শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাংলা চলচ্চিত্র বিশ্ববাজারে স্থান করে নেবে: তথ্যমন্ত্রী

আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২১, ১৭:৫২

বঙ্গবন্ধুর হাতে যাত্রা শুরু হওয়া বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প বিশ্ববাজারে একটি বিশেষ স্থান দখল করে নেবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।  তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হাতে প্রতিষ্ঠিত এদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে নতুন প্রাণ সঞ্চার করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

রবিবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৯ প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে গণভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।  

চলচ্চিত্র যেমন জীবনের কথা বলে, তেমনি সমসাময়িক কালকে সংরক্ষণ করে এবং সমাজকে ফুটিয়ে তোলে উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন প্রাদেশিক সরকারের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী, তখন ১৯৫৭ সালে ৩রা এপ্রিল তার দূরদর্শিতায় চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার বিল এনেছিলেন, যার ফলে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়।’

সেসময়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তখন হিন্দি-উর্দু এবং ভারতীয় বাংলা সিনেমা বাংলাদেশের বাজার দখল করেছিল। বঙ্গবন্ধু এই চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাংলাদেশে চলচ্চিত্র শিল্পের যাত্রা ও অগ্রগতি শুরু। সেই থেকে বহু কালজয়ী ছবি আমাদের দেশে নির্মিত হয়েছে, বহু কালজয়ী শিল্পীর জন্ম হয়েছে।  এবং আমাদের চলচ্চিত্র বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশ গঠনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’ 

বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু, বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা শুধু এই চলচ্চিত্র শিল্পের স্বর্ণালী দিন ফিরিয়ে আনাই নয় বরং আমাদের চলচ্চিত্র যাতে বিশ্ববাজারেও স্থান দখল করে নিতে পারে, সেই লক্ষ্যে অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, বলেন তথ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ১ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠিত হতে যাচ্ছে, যা থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে বন্ধ সিনেমা হল চালু করা, চালু হলের আধুনিকায়ন করা যাবে এবং নতুন সিনেমা হল নির্মাণ করা যাবে এবং এর ফলে দেশে চলচ্চিত্র শিল্প একটি নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে, জানান তিনি। 

এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী প্রতি জেলায় যে তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করেছেন, সেই কমপ্লেক্সগুলোতে সিনেপ্লেক্সও নির্মিত হবে এবং চলচ্চিত্র শিল্পীদের বহুদিনের দাবিকৃত চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টও সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী গঠন করে দিয়েছেন, যা থেকে চলচ্চিত্র শিল্পের সাথে যারা যুক্ত তারা প্রয়োজনে সহায়তা পাবেন, বলেন ড. হাছান মাহমুদ। 

করোনা প্রসঙ্গ টেনে ড. হাছান বলেন, ‘শুধু চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়ন নয়, প্রধানমন্ত্রী এই করোনাকালে যেভাবে দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন, তাতে গবেষণা সংস্থা ব্লুমবার্গের মতে বাংলাদেশ করোনা মোকাবিলা সক্ষমতায় পৃথিবীতে ২০তম এবং উপমহাদেশে সবার ওপরে। পৃথিবীতে যে মাত্র ২২টি দেশ করোনা মহামারির মধ্যে ধ্বনাত্মক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে, তারমধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। একইসাথে এই করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক উন্নয়নশীল দেশের বহু আগেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, খুব সহসা এই ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হবে।’ 

বক্তব্য ও পুরস্কার প্রদান শেষে মিলন ও ভাবনার উপস্থাপনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন চিত্র তারকা ফেরদৌস, অপু বিশ্বাস, মাহিয়া মাহি, সাইমন সাদিক, মৌ, নুসরাত ফারিয়া প্রমুখ শিল্পীবৃন্দ। কণ্ঠশিল্পী অলক সেন, অপু, লিজা ও লুইপা সংগীত পরিবেশন করেন। আজীবন সম্মাননায় ভূষিত বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেতা মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা) এবং অভিনেত্রী কোহিনুর আক্তার সুচন্দা’র পক্ষে মাসুদ পারভেজ তার প্রতিক্রিয়ায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। 

আজীবন সম্মাননা ছাড়া জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৯ এর অন্যান্য ২৫ টি বিষয়ে বিজয়ী সিনেমা ও ব্যক্তিবর্গ হচ্ছেন-
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র (যুগ্ম): ন ডরাই ও ফাগুন হাওয়ায়, শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র: নারী জীবন, শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র: যা ছিলো অন্ধকারে, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক: তানিম রহমান অংশু (ন ডরাই), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্রে: তারিক আনাম খান (আবার বসন্ত), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী প্রধান চরিত্রে: সুনেরাহ বিনতে কামাল (ন ডরাই), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্রে: এম ফজলুর রহমান বাবু (ফাগুন হাওয়ায়), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্রে: নারগিস আক্তার (হোসনে আরা) (মায়া দ্য লস্ট মাদার), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা/অভিনেত্রী খল চরিত্রে: জাহিদ হাসান (সাপলুডু)।

শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী (যুগ্ম) নাইমুর রহমান আপন (কালো মেঘের ভেলা) ও আফরীন আক্তার (যদি একদিন), শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক: মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ইমন (মায়া দ্য লস্ট মাদার), শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক: হাবিবুর রহমান (মনের মতো মানুষ পাইলাম না), শ্রেষ্ঠ গায়ক: মৃনাল কান্তি দাস (তুমি চাইয়া দেখো...) (শাটল ট্রেন), শ্রেষ্ঠ গায়িকা (যুগ্ম): মমতাজ বেগম (বাড়ির ওই পূর্বধারে...) (মায়া দ্য লস্ট মাদার) ও ফাতিমা-তুয-যাহরা ঐশী (মায়া, মায়া রে...) (মায়া দ্য লস্ট মাদার), শ্রেষ্ঠ গীতিকার (যুগ্ম): নির্মলেন্দু গুণ (ইস্টিশনে জন্ম আমার...) (কালো মেঘের ভেলা) ও ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী (কবি কামাল চৌধুরী) (চল হে বন্ধু চল...) (মায়া দ্য লস্ট মাদার), শ্রেষ্ঠ সুরকার (যুগ্ম): প্লাবন কোরেশী (আব্দুল কাদির) (বাড়ির ওই পূর্বধারে...) ও সৈয়দ মো. তানভীর তারেক (আমার মায়ের আঁচল...) (মায়া দ্য লস্ট মাদার), শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার: মাসুদ পথিক (মাসুদ রানা) (মায়া দ্য লস্ট মাদার), শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার: মাহবুব উর রহমান (ন ডরাই), শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা: জাকির হোসেন রাজু (মনের মতো মানুষ পাইলাম না)। 

শ্রেষ্ঠ সম্পাদক: জুনায়েদ আহমদ হালিম (মায়া দ্য লস্ট মাদার), শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক (যুগ্ম): মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বাসু ও মো. ফরিদ আহমেদ (মনের মতো মানুষ পাইলাম না), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক: সুমন কুমার সরকার (ন ডরাই), শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক: রিপন নাথ (ন ডরাই), শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজ-সজ্জা: খোন্দকার সাজিয়া আফরিন (ফাগুন হাওয়ায়) এবং শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান: মো. রাজু (মায়া দ্য লস্ট মাদার)।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান বিশেষ অতিথি হিসেবে এবং তথ্যসচিব খাজা মিয়া স্বাগত বক্তা হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। 

ইত্তেফাক/এসআই

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন