বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

হাকালুকিতে হিজল-করচসহ ২০ হাজার বৃক্ষ নিধন

আপডেট : ২১ জুন ২০২১, ০১:১৭

হাকালুকি হাওরের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) মালাম বিল পাড়ের হিজল-করচসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২০ হাজার গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গাছগুলো পরিবেশ অধিদপ্তরের অর্থায়নে সৃজিত এবং প্রাকৃতিকভাবে জন্মেছে। অভিযোগ উঠেছে, মালাম বিলের বাঁধ নির্মাণের নামে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ইজারাদারের লোকজন গাছগুলো কেটে নিয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র্য। ঐ বিলটি মৌলভীবাজারের বড়লেখা অংশে পড়েছে।

এ ঘটনায় সম্প্রতি হাকালুকি ইসিএ ব্যবস্থাপনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য ও জলজ বনের পাহারাদার মো. আব্দুল মনাফ সাত জনের বিরুদ্ধে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের অনুলিপি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসককে দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাকালুকি হাওরের অন্তর্ভুক্ত বড়লেখা উপজেলার অধীনে মালাম বিলের (মৎস জলাশয়) আয়তন ৪২৮.৯২ একর। ১৪২৭ হতে ১৪৩২ বাংলা সন পর্যন্ত সময়ের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ২১ লক্ষাধিক টাকায় মালাম বিলটি ইজারা নিয়েছে বড়লেখা উপজেলার মনাদি মত্স্যজীবী সমবায় সমিতি। পরিবেশ অধিদপ্তর ২০০৩ সাল হতে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থায়নে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) মালাম বিল (কান্দির) পাড়ে সরকারি ভূমিতে হিজল, করচ, বরুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ গাছ রোপণ করে। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ বেড়ে ওঠে। No description available.
বর্তমানে প্রাকৃতিক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সৃজিত জলজ উদ্ভিদগুলো ১০-১৫ ফুট উচ্চতার হয়েছে, যা হাকালুকি হাওরের ইসিএ এলাকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবরোধে বিশেষ অবদান রাখছে। গত ২৭ মে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ইজারাদারের লোকজন বাঁধ নির্মাণের নামে বিলের পাড়সহ প্রায় ১২ বিঘা জমির প্রায় ২০ হাজার গাছ অবৈধভাবে কেটে নেয়। এরপর তারা সেখানে ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করেছে। এতে হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকর্মী (বনায়ন পাহারাদার) আব্দুল মনাফ ও আরফান আলী বলেন, ‘মালাম বিলের ইজারাদার সমিতির লোকজন বর্ণি ইউনিয়নের কাজিরবন্দ গ্রামের জয়নাল উদ্দিন, মক্তদির আলী, মশাইদ আলী, রিয়াজ উদ্দিন, কালা মিয়া, সুরুজ আলী, মনাদি গ্রামের জয়নাল উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজনকে নিয়ে এক্সকাভেটর দিয়ে মে মাসের প্রথম দিকে বিলের দক্ষিণ ও পূর্ব পাশের সরকারি ভূমির জলজ বৃক্ষ নিধন করে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। আমরা বাধা দিলেও তারা মানেনি। বিলের পাড়ের গাছ কেটে অনেকেই বোরো চাষের জমি তৈরি করছে। এ ঘটনায় সাত জনের নামে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

মনাদি মৎস্যজীবী সমিতির পরিচালক জয়নাল উদ্দিন বলেন, ‘জলমহাল ইজারায় যে সব প্রভাবশালী বিনিয়োগ করেন তারাই এখানকার গাছ কেটেছেন, বাঁধ দিয়েছেন। যদিও কাজটা মোটেও ঠিক হয়নি। বিষয়টি প্রশাসনের সঙ্গে মিটমাট করা হবে বলে শুনেছি।’ কারা গাছ কেটেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

বন বিভাগের হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা জুনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট তপন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘জলা বনের পাহারাদারের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বনায়নটি পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের। তাই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে অবগত করেছি।’ পরিবেশকর্মী রিপন দাস বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় যখন নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, ঠিক তখনই নির্বিচারে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। এতে হাওরের প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।’No description available.
পরিবেশ অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন ইবিএ প্রজেক্টের এডমিন অ্যান্ড ফাইনান্স অফিসার (এএফও) সাহিদ আল শাহিন রবিবার বিকালে বলেন, ‘গাছ কাটার ঘটনাটি পাহারাদার আমাকে জানিয়েছে। আমাদের প্রকল্পের মাধ্যমে ইসিএভুক্ত মালাম বিল এলাকায় প্রায় ৭০ একর জায়গায় হিজল-করচসহ পরিবেশবান্ধব গাছ লাগানো হয়েছিল। গাছগুলো অনেক বড় হয়েছিল।’

 

পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা রবিবার (২০ জুন) বিকালে জানান, ‘গাছ কাটার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। শিগিগরই জায়গাটি পরিদর্শন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। কে বা কারা গাছগুলো কেটেছে তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইত্তেফাক/এসজেড