সম্প্রতি বাংলাদেশের ব্যান্ডদলগুলো নিয়ে একমাত্র সংগঠন ‘বামবা’র সভাপতি হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হলেন হামিন আহমেদ। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে বিএলসিপিএস-এর সভাপতি হিসেবে সংগীতশিল্পী, কলাকুশলীদের মেধাস্বত্ত্ব সংরক্ষণের জন্য কাজ করে চলেছেন তিনি। কথা বলেছেন সাম্প্রতিক বিষয়াদি নিয়ে বিনোদন প্রতিদিনের সঙ্গে। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন তানভীর তারেক।
দীর্ঘ ৩ দশকেরও বেশি সময় ধরে বামবা সাংগঠনিকভাবে কাজ করছে। এর ভেতরে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদে আপনি সভাপতিত্ব করছেন। সভাপতির দৃষ্টিতে বামবাকে যদি মূল্যায়ন করতে বলা হয় আপনি কী বলবেন?
প্রথমত, এই যে তিন দশক বললেন, এই সময়কালটাই একটি সংগঠনের জন্য সবচেয়ে বড় সাফল্য। কারণ এই তিন দশকে ৩০টিরও বেশি সংগঠন তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। সেক্ষেত্রে কেউ টিকে থাকতে পারেনি। ব্যান্ড মিউজিক অ্যাসোসিয়েশন টিকে আছে।
এর মূল কারণ কী বলে মনে করেন। কেনই বা যুথবদ্ধ থাকতে পারে না সংগঠনগুলো?
প্রথমত, ব্যান্ডদলগুলোর এক ধরনের সংগঠিত থাকার একটা চর্চা হয়ে যায়। কারণ এটা শুরুই হয় গ্রুপ ওয়ার্ক দিয়ে। অন্যদিকে একজন লেখক একা, একজন আধুনিক গায়কও একাই তার সৃজনচর্চা করতে পারে। এই অভ্যেসটা অনেকটা সংগঠিত থাকার মানসিকতা থেকে বাইরে বেড়ে উঠতে সহযোগিতা করে। কিন্তু ব্যান্ডটা তো টিমওয়ার্ক। আরেকটা বিষয় হলো, যিনি বা যারা নেতৃত্ব দেবেন তার একেবারে নতুন সদস্যের সঙ্গেই চিন্তা শেয়ার করতে হবে। আমি আজীবনই এটা মেইনটেইন করেছি। একটা ছোট উদাহরণ দিই—আমাদের কনসার্টে মূল ঈর্ষার জায়গা তৈরি হয় স্টেজে কে কতটা সময়জুড়ে থাকবে। বামবা কিন্তু সবচেয়ে নবীশ যে সদস্য তাকেও সমান স্পেস দেয়। সমান সময় বরাদ্দ রাখে। আমাদের প্রত্যেক সংগঠন আমিত্ব প্রকাশ করতে গিয়েই মুখ থুবড়ে পড়ে। তখন সার্বিক কাজ নয়, কে কোন চেয়ার নেবেন সেটাই মূখ্য হয়ে যায়। ফলে সংগঠন টেকে না।
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। কপিরাইট নিয়ে সাম্প্রতিককালে সকলেই সচেতন হচ্ছেন। বিএলসিপিএস সেই ভিত তৈরির কাজটা করছে। এক্ষেত্রে আপনাদের অগ্রগতি কতদূর। অনেকদিন ধরেই আপনারা নিজেদের গোছাচ্ছেন। কবে থেকে এর প্রকৃত কার্যকারিতা শুরু হবে?
আমরা সবকিছুই গুছিয়ে এনেছি। দেখুন, আমি আন্তর্জাতিক যতগুলো কনফারেন্সে এই কপিরাইট ইস্যু নিয়ে কথা বলেছি তার সবখানেই শুনেছি এই বাঁধাগুলো আসবে। যেমন বিএলসিপিএস-এর অফিসে সেদিন আমাদের শ্রদ্ধেয় শেখ সাদী খান এসে বললেন, ‘প্রকাশক তার সিনেমার গান অবৈধভাবে বাজারজাত করছে।’ অর্থাত্ এক সময় লেবেল কোম্পানিগুলো ছবির কপিরাইট কিনতো তার পুরো ছবিটা ক্যাসেট বা সিনেমা হলে প্রদর্শনের জন্য। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। কন্টেন্ট ভ্যালু বেড়েছে। সেই প্রকাশকরা ছবি থেকে ডায়লগ কাটছে, গান কেটে কেটে ইনকাম করছে। এগুলো অবৈধ কাজ। কেউ কেউ মনে করছে, আমি কন্টেন্ট ক্রিয়েটরকে ফাঁকি দিয়ে খুব লাভ করে ফেলছি। এটা ভাবলে ভুল হবে। কারণ আইনের আওতায় পড়া মাত্রই প্রকাশককে পুরনো হিসেব মিলিয়েই ক্রিয়েটরকে টাকা দিতে হবে। তাই যত জলদি প্রকাশক ও ক্রিয়েটরের ভেতরে চুক্তি নবায়ন বা অর্থ বিনিময় হবে ততই লেবেল কোম্পানিরা লাভবান হবে। ক্রিয়েটর বলতে গীতিকার, সুরকার ও পারফর্মারকে বুঝিয়েছি।
সেক্ষেত্রে আপনারা অর্থাত্ মাইলসেরও অনেক পুরনো জের আছে লেবেল কোম্পানির সঙ্গে। সেগুলোর ব্যাপারে অগ্রগতি কতদূর?
একইভাবেই সবার জন্যই কাজ করছি এবং কার্যকারিতা সবার জন্যই সমানভাবেই প্রয়োগ হবে। যেমন আমাদের গান থেকেই কিন্তু সংগীতা কোম্পানির উত্থান। সেক্ষেত্রে পুরনো গান নিয়ে আমরাও বসেছি। এগুলোর কপিরাইট আইন নিয়েই সবার মাঝে ফায়সালা হবে।
ইত্তেফাক/টিআর