শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ফিরে আসছে রানি মাছ

আপডেট : ২৪ জুন ২০২১, ১০:১৫

নাম তার বউ মাছ। রানি মাছ নামেও পরিচিত। অঞ্চলভেদে মাছটিকে বেটি, পুতুল ও বেতাঙ্গী নামেও ডাকা হয়। তবে নাম যা হোক, মাছটি খেতে খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণসম্পন্ন।

দেখতে হলদেটে রঙয়ের এবং দেহে কালচে রঙয়ের আড়াআড়ি ডোরাকাটা দাগের এই মাছটি ছোটদের কাছেও সমান জনপ্রিয়। কিন্তু স্বাদু পানির এ মাছটি এখন বিলুপ্তপ্রায়।

প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) রানি মাছকে বিপন্ন প্রজাতির মাছ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

তবে সুখবর হলো, সম্প্রতি বিপন্ন প্রজাতির এই মাছটির কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উত্পাদন কৌশল উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। ময়মনসিংহে ইনস্টিটিউটের স্বাদু পানিকেন্দ্রে এ সফলতা অর্জিত হয়েছে।

গবেষকদলে ছিলেন: ড. সেলিনা ইয়াছমিন, মো. রবিউল আওয়াল, ড. এ এইচ এম কোহিনুর ও ড. মো. শাহা আলী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রজননকৌশল উদ্ভাবনের ফলে রানি মাছকে চাষের আওতায় আনা যাবে।

বিএফআরআই সূত্র জানিয়েছে, একসময় বাংলাদেশের খালবিল, নদ-নদী, হাওর-বাঁওড়ে এই মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলাশয় সংকোচন, পানিদূষণ এবং অতি আহরণের ফলে মাছটির বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস হওয়ায় এর প্রাপ্যতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। গত বছর রানি মাছের সংরক্ষণ, প্রজনন ও পোনা উৎপাদন বিষয়ে গবেষণা কর্মসূচি গ্রহণ করে বিএফআরআই।

প্রজননের জন্য যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও কংশ নদ এবং নেত্রকোনার হাওর থেকে মাছটি সংগ্রহ করা হয়। পরে তা গবেষণা কেন্দ্রের পুকুরে প্রতিপালন করা হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ডিম নিষিক্ত ও ফোটার হার যথাক্রমে ৭৫ শতাংশ ও ৫০ শতাংশ।

গবেষণায় দেখা গেছে, রানি মাছ মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রজনন করে থাকে। জুন-জুলাই এদের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম। একটি পরিপক্ব স্ত্রী মাছে প্রতি গ্রামে ৮০০ থেকে ৯০০ ডিম পাওয়া যায়।

একটি পূর্ণবয়স্ক ও প্রজননক্ষম রানি মাছ সাধারণত ৮ থেকে ১০ গ্রাম ওজনের হয়। পুরুষ মাছের তুলনায় স্ত্রী রানি মাছ অপেক্ষাকৃত আকারে বড় হয়। এ মাছ প্রধানত প্লাংকটন ও পোকামাকড় খায়।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, বিপন্ন মাছগুলোকে ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি।

সম্প্রতি বাতাসি, পিয়ালী ও ঢেলা মাছের কৃত্রিম প্রজননকৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে। এবার এ তালিকায় যুক্ত হলো রানি মাছ। পর্যায়ক্রমে অন্য বিপন্ন প্রজাতির মাছগুলোকেও ফিরিয়ে আনা হবে।

ইত্তেফাক/এএএম