি তরুণদেরও বলবো অলসতা, শর্টকাট করে শিল্পী হওয়া যায় না। কোনোদিন কেউ হতে পারেনি।

ইত্তেফাক/এএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন