বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দেশে গর্ভবতী মায়েদের এক-চতুর্থাংশ ডায়াবেটিক রোগী

আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:৫৯

পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী সুমাইয়া দ্বিতীয়বারের মত সন্তান-সম্ভবা। সন্তান ধারণের সাতাশ সপ্তাহের সময় জানা গেল তার ডায়াবেটিক। এ কথা শুনেই স্বামী আনসার আর সুমাইয়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। সেই থেকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী একেবারে নিয়ম মাফিক চলার পর নির্দিষ্ট সময়ে এক কন্যা সন্তান হয় তার। প্রসবের সময়ও বেশকিছু শারীরিক জটিলতা দেখা দেয় সুমাইয়ার। ডায়াবেটিক বেড়ে যায়। তার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। পরে ডাক্তারদের জোর চেষ্টায় মা-মেয়ে দু’জনই সুস্থভাবে বাড়ি যায়।

কিন্তু সুমাইয়ার মত অন্য সবার শারীরিক অবস্থা একই না। এই যেমন রাবেয়া বেগম। তেত্রিশ বছর বয়সী রাবেয়া প্রথমবারের মত মা হতে চলেছেন। কনসিভের ছয় সপ্তাহের মধ্যে জানা যায় যে রাবেয়ার ডায়াবেটিক। তারপরও দুই সপ্তাহ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই শারীরিক অবস্থার অবনতির কারনে দ্রুত তাকে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পরপরই এবরশন করাতে হয়।

সূত্র মতে দেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা প্রায় এক কোটি। অধিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে আরও এক কোটি। গর্ভবতী মায়েদের প্রতি চার জনের একজনই ডায়াবেটিক রোগী।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হসপাতালের এন্ড্রোক্রিনিউলোজী বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. ইমতিয়াজ মাহবুব বলেন, বিশৃঙ্খল এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন ডায়াবেটিস রোগের প্রধান কারন। এ বিষয়ে সরকারী এবং বেসরকারীভাবে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরী করতে হতে হবে যাতে করে এই নিরব ঘাতক মরণ ব্যাধি শরীরে বাসা বাঁধতে না পারে।

তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষকেই বিশেষ করে শিশুকাল থেকে স্বাস্থ্যসম্মত এবং পর্যাপ্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। আর এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বাবা-মা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে যাতে নতুন প্রজন্ম এ বিষয়ে জানতে পারে। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষই এ রোগ সম্পর্কে সচেতন নয়। তাই জন সচেতনতা তৈরী করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সোহেলুর রহমান বলেন, ডায়াবেটিসের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ করতে ও রোগীদের দীর্ঘস্থায়ী ঝুঁকি কমাতে ডায়াবেটিস শিক্ষার কার্যক্রমের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। এই শিক্ষা কার্যক্রম চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমকে আরও বেগবান করবে। ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী ও সর্বঘাতী রোগকে মোকাবেলা করতে রোগীদেরকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা অবশ্যই দিতে হবে। যাদের এখনও ডায়াবেটিস হয়নি তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষাদান, সঠিক, আর্দশিক জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস থেকে ৮০ শতাংশ মানুষকেই রক্ষা করা সম্ভব। এটাই হতে পারে রোগ প্রতিরোধের সর্বোত্তম পদ্বতি।

এত বিশাল সংখ্যক রোগীর যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা শুধুমাত্র সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য জনগণকে আরো সচেতন হতে হবে। গত ১২ অক্টোবর ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ‘ডায়াবেটিক প্যাশেন্ট এডুকেশন’ শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন