ব্রিটিশ একাডেমি অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন আর্টস (বাফটা) অ্যাওয়ার্ডসের আগের ৭৩টি আসরে সেরা পরিচালক শাখার পুরস্কারটি কেবল একজন নারী (ক্যাথরিন বিগেলো) জিততে পেরেছেন। তাও ১১ বছর আগের কথা। সেই তালিকায় যুক্ত হয়ে ইতিহাস গড়েছেন চীনের ক্লোয়ি জাও। বাফটার ইতিহাসে দ্বিতীয়বার কোনো নারীর হাতে উঠলো এই স্বীকৃতি। তিনি তো সেরা পরিচালক হয়েছেনই, বাফটার ৭৪তম আসরে সর্বাধিক চারটি পুরস্কার জিতেছে তার ‘নোম্যাডল্যান্ড’।
চীনে জন্ম নেওয়া ক্লোয়ি জাও বেড়ে উঠেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। বাফটায় সেরা পরিচালক হওয়া অশ্বেতাঙ্গ নারী তিনিই প্রথম। এদিক দিয়েও ইতিহাস রচনা করেছেন ৩৮ বছর বয়সী এই নির্মাতা। ২০১৭ সালে প্রকাশিত সাংবাদিক জেসিকা ব্রুডারের ‘নোম্যাডল্যান্ড’ গ্রন্থ অবলম্বনে তার ছবিটি তৈরি হয়েছে। এর গল্প ষাটোর্ধ্ব বিধবা ফার্নকে ঘিরে। ২০০৮ সালে আমেরিকায় অর্থনৈতিক মন্দার সময় ভবঘুরে জীবন কাটান তিনি। নিজের ভ্যানকে ভ্রাম্যমাণ বাড়িতে রূপ দিয়ে ঘুরে বেড়ান। পথ চলতে চলতে মৌসুমি চাকরি জুটিয়ে নেন।
বিধবা ফার্ন চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য বাফটায় সেরা অভিনেত্রী হয়েছেন ৬৩ বছর বয়সী ফ্রান্সেস ম্যাকডোরম্যান্ড। দৃষ্টিনন্দন ক্যামেরার কাজের জন্য চিত্রগ্রহণ শাখায়ও সেরা হয়েছে ছবিটি।
সেরা পরিচালক পুরস্কারটি পেয়ে যাযাবর সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ দিয়েছেন ক্লোয়ি জাও, যারা তাকে ও তার কলাকুশলীদের আপন করে নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘বার্ধক্য যে জীবনের সুন্দর একটি অংশ তা বোঝানোর জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। বয়োবৃদ্ধদের পাশে থাকা প্রয়োজন সবার। প্রবীণদের আমরা যেভাবে দেখি তাতেই বোঝা যায় আমরা কোন সমাজের এবং এক্ষেত্রে আমাদের আরও যত্নবান হওয়া দরকার।’
বাফটার ৭৪তম আসরের মনোনয়ন তালিকায় জাতিগত বৈচিত্র্য ও লিঙ্গ সমতা ছিল লক্ষণীয়। মনোনয়ন তালিকায় ২৪ জন অভিনেতা-অভিনেত্রীর ১৬ জনই সংখ্যালঘু। বাফটা বিজয়ী ও মনোনীতদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন ৬ হাজার ৭০০ জন সদস্য, যারা হলিউডের প্রফেশনালস ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সৃজনশীল ব্যক্তি।
‘নোম্যাডল্যান্ড’ ক্লোয়ি জাওয়ের তৃতীয় ছবি। এর জন্য গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডসের ৭৮তম আসরে এশিয়ার প্রথম নারী ও অশ্বেতাঙ্গ নারী হিসেবে সেরা পরিচালক হয়ে ইতিহাস গড়েন তিনি। ছবিটি গোল্ডেন গ্লোবসের সর্বোচ্চ সম্মান সেরা চলচ্চিত্র (ড্রামা) পুরস্কার জিতেছে।
৯৩তম অস্কারে মনোনীত সেরা পাঁচ পরিচালকের একজন ক্লোয়ি জাও। যদিও এই শাখাকে বলা হয় পুরুষদের দুর্গ! ক্যাথরিন বিগেলো একমাত্র নারী নির্মাতা যিনি পুরস্কারটি জিতেছেন। ২০১০ সালে ‘দ্য হার্ট লকার’ তাকে এই সম্মান এনে দেয়। বাফটার মতো অস্কারেও বিগেলোর পাশে ক্লোয়ির নাম বসে যাওয়ার তুমুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে স্বর্ণসিংহ (গোল্ডেন লায়ন) জিতে ‘নোম্যাডল্যান্ড’ আভাস দিয়েছিল এবারের পুরস্কার মৌসুমে রাজত্ব করবে। ক্লোয়ি জাওয়ের সুবাদে ১০ বছর পর ভেনিস উৎসবের সর্বোচ্চ সম্মান ওঠে কোনও নারী নির্মাতার হাতে। উৎসব দুনিয়ায় অনেক আগেই নিজের জাত চিনিয়েছেন তিনি। ২০১৫ সালে সানড্যান্স চলচ্চিত্র উৎসবে তার প্রথম ছবি ‘সংস মাই ব্রাদার টট মি’র উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। এরপর কান উৎসবের প্যারালাল বিভাগ ডিরেক্টর’স ফোর্টনাইটে এটি স্থান পায়।
ক্লোয়ি জাও পরিচালিত দ্বিতীয় ছবি ‘দ্য রাইডার’ ২০১৭ সালে ডিরেক্টর’স ফোর্টনাইটে নির্বাচিত হয়ে আর্ট সিনেমা অ্যাওয়ার্ড জেতে। এখন মারভেল স্টুডিওসের বিশাল ক্যানভাসের ছবি ‘এটারনালস’ পরিচালনা করছেন তিনি। এতে আছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, সালমা হায়েক, কিট হ্যারিংটনসহ হলিউডের প্রথম সারির জনপ্রিয় তারকারা।
লন্ডনের রয়্যাল আলবার্ট হলে ১০ ও ১১ এপ্রিল এবারের বাফটা বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। করোনার কারণে নির্ধারিত সময়ের দুই মাস পর হওয়া অনুষ্ঠানটি দুই দিনে বিভক্ত ছিল। এমন ঘটনা বাফটার ইতিহাসে এটাই প্রথম। মনোনীত ও বিজয়ীরা সবাই ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছেন অনুষ্ঠানে।
ইত্তেফাক/জেএইচ