শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পাখির জন্য ভালোবাসা

আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১০:২৪

শীতকালে অতিথি পাখি কূজনে মুখরিত হয় নদীর পাড়, বিল-ঝিল, বন-বাদাড় সব। এসব অতিথি পাখির কারুকার্য খঁচিত ডানায় ভর করে আকাশের নীল সীমানায় ওড়াউড়ি মানুষের মনকে যতটা মুগ্ধ করে, ঠিক ততটাই বিস্মিত করে দৃষ্টিকে। ইতিহাসে দেখা যায়, গ্রিসের হেসিয়ড, বিখ্যাত কবি হোমার, ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস, দার্শনিক অ্যারিস্টেটলসহ আরো অনেকেই পরিযায়ী পাখি সম্পর্কে অনেক কিছু লিখে গেছেন।

অ্যারিস্টেটল তার এক লেখায় উল্লেখ করেছেন, ‘সারস পাখি স্কাথিয়ার বৃক্ষহীন প্রান্তর থেকে নীল নদের জলাভূমিতে ভ্রমণ করত।’ সৈয়দ আলাওল রচিত ‘পদ্মাবতী’ কাব্যেও আমরা দেখতে পাই বিরহিনী রাজকুমারী তার স্বামীর কাছে দুঃখের বার্তা পৌঁছাতে একটি পাখি নিযুক্ত করেছেন। আলাওলের বর্ণনায়, ‘উড়তে নাড়িল পাখ শূন্যের উপর/উল্কাপাত হয় হেন বরে তার নর।/গমুদ্র উপর দিয়া করিল গমন/ জলনিধি হৈল তাই পূর্ণিত লবণ।’

রাজা-বাদশাহ এমনকি নবি-রাসুলদের সংবাদ আদানপ্রদানেও পাখি ছিল বিশ্বস্ত বার্তাবাহক। পবিত্র কোরআনে সোলাইমান (আ)-এর হুদহুদ পাখির কথা কত চমত্কারভাবেই না বর্ণিত হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সোলাইমান বিহঙ্গ দলের সন্ধান নিয়ে বললেন, ব্যাপার কী! হুদহুদকে দেখছি না যে! সে অনুপস্থিত নাকি? সে উপযুক্ত কারণ না দর্শালে আমি অবশ্যই তাকে কঠিন শাস্তি দেব অথবা জবাই করব। অতঃপর হুদহুদ এসে পড়ল এবং বলল, আপনি যা অবগত নন, আমি তা অবগত হয়েছি। সাবা থেকে সুনিশ্চিত খবর নিয়ে এসেছি। সেখানে আমি এক নারীকে দেখলাম তাদের ওপর রাজত্ব করছে। তাকে সবকিছু দেওয়া হয়েছে এবং তার রয়েছে এক বিরাট সিংহাসন।’ (সুরা নামল, আয়াত : ২০-২৩)

পাখি ওড়ার দৃশ্য দেখেই রাইট ভ্রাতৃদ্বয় উড়োজাহাজ আবিষ্কারে অনুপ্রাণিত হন। সত্যি! এ এক আশ্চর্য বিষয়ই বটে। কীভাবে পাখি তার ডানায় ভর করে শূন্যের ওপর স্থির থাকে? এ প্রশ্নের জবাব মিলে পবিত্র কোরআনে। পবিত্র কোরআনে ইরাশাদ হয়েছে, ‘তারা কি উড়ন্ত পাখিকে দেখে না? এগুলো আকাশের অন্তরিক্ষে আজ্ঞাধীন রয়েছে। আল্লাহতায়ালাই তাদের স্থির রাখেন। নিশ্চয় এতে বিশ্বাসীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা আন নাহল, আয়াত :৭৯)

কতটা নির্দয় হলে পরে অকারণে এসব পাখি হত্যা করা যায়! অথচ ইসলাম অকারণে পাখি হত্যাকে করেছে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। রাসুল (স) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অকারণে পাখি হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তার হিসাব নেবেন।’ (নাসাঈ শরিফ, হাদিস :৪৪৪৫)। মনে রাখতে হবে পাখি আমাদের পরম হিতৈষী, পরোপকারী বন্ধু। পাখি হলো প্রকৃতির কীটনাশক। পাখির সংখ্যা কমে গেলে কীটপতঙ্গের অত্যাচারে ফসল ফলানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় পাখির বেঁচে থাকা কতটা গুরুত্ববহ।

লেখক: প্রাবন্ধিক

ইত্তেফাক/জেডএইচডি