শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাতাস অনেক ক্ষেত্রে অস্বাস্থ্যকর হলেও বিষাক্ত নয়

আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৯:৫৯

পরিবেশ অধিদপ্তর বলেছে, বাংলাদেশের বাতাস অনেক ক্ষেত্রে অস্বাস্থ্যকর হয়ে থাকে। কিন্তু এটিকে কোনোভাবেই বিষাক্ত বাতাস বলার অবকাশ নেই। কারণ বাংলাদেশের বাতাসে কোনও প্রকার টক্সিক (বিষাক্ত) উপাদানের উপস্থিতি চিহ্নিত হয়নি। বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে পলিমাটি দ্বারা গঠিত একটি বদ্বীপ। ভূপৃষ্ঠের পলিমাটি অতি সহজেই বায়ুতে ডাস্ট আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা ও ঢাকা শহরের বাইরে অধিকাংশ জায়গা অনাবৃত থাকায় শুষ্ক মৌসুমে অনাবৃত স্থান হতে ধূলিকণা বাতাসের মাধ্যমে চারদিকে ছড়িয়ে বায়ুদূষণ সৃষ্টি করে। এছাড়া রাস্তার পাশে ক্ষতিগ্রস্ত এবং অনাবৃত স্থানের কাদামাটি থেকে প্রচুর ধুলাবালির সৃষ্টি হয়। মাটি, বালি ও নির্মাণসামগ্রী বহনকারী যানবাহন থেকে রাস্তায় প্রচুর বালি ও মাটি ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে সমগ্র রাস্তা ধূলিময় হয়ে পড়ে। শীত মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম থাকায় কুয়াশার সঙ্গে বাতাসে ভাসমান ধুলাবালি মিশে ভূ-পৃষ্ঠের কাছাকাছি নেমে আসে এবং বাতাসের মানের অবনতি ঘটায়। বাতাসের গতি বৃদ্ধি এবং দিকপরিবর্তন না হলে এ অবস্থা দীর্ঘদিন বিরাজমান থাকে।

তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীর ৯০ ভাগ মানুষ বিশুদ্ধ বায়ু সেবন হতে বঞ্চিত রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যতিক্রম নয়। ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের উৎসর মধ্যে দুটি হলো অভ্যন্তরীণ ও ট্রান্সবাউন্ডারি উৎস। কারণ পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আগত বায়ুদূষণ যুক্ত হয়ে এ সময় দেশের বায়ুদূষণের মাত্রা অনেকগুণ বেড়ে যায়। রান্নায় ব্যবহৃত বায়োগ্যাস পোড়ানো, শুষ্ক মৌসুমে ঢাকার চারপাশে কৃষিজমির নাড়া পোড়ানো, কৃষিজমি কর্ষণ ও চাষাবাদের ফলে সৃষ্ট নানা বিষয় ঢাকা শহরে বায়ুদূষণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

এই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে নগরবাসীকে বায়ুদূষণের হাত থেকে বাঁচাতে রাজধানীর প্রবেশমুখ গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, পূর্বাচল, কেরানীগঞ্জ, টঙ্গীসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পানি ছিটাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এছাড়া সড়কের পাশে থাকা ছোট-খাটো গাছে জমে থাকা ধুলা-ময়লা পরিষ্কারের জন্য সেখানে পানি ছিটাতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে বলা হয়েছে। আর সিটি করপোরেশনকে নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ করতে ওয়াসাকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এসংক্রান্ত আদেশ বাস্তবায়ন করে হলফনামা আকারে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এসংক্রান্ত রিট মামলার সম্পূরক আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। আদালতে আবেদনের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে আমাতুল করিম শুনানি করেন।

পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৯ ও ২০২০ সালে ঢাকার বায়ুমানের অবস্থা পর্যালোচনায় দেখা যায়, সূক্ষ্ম বস্তুকণা মান জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে সামান্য বেশি। অবশিষ্ট আট মাসে এর পরিমাণ অনেক কম। এছাড়া বাতাসে সূক্ষ্ম বস্তুকণার অন্যতম উৎস হলো ট্রান্সবাউন্ডারি অর্থাৎ পার্শ্ববর্তী দেশ হতে আগত দূষণ। আর বায়ুমানের ডাটা হতে দেখা যায়, এই সময়ে অর্থাৎ গত ১২ মাস বায়ুতে বিদ্যমান বস্তুকণা মান অনেক কমেছে। এতে প্রতীয়মান হয়, অপেক্ষাকৃত বড় বস্তুকণা যা স্থানীয়ভাবে নির্মাণ ও সংস্কার কার্যক্রম, পরিবহন ও বর্জ্য হতে সৃষ্ট এ দূষণ অনেক কমেছে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও কার্যক্রমের ফলে এ উল্লিখিত পরিমাণের দূষণ কমানো সম্ভব হয়েছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

ইত্তেফাক/এমআর