শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ফিচার

খুদে শিল্পীদের চোখে জয়নুল আবেদিন

আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২০, ২০:১৩

প্রচণ্ড অভিমান নিয়ে লাল টুকটুকে শাড়ি পরে বসে আছে এক নারী। হয়তো কারো জন্য অপেক্ষা করে বসেছিল, কিন্তু সে না আসায় অভিমান করেছে। কিংবা লালটিপ কেন এখনো তার হাতে এসে পৌঁছালো নাএ নিয়ে তার ভীষণ মুখ ভার! এমনই এক মুহূর্তকে ধারণ করে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ছবি একেঁছিলেন।

 

সত্যিই কি এমন কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই ছবিটি আঁকা হয়েছিল? যদিও এই চিত্রকর্মের নিগূঢ় রহস্য কেবল শিল্পাচার্যই জানতেন। আমরা দর্শকরা অনেকভাবে চিত্রকর্ম গ্রহণ করে নিলেও একজন শিশুর ক্ষেত্রে কিন্তু তা নয়!

একজন শিশু যখন তার কল্পনার অবয়ব কিংবা চিত্রপট তার মনে ধারণ করে তা হয় সাধারণের কল্পনার চাইতেও অনেক ঊর্ধ্বে! এতটা সহজ এতটা সরল ও স্পর্শীয় চিন্তা কেবল শিশুরাই করতে পারে।

 

আর এমনই এক সরল চিন্তার সাথে জয়নুল আবেদিনের চিত্রিত ‘আয়না ও নারী’ নামক চিত্রকর্মের সাথে নিজের চিত্রকর্মের অসাধারণ সমন্বয় দেখিয়েছে মনসিজ আর্ট একাডেমির খুদে শিল্পী নাফিস আব্দুল্লাহ জীয়ন। শুধু কি তা-ই! শ্রেয়শী সাহা ও সামারা আহাদ তাবিয়া তো একই চিত্রে জয়নুল আবেদিনের সাথে অংশগ্রহণ করেছে। তাদের চিন্তায় ও চিত্রকর্মে তারা ফুটিয়ে তুলেছে চমৎকার কিছু মুহূর্ত যেখানে তারা নিজেরাই শিল্পাচার্যের কাছে বসে ছবি আঁকা শিখছে। কেউ শিখছে শহরের কাক, কেউ বা আবার গাছ, কেউবা আবার মাটিতেই শুয়ে পড়ছে ছবি আঁকতে আঁকতে!

এদিকে ফাইজা ইসলাম ইউশা আবার জয়নুল আবেদিনের ‘পাইন্যার মা’ দেখতে দেখতে ভীষণ মগ্ন হয়ে পড়েছে। হয়তোবা এক মায়ের মুখ দেখে তার নিজের মায়ের মুখটাই মনে পড়ছে! ঐদিকে নামিরা বিনতে শামীম আবার এঁকেছে জানালা দিয়ে মেঠোপথে দুজন সাঁওতাল মেয়ের হেঁটে যাবার দৃশ্য। এটা দেখামাত্রই দৃশ্যটাকে ধারণ করে জয়নুল আবেদিন তাঁর বাসার ক্যানভাসে ছবিটি ফুটিয়ে তুলেছেন।

অন্যদিকে মাহরুস ইরম প্রদর্শনীতে শিল্পাচার্যের দুর্ভিক্ষের ছবি দেখতে দেখতে চোখের জল থামাতেই পারছে না! হয়তো তারই সমবয়সী এক শিশুকে এমন অসহায় এমন করুণ অবস্থায় দেখে প্রচণ্ড এক চাপা কষ্ট তাকে ঘিরে ধরেছে। 

জয়নুল আবেদিনের চিত্রকর্ম কখনো নিয়ে যায় গ্রামবাংলার মেঠোপথে, আবার কখনো বা তাঁর দুর্ভিক্ষের ছবি দেখে মন ছেয়ে যায় শূন্যতায়, হাহাকারে! তার আঁকা ছবি যেন কথা বলে! বিষয়টি নির্ভর করে শুধু দর্শনার্থীর অনুভূতির ওপর। একজন দর্শনার্থী চাইলে ঠিক ততটাই অনুভব করতে পারবেন যতটা হৃদয় দিয়ে দেখলে সেই সময়ে চলে যাওয়া যায়। 

অন্যদিকে শিশুরা তাদের চিত্রকর্মের মধ্য দিয়ে টাইম ট্র্যাভেল করতে পারে। তাই তারা যেকোনো সময় যেকোনো মুহূর্তে নিজেদেরকে সেখানে উপস্থিত করতে পারেযেখানে তারা নিজেদেরকে প্রকাশ করতে চায়!

কে জানে হয়তো আপনারই উপহার দেওয়া রংতুলির মধ্যদিয়ে আপনার শিশু টাইম ট্র্যাভেল করে  একদিন জয়নুল, এস এম সুলতান কিংবা নভেরা আহমেদ হয়ে উঠবে!

১০৬তম জন্মবার্ষিকীতে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের প্রতি শিশুদের পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা রইল।