শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

১২ এপ্রিল থেকে দেশের সব সিনেমা হল অনির্দিষ্টকালের বন্ধের ঘোষণা

আপডেট : ১৩ মার্চ ২০১৯, ২১:৫৬

বিদেশি ছবি আমদানির নীতিমালা শিথিল করার পাশাপাশি দেশীয় ছবি নির্মাণ বাড়ানোর উদ্যোগ না নিলে ১২ এপ্রিল থেকে দেশের সব সিনেমা হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে হল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। সরকার সমস্যার সমাধান না করা পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে বলেও জানানো হয়।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আজ বুধবার ‘সিনেমা হল বাঁচলেই চলচ্চিত্র শিল্প বাঁচবে’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করে সমিতির পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘সরকারের সুদৃষ্টি ও আমাদের দাবিগুলো না মানা হলে ১ মাস পর অর্থাৎ আগামী ১২ এপ্রিল থেকে দেশের সব প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

সিনেমা হল চালানোর মত দেশে পর্যাপ্ত চলচ্চিত্র হচ্ছে না। যাও হচ্ছে তাতে মান নিয়ে প্রশ্ন থাকায় দর্শকরা সিনেমা দেখছে না। লোকসান গুণতে গুণতে হতাশ প্রযোজকেরা। অন্যদিকে আয় নিয়ে সন্তুষ্ট নন প্রেক্ষাগৃহের মালিকেরা। এছাড়া দেশের বাইরের ছবি প্রদর্শনেও রয়েছে কঠোর নিয়ম। তারপরও তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে নানাবিধ শর্ত আর নিয়মকানুন। এভাবে বেশি দিন চলতে পারে না। লোকসান গুণতে গুণতে পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে। 

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির পক্ষে লিখিত বিবৃতিতে বলেন, ‘দেশের চলচ্চিত্রের দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠার উপায় নিয়ে আমরা তথ্যমন্ত্রী ও তথ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা কেউই প্রেক্ষাগৃহ বাঁচানো কিংবা দেশীয় সিনেমা নির্মাণ বাড়ানোর ব্যাপারে এবং উপমহাদেশীয় ছবি আমদানির বাধা নিরসনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেননি। দেশের প্রেক্ষাগৃহ ১ হাজার ২৩৫ থেকে নেমে এখন ১৭৪-এ দাঁড়িয়েছে। সিনেমা নির্মাণও বছরে এখন ৩৫ থেকে ৪০ টির মতো। এত কিছুর পরও পরিচালক এবং শিল্পীরা তাদের আয় বন্ধ হয়ে যাবে, এই অজুহাতে উপমহাদেশীয় ছবি আমদানির বিরোধিতা করে যাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘যখন থেকে আমরা উপমহাদেশীয় ছবি আমদানির দাবি করে আসছি, তখন থেকে আমাদের আশ্বস্ত করতে বলা হচ্ছে, ভালো পরিচালক আসছেন। আমাদের দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্প ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তার উদাহরণ কি সিনেমা হলের সংখ্যা কমে ১৭৪ হওয়া? গত বছর দেশীয় ছবির নির্মাণ সংখ্যা ৩৫–এ নেমে আসা?’

তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চহারের বিদ্যুৎ বিল, শ্রমিক কর্মচারীর বেতনসহ অন্যান্য খরচের মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকায় প্রতিটি সিনেমা হল মালিকদের লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ৪৭ বছরেও পরিচালক ও শিল্পীরা ছবির গুণগত মান উন্নত করতে পারেননি। অথচ এটা সত্য যে, পাকিস্তান আমলে ভারতীয় বাংলা, হিন্দি সিনেমা ও পাকিস্তানি উর্দু সিনেমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের সিনেমা ব্যবসাসফল যেমন হয়েছে, তেমনি শিল্পমানও ছিল।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সহ-সভাপতি আমির হামজা, সাধারণ সম্পাদক কাজী শোয়েব রশীদ, উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দীন, সাংগঠনিক সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল, কার্যনির্বাহী সদস্য আলমগীর শিকদার লোটন প্রমুখ।

এদিকে, তাদের দাবির বিপরীতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সংগঠন। তাদের মতে সাফটা চুক্তির আওতায় নতুন ছবি মুক্তি দিয়ে দেশীয় চলচ্চিত্রের ক্ষতি করা হচ্ছে।

এর আগে, গত বছর ৩০ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ একটি আদেশ দেন, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, পূজা ও পহেলা বৈশাখের সময় যৌথ প্রযোজনার ছবি ছাড়া বাইরের দেশের কোনো ছবি দেশে আমদানি, প্রদর্শন ও বিতরণ করা যাবে না।

এদিকে ভারতীয় হিন্দি চলচ্চিত্র আমদানি ও প্রদর্শনের প্রতিবাদে কয়েক বছর আগে কাফনের কাপড় পরে আন্দোলন করেছিল চলচ্চিত্র পরিবার। আগামী ১২ এপ্রিল থেকে সিনেমা হল বন্ধ করা হলে, দেশে হিন্দি ছবি আমদানি করা হলে আবারও আন্দোলনে নামে চলচ্চিত্র পরিবার। বিষয়টি নিশ্চিত করেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান।তিনি বলেন, ‘তারা আগেও সিনেমা হল বন্ধের হুমকি দিয়েছেন। যদি দেশীয় সংস্কৃতি বাদ দিয়ে, বঙ্গবন্ধুর আইনকে পাস কাটিয়ে হিন্দি ছবি এনে দেশকে ধ্বংস করতে চায়; আমরা পুরো চলচ্চিত্র পরিবার ও শিল্পীদের পক্ষ থেকে এর জোর প্রতিবাদ জানাবো। আমরা আশা করবো সব সিনেমা হল মালিকরা তাদের এ সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না।’

আরও পড়ুন: মুরগীর আক্রমণে শিয়ালের ‍মৃত্যু

জায়েদ খান আরও বলেন, ‘দু-একজন লোকের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য তাদের অসাধু বুদ্ধিতে এসব হচ্ছে। ১২ এপ্রিল থেকে যদি হল বন্ধ করে দেয় আমরা পদক্ষেপ নেব। প্রয়োজন হলে আবারও আন্দোলন করবো, মাঠে নামবো। তারপরও বঙ্গবন্ধুর এফডিসিকে আমরা ধ্বংস হতে দেব না।’

ইত্তেফাক/কেকে

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন