শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জাফর ইকবাল: অমর এক গায়ক-অভিনেতা

আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২১, ২১:০৪

বাংলা চলচ্চিত্রের সুদর্শন-স্টাইলিশ নায়কদের মধ্যে জাফর ইকবাল ছিলেন অন্যতম। রোমান্টিক ও রাগী তরুণের ভূমিকায় দারুণ মানালেও সব ধরনের চরিত্র ছিল তার দখলে। অভিনয়ের পাশাপাশি বাস্তবজীবনে চমৎকার গান গাইতে পারা এ অভিনেতা বহু ছবিতে গান গেয়েছেন। এজন্য অলরাউন্ডার হিরো নায়ক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন তিনি। আজ তার প্রয়াণ দিবস। ১৯৯২ সালের এই দিনে মাত্র ৪২ বছর বয়সে না ফেরার দেশে তিনি পাড়ি জমান।

২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৫০ সালের ঢাকার গুলশানে জাফর ইকবালের জন্ম হয়। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। বোন শাহনাজ রহমতুল্লাহ একজন সুপরিচিত কণ্ঠশিল্পী। বড় ভাই আনোয়ার পারভেজও দেশের নামকরা শিল্পী। জাফর ইকবাল প্রথমে গায়ক হিসেবেই পরিচিতি পান। এরপর আসেন সিনেমায়।

ছোটবেলা থেকেই সংগীতের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। ১৯৬৬ সালে বন্ধুদের নিয়ে ‘রোলিং স্টোন’ ব্যান্ড গড়েছিলেন। সংগীত পরিচালক ভাই আনোয়ার পারভেজের সুরে ‘বদনাম’ ছবির ‘হয় যদি বদনাম হোক আরও’ গানটি দিয়ে চলচ্চিত্র প্লেব্যাকে অভিষেক হয় তার। দেশের খ্যাতিমান সুরকার আলাউদ্দিন আলীর সুরে অনেক গান গেয়েছেন তিনি। তার গাওয়া শ্রোতাপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘সুখে থেকো ও আমার নন্দিনী হয়ে কারো ঘরণী’, ‘তুমি আমার জীবন, আমি তোমার জীবন’, ‘হয় যদি বদনাম হোক আরও’ আশির দশকে ‘কেন তুমি কাঁদালে’ শিরোনামে একটি অডিও অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছিল তার। এরপর আসেন সিনেমায়।

খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আপন পর’ ছবিটি ছিলো জাফর ইকবালের প্রথম ছবি। ১৯৬৯ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটিতে তার নায়িকা ছিলেন কবরী। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন জাফর ইকবাল। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। ‘সূর্যসংগ্রাম’ ও এর সিকুয়েল ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে ববিতার বিপরীতে অভিনয় করেন।

১৯৭৫ সালে ‘মাস্তান’ চলচ্চিত্রে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় তাঁকে সে প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বকারী নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেয়। রোমান্টিক নায়ক হিসেবে পরিচিতি পান ‘নয়নের আলো’ সিনেমার মাধ্যমে। সর্বমোট ১৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন জাফর ইকবাল। যার বেশিরভাগই ছিল ব্যবসা সফল। তিনি প্রযোজক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। ‘প্রেমিক’ সিনেমাটি তার প্রযোজনায় নির্মিত হয়।

এরপর যুদ্ধ শুরু হলে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন জাফর ইকবাল। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। ‘সূর্যসংগ্রাম’ ও এর সিকুয়্যাল ‘সূর্যস্বাধীন’ চলচ্চিত্রে ববিতার বিপরীতে অভিনয় করেন।

জাফর ইকবাল অভিনীত ত্রিভূজ প্রেমের ছবি ‘অবুঝ হৃদয়’ দারুণ ব্যবসা সফল হয়। এ ছবিতে চম্পা ও ববিতা- দুই বোনের বিপরীতে তার অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে।

ববিতার সঙ্গে তার জুটি ছিল দর্শক নন্দিত। ববিতার বিপরীতে ৩০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এই জুটির বাস্তব জীবনে প্রেম চলেছে বলেও গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল।

নায়ক জাফর ইকবাল সনিয়া নামে একজনকে বিয়ে করেছিলেন। তাদের দুই সন্তান রয়েছে।

জাফর ইকবাল মানে কালজয়ী এক গায়ক আর অভিনেতার প্রিয় মুখ। তার গাওয়া গান ও অভিনীত চলচ্চিত্রের সুবাদে ভক্তদের হৃদয়ে এখনো ভালোবাসায় চির ভাস্বর হয়ে আছেন তিনি। চিরকাল অম্লান থাকবেন ক্ষণজন্মা এই তারকা।

ইত্তেফাক/বিএএফ
 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন