শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনাকালে নারী উদ্যোক্তা

আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২১, ০৩:৪৩

কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের নারী উদ্যোক্তাদের ১০ জনের ৯ জন করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের শিকার হয়েছেন। অপরদিকে অনানুষ্ঠানিক খাতে ১০ জনের মধ্যে আট জন নারী কর্মী এ ক্ষতির শিকার হয়েছেন। গবেষণা এমনটা বললেও আশার কথাও আছে। জানাচ্ছেন— মোবাশ্বেরা জাহান ফাতিমা

ঋতু দাস

টাঙ্গাইলের মেয়ে। অ্যাকাউন্টিং বিভাগ থেকে অনার্স শেষ করেছেন। কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন, ছোট বেলা থেকে আঁকা-আঁকির শখ ছিল। এমনকি ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে চারুকলায় ভর্তি হওয়ার প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকলেও শেষ পর্যন্ত পরিবেশগত নানান জটিলতায় তা আর হয়ে ওঠেনি। অনার্স শেষ করে বাসার অমতেই নিজের স্বপ্নের গাছে পানি ঢালতে উন্মাদ আমি বেরিয়ে পরি ঘড় ছেড়ে। সে মুহূর্তে এক বন্ধুর মাধ্যমে একটা অ্যানিমেশন স্টুডিওতে ইন্টার্ন হিসেবে জয়েন করি। তারপর সেখানেই দুই বছর কাজ করি। ঢাকায় এসে চাকুরি শুরু করলেও, উদ্যোক্তা হওয়ার বাসনা আমাকে বেশি টানত। এরপর চাকুরির পাশাপাশিই অনেক প্রিয় মানুষের অনুপ্রেরণা এবং সাহস নিয়ে আমার স্বপ্নের দিকে পা বাড়াই ২০১৯ সালের মার্চে। নিজের জন্য, পরিবারের জন্য ছোট ছোট ডিজাইন করে দিতাম। এরপর ২৪ আগস্ট ২০১৯ আমার উদ্যোগ ‘অপরাজিতা’ অনলাইন প্ল্যাটফর্মরে নিয়ে আসলাম। করোনাকালে বসে না থেকে কাজটা এগিয়ে নিয়েছি। আমি মূলত বিভিন্ন রকম শাড়ির ওপর হ্যান্ডপেইন্টের কাজ করি। টাঙ্গাইলের মেয়ে হওয়ার সুবাদে টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লী থেকে একদম নিজ হাতে প্রতিটা শাড়ি সংগ্রহ করি। প্রথম দিকে কিছু কাজ করে মোবাইল দিয়ে ছবি তুলেই আমার পেইজে আপলোড করি। ভেবেছিলাম অনলাইন পেইজে আর কতটুকুই কাজ করব, মানুষ কেনই-বা আমার কাজকে এপ্রিশিয়েট করবে। কিন্তু ঐ যে বললাম, কাছের মানুষগুলো আর আমার হাজবেন্ড তমাল দাস প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা আর সাহস জুগিয়েছে। আস্তে আস্তে অপরাজিতায় বিভিন্ন থিম ভিত্তিক কাজ নিয়ে সবার সামনে আসলাম। মানুষ হ্যান্ডপেইন্টকে এত সুন্দরভাবে স্বাগতম করবে আমি ভাবতে পারিনি। এরপর চাকুরি ছেড়ে দেই, আর স্বপ্ন বুনতে শুরু করি অপরাজিতাকে দেশীয় থিমেটিক হ্যান্ডপেইন্ট ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড় করাব। সেই লক্ষ্যেই সবার ভালোবাসা নিয়ে একদম পুরো উদ্যামে কাজ শুরু করেছি। কোয়ালিটি দিয়ে সবার আস্থা ধরে রাখতে চাই।

তাছলিমা আক্তার টুম্পা

ফে নীর মেয়ে টুম্পা। পরিবারে তিন ভাইবোনের মধ্যে টুম্পা সবার ছোট। এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া পর বাসায় বসে থেকে যখন বিরক্ত হচ্ছিলেন ঠিক তখনি ফেসবুকে ‘টুম্পা ক্রাফট’ শুরু করেন। বেশ কিছু দিন যাওয়ার পর এখন তার ক্রাফটের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এর মধ্যে অনলাইন পেইজ এবং ফেসবুক খুলেন তিনি। করোনাকালে দেশের বিভিন্ন জেলা এবং দেশের বাহিরে পাঠাচ্ছেন। অনলাইন ব্যবসার পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে ফেনী সরকারি কলেজে মাস্টার্স পড়ছেন। ব্যবসা ধীরে ধীরে বাড়ছে। ক্রাফটের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত করেছেন কসমেটিকস। পরিবার সেই শুরু থেকেই সহায়তা করছে, উত্সাহ দিচ্ছে।

উম্মে হাবিবা বন্যা

কুড়িগ্রামের মেয়ে। পড়াশোনা আর সংসারের কারণে থাকেন ঢাকায়। আমদানি করা কসমেটিকস নিয়ে কাজ করেন। মূলত ব্যবসা শুরু করার ইচ্ছে হয়েছে করোনাকালে। ভাবলাম আনকমন কিছু করা যায় কি না। যেহেতু সব এখন অনলাইনে হয়, সেহেতু অনলাইন ব্যবসার বিষয়টি মাথায় আসে। আমি অনেক আগের থেকেই ইমপোর্টেড কসমেটিকস ব্যবহার করতাম। তাই এই ব্যাপারে মোটামুটি খুব ভালো একটা জানাশোনা আছে। তাই সাহস করে শুরু করে দিলাম। পেজ খুললাম ছবি আপলোড দিলাম। যতটা না আশা করেছিলাম তার থেকে বেশি রেসপন্স পেয়েছি। সফল হওয়ার আসল কারণ হচ্ছে বিশ্বাস। সেটা হয়তো ক্রেতারা আমার কাছে পেয়েছে আমার পণ্যের মাধ্যমে। নিজে একা সবকিছু সামলে নিয়েছি। মানুষের ভালোবাসা অর্জন করে নিয়েছি। পরিবারের সবার সাপোর্ট থাকলেও চেষ্টা এবং শ্রম দুটোই আমি দিয়েছি। উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পেছনে যে শ্রম শক্তি এবং পরিশ্রম লাগে মনে হয় তা করতে পেরেছি।

শাহানা জেরিন

খুব ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করা একজন মানুষ। ২০১১ সাল থেকেই সব সময় কোনো না কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত থেকেছি। ট্রাভেল এজেন্ট হিসেবে কাজ করছি সাত বছর। করোনা সব কিছুরই ছন্দপতন ঘটিয়ে দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি পর্যটন ক্ষেত্রে। কিন্তু সময় যেমনই হোক জীবনকে থামিয়ে রাখা যাবে না। করোনা সংকটে ফ্লাইট বন্ধ। কিন্তু আমার তো বসে থাকা একদম পছন্দ নয়। তখনই অনলাইনে কিছু একটা করার কথা চিন্তা করলাম। শুরু করলাম আমার পেজ ‘প্রহর’-এর যাত্রা। অথেনটিক এবং ইমপোর্টেড কসমেটিক প্রোডাক্টের জন্য আমাদের সবারই চাহিদা দেখে শুরু করলাম কসমেটিক প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ। আমার এই কাজের পেছনে সাহায্য করেছে আমার স্বামী মো. মনিরুজ্জামান এবং আমার বান্ধবী পূজা বিশ্বাস। আশা করি, এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা অনেক বড় পরিসরে গিয়ে দাঁড়াবে।

ইত্তেফাক/এএইচপি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন