কিশোর কবিতা
ফারুক নওয়াজের কিশোর কবিতা

নদী সুখী ছিল, বনও সুখী ছিল
সবুজ বনের পাশ ঘেঁষে ঘেঁষে
বয়ে গিয়েছিল নদী...
জলকলকল ঢেউয়ের নূপুর
দোল খেতো নিরবধি।
নদী সুখী ছিল, বনও সুখী ছিল
পাখিরাও ছিল সুখে—
খুশিহাসি ছিল জেলে-তাঁতি আর
চাষিদের মুখে মুখে।
নদী দিত জল; জলের পরশে
উর্বর ছিল মাটি...
বাহারি শস্যে সারা মাঠ যেন
সোনালি শীতলপাটি।
বিল্বতরুতে আকাশবেলের
স্বর্ণালি উলুঝুলু...
নিঝুম দুপুরে সুখী ডাহুকেরা
ঘুমে চোখ ঢুলুঢুলু।
মউলের বনে জোছনা ঝরত
নিশিপাখিদের ডাকে...
গাঙচিলগুলো ডানা ঝাপ্টাত
রুপোলি নদীর বাঁকে।
ঝাউবনে হাওয়া লুটোপুটি খেত
কাশবনে দিত দোলা...
ডাহরের ডাকে ঘুম ভেঙে কারো
মন হতো আলাভোলা।
নিশিসারসেরা উড়ে যেত দূরে
ছানাদের নীড়ে রেখে;
সুখী মানুষেরা কাটাত জীবন
প্রকৃতির মায়া মেখে।
আহা নদী আহা, আহারে সবুজ
বন আজ ইতিকথা—
সেই বন-নদী লীন করে দিল
শহুরে কৃত্রিমতা।
শহরের এই ডামাডোলে থেকে
দিনশেষে রাত এলে…
চলে যাই আমি সেই নদী-বনে
স্বপ্নের ডানা মেলে।
মায়া
হিজল ফুলের
পাপড়ি কুড়িয়ে
বুকের পকেটে রেখেছি যত্ন করে—
ভেসে ভেসে আসা
গন্ধরাজের
গন্ধ রেখেছি মনের শিশিতে ভরে।
নীলকণ্ঠের
রঙিন পালক
কুড়িয়ে পেয়েছি মহুয়া বনের শেষে—
বাতাসের শিস
শুনে-শুনে আমি
দাঁড়ালাম এসে পারুলগাছটি ঘেঁষে।
গাঙচিলেদের
টিউটিউ ডাকে
যাই নদীতীরে নদীর গন্ধ পেয়ে—
আমাকে দেখেই
সোনালি-রুপালি
রোদে ঝিলিমিলি ঢেউগুলো এলো ধেয়ে।
আকুলি বিকুলি
ঢেউয়ের আবেগ
রাখলাম গেঁথে হৃদয়ের ভাঁজে ভাঁজে—
ঘাসের গন্ধে
মাঠ ডেকে নিলো
দাঁড়ালাম গিয়ে মুক্ত মাঠের মাঝে।
কুড়িয়ে নিলাম
ফড়িঙের পাখা
ছড়ানো ছিটানো সোনালি সর্ষেদানা—
গোধূলি-গন্ধে
পথ ডেকে নিলো
পথে দাঁড়াতেই ডাকলো ডাহুকছানা।
ডাহুকছানার
চিউচিউ সুর
চেয়ে নিয়ে কিছু বুকের বাঁ-পাশে রাখি;
এত উপহার
কাকে দেবো আমি
ভাবতেই থাকি, ভাবতেই শুধু থাকি।
এমন সময়
ঝিঁঝি ডেকে ওঠে
জড়ালো মায়ায় জোনাকিরা বুনোপথে;
কী করে এখন
ঘরে ফিরি বলো
এই মায়া ছেড়ে পারছি না বের হতে।