শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনাকালের দিনপঞ্জি ১০

জানালার আড্ডা

আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২০, ২০:২৯

আমাদের স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে ১৮ মার্চ থেকে। পুরোটা সময়ই বাসার মধ্যে আমরা। বিকেলে ছাদে উঠি, দু ভাই-বোন ক্রিকেট, ফুটবল খেলি আর টবে আম্মুর লাগানো সবজি গাছে পানি দিই। সকালে-রাতে স্কুলের বই পড়ি, গান করিএভাবে কাটছিল রমজানের অর্ধেক পর্যন্ত। কিন্তু তখন গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রচণ্ডভাবে মনটা আনচান করছিল। বাবাকে অনেক বোঝাতে চেষ্টা করেও পারছিলাম না, কারণ তখন সাধারণ ছুটির কারণে গাড়ি চলছিল না ঠিকমতো। একদিন দুপুরে জোহরের নামাজের পরে আমার ভাই তুর্য্য’র প্রচণ্ড মন খারাপ দেখে বাবা ঠিক করলপরের দিন আমরা গ্রামের বাড়ি যাব। প্রাইভেটকার ঠিক করা হলো, করোনার কারণে খুব সাবধানে মাস্ক আর হ্যান্ডগ্লাভস পরে আমরা ইফতারের পর রওয়ানা হলাম।

ঠিক রাত ৯টায় রওয়ানা করে রাত ১টার মধ্যে  গ্রামের বাড়ি বরিশালের আগৈলঝাড়ায় পৌঁছে গেলাম। যেখানে আগে যেতে ৭/৮ ঘণ্টাও লেগে যেত। কিন্তু এবার রাস্তায় কোনো জ্যাম নেই ফেরিঘাটে বাস নেই তাই দ্রুত আমরা পৌঁছে গেলাম বাড়িতে। তখন সে কি মজা, সত্যিই বলে বোঝাতে পারব না! পরের দিন সকাল হলো, খুব মজা করব, সবাই আসবে, খেলবএসব ভেবে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠি আমরা। কিন্তু, না! নানুবাড়ির পাশের সোহান মামা, জাহিদুল ভাইয়া, আন্না আন্টি কেউ আসছে না। তখন ভাবলাম এ তো সেই ঢাকার মতোই হলো। করোনা ভাইরাসের কারণে কেউ কারো বাসায় আসে না। বড়ো মামার সাথেও বাইরে ঘুরতে যাওয়া যায় না। নানুবাড়ি যেহেতু অনেক বড়ো, সেখানে মেঝো নানার সাইকেল চালিয়ে আর মামাদের সাথে ক্রিকেট খেলে সময় কাটাই। তবে মজা হতো যখন গোসলের সময় দুপুরে পুকুরে নেমে সাঁতার কাটতাম। আমি পানিতে চিৎ হয়ে ভেসে থাকতে পারি অনেকক্ষণ। আমার খুব ভালো সময় কেটেছে তখন। তবে দাদুবাড়ি যখন গেলাম, সেখানে ছোট্ট কাকাত বোনকে নিয়ে আদর করা আর টিভি দেখায় কেটেছে বেশির ভাগ সময়।

ঈদের দিনটাও কেমন যেন পানসে ছিল এবার। কোথাও ঘুরতে যেতে পারিনি। যে কারণে এবার ঈদ সেলামিও কম পেয়েছি। তবে দাদুবাড়িতে এবার খুব মজা দিয়েছে কাকার গৃহপালিত বিড়াল মিনি। আমরা যখন খেতে বসতাম ডাইনিং টেবিলে, মিনি তখন এসে আগে ভাগে আমাদের চেয়ারে বসে থাকত। আমরা ঘুমাতে গেলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে থাকত। আর টিভি দেখার সময় তো তার সোফায় বসে থাকতেই হবে। এসব করতে করতে হঠাৎ একদিন বাবা বলল, জরুরি আজ রাতেই ঢাকায় ফিরতে হবে। সন্ধ্যায় গাড়ি এল। আমরা সবাই চলে এলাম ঢাকায়। আবারও সেই চার দেয়ালে বন্দিবিকেলে ছাদে ওঠা; রাতে বইপড়া, গান করা; সকালে কোরআন শরিফ পড়া, ছবি আঁকা। এসব করেই কাটছে সময়। কিন্তু বাসার নিচে আর নামা হয় না। তবে আমাদের সামনের বিল্ডিংয়ের ফ্ল্যাটে দুটো মেয়ে আছে, একজন আমার চেয়ে এক ক্লাস নিচে পড়ে, আরেকজন অনেক ছোট। নাম এরিকা, অদৃতা। ওদের সাথে জানালা থেকে কথা হয় এখন প্রায়ই। গল্প করি, আড্ডা দেই। খুব ভালো লাগে। ওদের সাথে করোনার আগে অবশ্যই কখনো এভাবে জানালার আড্ডাটা হতো না। মাঝে মধ্যে পড়ার রুমে আমরা কেউ না থাকলে ওরা এসে ডাকে দিদি... ও দিদি...। ওদের দিদি ডাকটা শুনতে খুব মজা লাগে। অবশ্য করোনার কারণে এরিকা, অদৃতার সাথে জানালার আড্ডাটা হয় বেশ। 

স্ট্যান্ডার্ড ফোর, বাঁচা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, ফার্মগেট, তেজঁগাও, ঢাকা

লেখা পাঠানোর ঠিকানা : [email protected]