ময়মনসিংহ শহরের গলগন্ডাস্থ পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে সদ্য প্রয়াত বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, স্বনামধন্য মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্র অভিনেতা মাহমুদ সাজ্জাদকে। আজ সোমবার (২৫ অক্টোবর) গলগন্ডা জামে মসজিদ সংলগ্ন মাঠে মরহুমের নামাজে জানাজা শেষে বাদ মাগরিব পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয় এই বরেণ্য নাট্য ব্যক্তিত্বকে।
সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি, মরহুমের মেজো ভাই বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম হামিদ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু, ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলসহ ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ ও সর্বস্তরের সুধীবৃন্দ জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। এ সময় বড় ভাইয়ের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ময়মনসিংহসহ সমগ্র দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
এর আগে দুপুরে সর্বসাধারণের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় নাট্যশালা প্রাঙ্গণে রাখা হয় মাহমুদ সাজ্জাদকে। এ সময় তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের ভক্ত, অনুরাগীসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন। শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, নাট্যজন ও মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ, নাট্যজন আতাউর রহমান, রামেন্দু মজুমদার, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য অসীম কুমার উকিল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নাট্যব্যক্তিত্ব ও মরহুমের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী নাট্যজন ফাল্গুনী হামিদ বলেন, ম. হামিদ, সাজ্জাদ ভাই ও আমার ছোট দেবর (কে.এম. খালিদ), এরা সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ। বর্তমান সময়ে যেখানে এই সাম্প্রদায়িকতার হানাহানি, সেখানে ভাইকে (মাহমুদ সাজ্জাদ) খুব দরকার ছিল।
শিল্পকলা একাডেমিতে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম, বাংলা একাডেমি, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন থেকে মাহমুদ সাজ্জাদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিল্পকলা একাডেমির নাট্যমঞ্চ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তার মরদেহ ময়মনসিংহে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানেই পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।
গত ১ সেপ্টেম্বর মাহমুদ সাজ্জাদকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে একই হাসপাতালে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। পরে গত রবিবার ২৪ অক্টোবর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। অভিনেতা মাহমুদ সাজ্জাদের বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি স্ত্রী, ২ ছেলেসহ অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী, আত্মীয় পরিজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
পাঁচ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে বড় মাহমুদ সাজ্জাদের মেজো ভাই বাংলাদেশের টেলিভিশনের (বিটিভি) সাবেক মহাপরিচালক ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব ম. হামিদ ও ছোট ভাই বর্তমান সরকারের সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
মাহমুদ সাজ্জাদ ছাত্রজীবন থেকেই মঞ্চনাটকে যুক্ত ছিলেন। মঞ্চ নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটকেও ছিলেন সমান পারদর্শী। বাংলাদেশ টেলিভিশনে মাহমুদ সাজ্জাদের অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘সকাল সন্ধ্যা’। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র খ্যাতিমান পরিচালক জহির রায়হানের ‘সংসার’, খান আতাউর রহমানের ‘ঝড়ের পাখি’ ও ‘আপন পর’।
ইত্তেফাক/জেডএইচডি