গুচ্ছ ছড়া
ইমতিয়াজ সুলতান ইমরানের একগুচ্ছ ছড়া

টিভি দেখে ছোটদের
সারাদিন কার্টুন দেখি টিভিসেটে
পাতলুটা লিকলিকে মটু খুব বেঁটে।
মটু আর পাতলুর দেখি বাহাদুরি
বুদ্ধিতে দুজনের নেই কোনো জুড়ি।
মটু হয় দিশেহারা খিদে পেলে তার
পাতলুর আইডিয়া করে উপকার।
শিঙ্গাড়া পেলে মটু গপাগপ খায়
নিমিষেই উদ্দাম হিরো হয়ে যায়!
মটু আর পাতলুর বাহাদুরি দেখে
কার্টুনে ডুবে যাই পড়াশোনা রেখে।
শিঙ্গাড়া খেয়ে আমি হতে চাই মটু
বাবা খুব রাগ করে কথা কয় কটু।
দিনরাত পড়ে থাকি কার্টুন নিয়ে
আম্মুর বকা শুনি পড়া ফাঁকি দিয়ে।
কার্টুন ছবি দেখে পড়া যাই ভুলে
ম্যাডামের প্রিয় নই আমি ইশকুলে।
এক্সাম দিয়ে পাই নাম্বার কম
সকলের চোখে হই বাজে একদম!
মজা পেয়ে কার্টুনে বেশি দিলে ডুব
টিভি দেখে ছোটদের ক্ষতি হয় খুব।
আলসে খুকি নই আমি
আমি এখন স্কুলে পড়ি অনেকগুলো বই আমার
পড়ার সাথি খেলার সাথি সবাই প্রিয় সই আমার।
লিখতে পারি
আঁকতে পারি
গাইতে পারি গান আমি
সবাই আমায় আদর করে বাবা-মায়ের প্রাণ আমি।
রোজ সকালে জেগে শুনি ভোরের পাখি গান করে
হিমেল হাওয়ার পরশ পেয়ে আমার তখন প্রাণ ভরে।
বাংলা পড়ি
অঙ্ক করি
বইটা খুলি গ্রামারের
আমিও হই ভোরের পাখি শীত বসন্ত সামারের...।
আমি এখন স্কুলে পড়ি নেইকো মনে ভয় আমার
সকাল বিকাল রুটিনমতো পড়ালেখা হয় আমার।
নাচতে পারি
খেলতে পারি
আলসে খুকি নই আমি
জ্ঞানে গুণে এগিয়ে যাবো করবো ভুবন জয় আমি।
আজ আমি গুড বয়
খাবারের বেলা আমি করি বাছাবাছি
চকলেট শিঙ্গাড়া খেয়ে আমি বাঁচি।
বাবা খুব মায়া করে
ডিম দুধ আনে ঘরে
আমি যেন খাই
মটু হতে আমি রোজ শিঙ্গাড়া চাই।
পড়াশোনা করি আমি দিনরাত খেটে
রোজ যাই ইশকুলে তিনকিলো হেঁটে।
ঘরে পড়ি প্রাইভেট
তবু করি মাথা হেঁট
ভুলে যাই পড়া!
এক্সামে তেত্রিশ পাই শতকরা।
টেনেটুনে উঠি আমি ওপরের ক্লাসে
সকলেই রাগ করে এরকম পাসে।
কীযে আমি করি!
আরো বেশি পড়ি
চেয়ে উন্নতি
দিনে দিনে দুর্বল হয়ে যাই অতি!
লজ্জায় পড়ি আমি ইশকুলে গেলে
সকলের মাঝে আমি গর্দভ ছেলে!
টিচারের বকা খাই
পড়া কেন ভুলে যাই
কেন এই দশা?
পড়া ভুলে কানধরে করি ওঠাবসা!
একদিন ইশকুলে অজ্ঞান হলে
পুষ্টির প্রয়োজন ডাক্তার বলে।
সেদিনের পর থেকে
মামনির কথা রেখে
সবকিছু খেয়ে
আজ আমি গুড বয় সকলের চেয়ে।
ছেলেবেলার স্বপন দেখে
ভোরের বেলা মা আমাকে করছে ডাকাডাকি
কিচিরমিচির করছে তখন জেগে ওঠা পাখি।
মা ডেকে কয়, ওঠরে খোকা
আর আমাকে দিসনে ধোঁকা
পড়াশোনায় তোর ইদানীং বেড়ে গেছে ফাঁকি।
পড়ার শেষে, মা আমাকে স্কুলে নিয়ে গেলো
আমি নাকি দুষ্ট ভারি! স্যারের নালিশ পেলো।
মা তখনই শরম পেয়ে
আমার দিকে আড়ে চেয়ে
স্যারকে বলে, এই ছেলেটার জীবন এলোমেলো!
বিকেলবেলায় বাড়ি ফিরে কিসের খাওয়া-দাওয়া
ইশকুলের ব্যাগ রেখেই আমি হয়ে গেলাম হাওয়া।
খেলার মাঠে ছুটে গেলাম
পায়ে ভীষণ ব্যথা পেলাম
সাঁঝের বেলায় মায়ের আঁখি পথের দিকে চাওয়া!
মা আমাকে দেখতে পেলো, ব্যথা পেয়ে খোঁড়া
টেনে আমায় কোলে নিলো রাগ দেখিয়ে থোড়া।
শাসন করে কান ধরালো
নিজের হাতে স্নান করালো
আমার ব্যথায় সিক্ত হলো মায়ের নয়নজোড়া।
মা আমাকে ভালোবাসে হোক না যতই রাগী
আমার ব্যথা মায়ের মনে করলো ভাগাভাগি।
কীযে মধুর ছেলেবেলা
স্নেহ সবার জুটে মেলা
ছেলেবেলার স্বপন দেখে, ঘুমের মাঝে জাগি।