শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

জরুরি বিভাগ আছে, চিকিৎসক নেই

আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২১, ০৩:০৫

স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সারা দেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার পদ সৃষ্টি হয়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগ থাকলেও নেই চিকিৎসক। দুপুর ২টার পর থেকে রাত অবধি এই বিভাগে রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন নার্স, ওয়ার্ড বয় ও সুইপাররা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, অনেক জেলা সদর হাসপাতালেও জরুরি বিভাগে চিকিৎসকের পদ নেই। এতে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। অনেক মুমূর্ষু রোগী জেলা সদর কিংবা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। প্রতিদিনই পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধিরা এ ধরনের সংবাদ পাঠিয়ে থাকেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, উল্লেখিত বিষয়গুলো মাথায় নিয়ে সারা দেশের প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসারসহ পাঁচটি মেডিক্যাল অফিসার পদ সৃষ্টির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা দ্রুত বাস্তবায়ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা থেকে বাড়িয়ে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু জনবল বাড়েনি। এমবিবিএস পাশ করা প্রায় ৪০ হাজার চাকরির অপেক্ষায় রয়েছেন। আর জনবলের অভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইমার্জেন্সিসহ সব চিকিত্সাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে বেলা ২টা থেকে সারারাত পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অনেকটা অরক্ষিত থাকে। এই সময়ে নার্স, ওয়ার্ড বয় ও সুইপাররা টুকটাক চিকিত্সাসেবা দিয়ে থাকেন। তারাই রোগীদের জেলা সদর কিংবা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার মৌখিক পরামর্শ দিয়ে থাকেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার থাকেন। কিন্তু তিনি সাধারণত দিনেও ডিউটি করেন। রাতে আসতে চান না। ইমার্জেন্সি বিভাগে বেলা ২টার পরে কোনো মেডিক্যাল অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও তাদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এই সময়ে নিকটবর্তী ক্লিনিকে, জেলা, বিভাগীয় শহর কিংবা ঢাকায় গিয়ে তারা প্রাইভেট প্রাকটিস করেন। এ কারণে এই সময়ে জরুরি কোনো রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলে নার্স, ওয়ার্ড বয় ও সুইপাররা তাদেরকে জেলা সদরে কিংবা পার্শ্ববর্তী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। অনেকে আবার পার্শ্ববর্তী বেসরকারি ক্লিনিকে যাওয়ারও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তিন জন সিভিল সার্জন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সবাই ঢাকা নিয়ে চিন্তা করে। অথচ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পুরো সিস্টেম চালু থাকলে সেখানেই ৮০ ভাগ চিকিত্সাসেবা দেওয়া সম্ভব। হাতের কাছে চিকিত্সাসেবা পেলে মানুষ কেন ঢাকায় আসবে?

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইমার্জেন্সি সব ধরনের রোগী আসেন। যাদের অনেকে প্রাথমিক চিকিত্সাসেবা পেলে ভালো হয়ে যায়। অনেক রোগীর অক্সিজেনেরও প্রয়োজন হয়। সেই সময়ে অক্সিজেন না পেলে ঐ রোগীর মৃত্যু অনিবার্য। অন্যদিকে অনেক প্রসূতির ইমার্জেন্সি সিজারিয়ান অপারেশন করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু চিকিত্সকসহ অন্য জনবল না থাকার কারণে এই ধরনের জরুরি অপারেশন করা সম্ভব হয় না।

গাইনি বিশেষজ্ঞরা বলেন, মা ও শিশুর জীবন রক্ষার্থে সময়মতো সিজারিয়ান অপারেশন না হলে তাদের মৃত্যুসহ পরবর্তী নানা জটিলতার আশঙ্কা থাকে। মুমূর্ষু রোগীদের জেলা সদর কিংবা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিতেও অনেক সময় লেগে যায়। এতে অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা পথেই মারা যান। এছাড়া অনেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেশিন আছে, টেকনোলজিস্ট নেই। সার্জন আছেন, অ্যানেসথেসিওলজিস্ট নেই। আবার অ্যানেসথেসিওলজিস্ট আছেন, সার্জন নেই।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, জনবলের অভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনেক ডাক্তার অপারেশন করতে চান না। কারণ অপারেশন-পরবর্তী ফলোআপের চিকিত্সক নেই। প্রতি শিফটে দুই জন মেডিক্যাল অফিসার ইমার্জেন্সিতে থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক বেলা চিকিত্সাসেবা দেওয়া হয়। সকালে আউটডোরে দেখার পর দুপুর ২টার পর ডাক্তাররা থাকেন না। এতে ইমার্জেন্সিসহ সব ধরনের চিকিত্সা ব্যাহত হচ্ছে।

উপজেলায় যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রয়েছে তা সঠিকভাবে কার্যকর রাখার দায়িত্ব জেলা সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় (স্বাস্থ্য) পরিচালকের। একশ্রেণির সিভিল সার্জন ও পরিচালক ঘুষবাণিজ্য নিয়েই ব্যস্ত। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিত্সাসেবায় অব্যবস্থার জন্য এই ধরনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারাই অনেকাংশে দায়ী বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন।

ইত্তেফাক/এমএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন