বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মা হতে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন অনেকে

আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২১, ১১:৫০

গর্ভাশয় ও জরায়ুতে বিপজ্জনক সিস্ট, টিউমার নিয়ে মা হচ্ছেন অনেক নারী। অথচ এর কারণে ক্যানসার হয়ে জীবননাশের আশঙ্কা থাকে। কিন্তু তা আমলে না নিয়ে মা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে চিকিৎসাকরা পাশে থাকেন। ৩০ বছর বয়সি মোহাম্মাদপুরের বাসিন্দা নাইলী বিয়ের পর জানতে পারে তার গর্ভাশয়ে ছোট-বড় চারটি টিউমার আছে। এই টিউমারগুলো নিরাপদ নয়। তাই চিকিত্সক তাকে দ্রুত সন্তান নিতে বলেন। সন্তান জন্মের সময় টিউমার অপসারণ করা হবে। গর্ভাবস্থায় ভ্রূণ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিউমারও বাড়তে থাকে। এতে তার বাচ্চার শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হয়। অনেক আতঙ্কের মধ্যে জীবনের সুখকর অনুভূতি মা হওয়া উপলব্ধি করেন।

শান্তার তখন খুব একটা বয়স হয়নি। টিউমার হওয়ার কারণে তার একটা ওভারি ফেলে দিতে হয়। এ সময় পরিবার আর শান্তার মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না। শান্তার বিয়ে-মা হওয়া সব অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তিন মাসে টিউমারের ওজন বেড়ে হয় পাঁচ কেজি। তাই অন্য চিন্তা না করে চিকিৎসক দ্রুত তা অপসারণ করেন। চিকিৎসক তাদের জানান, আল্লাহ চাইলে শান্তা মা হতে পারবেন। অপারেশন আর টিউমারের কথা জানিয়েই শান্তার বিয়ে হয়। বিয়ের তিন মাসের মধ্যে চেকআপে গেলে চিকিৎসক তার ওভারিতে আবার টিউমার আছে বলে জানান। আর দ্রুত সন্তান নেওয়ার পরামর্শ দেন। টিউমারের সঙ্গে অনেক শারীরিক জটিলতা নিয়ে শান্তা প্রথম সন্তানের মা হন। সন্তান হওয়ার সময়ই তার টিউমার অপসারণ করা হয়।

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থেকে গর্ভাশয় ও জরায়ুতে বিপজ্জনক সিস্ট, টিউমার নিয়ে মা হওয়ার বিষয়ে চিকিৎসকরা বলেন, শিক্ষা ও পেশার দিকে নজর দিতে অনেকের দেরিতে বিয়ে হয়। ৩০ বছরের পর ৪০ শতাংশ নারীর টিউমার সিস্ট হতে পারে। এর সবই বিপজ্জনক নয়। বয়স টিউমার হওয়ার একটা কারণ হলেও অনেক কারণে নারীর গর্ভাশয় ও জরায়ুতে টিউমার, সিস্ট হতে পারে। বিপজ্জনক টিউমার নিয়ে মা হওয়ার ইচ্ছা পরিবার ও নারী পোষণ করে বলে জানান অবস্ট্রেটিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ-এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক সামিনা চৌধুরী। তিনি বলেন, মেয়েদের হরমোন ভারসাম্য তারতম্যের জন্য অনেক ধরনের সিস্ট, টিউমার হয়ে থাকে। কী ধরনের টিউমার নিয়ে গর্ভবতী হলে ঝুঁকি থাকে তা চিকিত্সকরা শুরুতেই চিহ্নিত করেন। এই সিস্ট বা টিউমারসহ মা হওয়া সম্ভব কিনা তা বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক নির্ধারণ করেন। আমাদের দেশে জরায়ুতে ফাইব্রয়েড খুবই কমন বিষয়। তবে তিনি এটাও উল্লেখ করেন, অনেক মেয়েই ক্ষতিকর জেনেই এ অবস্থায় গর্ভধারণ করেন। ব্র্যাক ইউনির্ভাসিটির ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুলের পাবলিক হেলথ চিকিত্সক অধ্যাপক কাওসার আফসানা ইত্তেফাককে বলেন, মা হওয়া প্রত্যেক মেয়ের জীবনে বড় আকাঙ্ক্ষার বিষয়। কিন্তু এ সব জটিলতা নিয়ে নানারকম ওষুধ খেয়ে মা হওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমি একটি গ্রামে কাজ করতে গিয়ে জানতে পারি, এই গ্রামের অনেক মেয়েই মা হতে না পেরে সন্তান দত্তক নিয়ে মাতৃত্বের আশা পূর্ণ করেছেন। গ্রামের মানুষ যদি এত এগিয়ে থাকে তবে কেন আমরা নানারকম ঝুঁকি নিয়ে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জেনে গর্ভধারণ করব। নিজেদেরই এ বিষয়ে সচেতন হতে বলেন এ চিকিৎসক।ৎ

হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম বলেন, এ সংখ্যা অনেক কম হলেও আছে। এ সব রোগীর জন্য আজকাল অনেক আধুনিক চিকিৎসাও আছে।

ইত্তেফাক/কেকে

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন