শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সব বাধা পার হয়ে আমরা উঠে দাঁড়াব ইনশাআল্লাহ : জাহিন তাহমিদ ফুয়াদ

আপডেট : ২৯ জুন ২০২০, ১৮:১৮

চলছে এক অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই। এই লড়াইয়ে বড়োদের পাশাপাশি ছোটরাও নানাভাবে যুক্ত রয়েছে। স্কুল বন্ধ থাকলেও অনলাইনে চলছে ক্লাস, পরীক্ষা আর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা। সেইসঙ্গে সুস্থ থাকার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ছোটরাও ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সবাইকে জানাচ্ছে কীভাবে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ঘরে থাকার এই সময়ে কেউ ছবি আঁকছে, কেউ গান করছে, কেউ নাচ করছে, আবার কেউ গল্পের বই পড়ে সময় কাটাচ্ছে। পর্বে দিনযাপনের কথা লিখে পাঠিয়েছে আমাদের ছোট্ট বন্ধু জাহিন তাহমিদ ফুয়াদ। তার কাছ থেকে শুনে নিই তার করোনার দিনগুলোর গল্প

 

আমার নাম জাহিন তাহমিদ ফুয়াদ। আমার বয়স ছয় বছর। আমি আলেয়া বেগম মডার্ন স্কুলে (ইংলিশ ভার্সন) নার্সারিতে পড়ি। করোনা ভাইরাসের কারণে স্কুল ছুটি  দেওয়ায় আমার মনটা খুব খারাপ। তাই আব্বু-আম্মু আমাকে খুশি করার চেষ্টা করে। আমাকে গল্প শোনায়, আমার সাথে লুডু খেলে।

 

মজার বিষয় হলোপ্রতিবার লুডু খেলায় আমাকেই জিততে হবে। আমি হেরে গেলে আব্বু-আম্মুকেও আর খেলতে দিই না। এছাড়াও আব্বুর সাথে মজার মজার ধাঁধা খেলে আব্বুকে হারিয়ে দিই। বাসার সামনে ছোট্ট গ্যারেজে আব্বুর সাথে ক্রিকেট খেলি, সাইকেল চালাই এবং কিছুক্ষণ পরপর হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুই। এখন আমি নিজেই বই পড়তে শিখেছি, তাই আমার জন্মদিনে উপহার পাওয়া বইগুলো পড়ে সময় কাটাই। এছাড়াও আমি টিভি দেখি, প্রতিদিনই করোনার আপডেটগুলো জেনে নিই। দুরন্ত টিভির সবগুলো প্রোগ্রামই আমার খুব পছন্দের । বিশেষ করে ‘মেছো তোতা গেছো ভূত’ আমার খুব ভালো লাগে। কখনো কখনো আমি ছবি আঁকি, আম্মুকে কাজে সাহায্য করি। বিকেল হলে ছাদে যাই, খেলাধুলা করি, বড়ো ভাইয়াদের ঘুড়ি ওড়ানো উপভোগ করি। এছাড়াও আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সাথে ভিডিও কলে কথা বলি। কম্পিউটারে গেমস খেলা আমার সবচেয়ে প্রিয় কাজ।

 

যেহেতু নানুদের বাসা আমাদের বাসার খুব কাছে, তাই নানুদের বাসায় গিয়ে বেশিরভাগ সময়ই আমি কম্পিউটারে গেমস খেলি আর নতুন নতুন গেমস কীভাবে তৈরি করতে হয় সেই আইডিয়াগুলো খুঁজতে থাকি। ইউটিউবে আমি গেমস নিয়ে অনেক ভিডিও দেখি। ডাইনোসর নিয়েও আমার অনেক কৌতূহল। আমার একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে। ছোট খালামনি আমার ভিডিওগুলো সেখানে আপলোড করে দেয়।

 

এই ছুটিতে আমার আম্মু আমাকে অনেক দোয়া, সুরা ও নামাজ পড়তে শিখিয়েছে। রোজার মাসে আমি আব্বুর সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েছি এবং বিশ রাকাত তারাবিও পড়েছি। আমি আমার স্কুলকে খুব মিস করি। আমাদের অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়েছে। আমি এখন ঘরে বসেই বন্ধুদের সাথে প্রতিযোগিতামূলক পড়াশোনা করছি।

 

বন্ধুরা, এবার আসি আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায়। যখন আমি গেমস খেলি তখন আমার ইচ্ছা জাগে একজন গেম ডেভেলপার হতে। মাঝে মাঝে মনে হয় সায়েন্টিস্ট হব, সায়েন্টিস্ট হয়ে সুপারহিরো রোবট তৈরি করব, যে রোবট মানুষের উপকারে আসবে, আমার আম্মুকে কাজে সাহায্য করবে, নানার অসুখ সারিয়ে দেবে। আবার কখনো কখনো ইচ্ছা করে পাইলট হতে। প্লেনে করে ত্রাণ পৌঁছে দেবো সবার ঘরে। করোনায় পুলিশদের সহযোগিতা দেখে ইচ্ছা করে পুলিশ হতে। আবার যখন টিভিতে প্রধানমন্ত্রীকে দেখি চাষাবাদের প্রতি উৎসাহ দিতে, তখন মনে হয় আমি চাষি হব। এদেশের অসহায় মানুষদের খাদ্যসমস্যা দূর করব। তবে সবার আগে আমি মানুষ হব। সত্যিকারের মানুষ। আমার বিশ্বাস এই মহামারি একদিন কেটে যাবে। সব বাধা পার হয়ে আমরা উঠে দাঁড়াব ইনশাআল্লাহ।

নার্সারি (ইংলিশ ভার্সন), আলেয়া বেগম মডার্ন স্কুল, ঢাকা

লেখা পাঠানোর ঠিকানা : [email protected]