শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কচুরিপানা ও খাদ্য তালিকায় শাক-সবজি প্রসঙ্গে

আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:০৭

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। আজ যারা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব, সরকারি দপ্তরের বড়ো বড়ো কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন পর্যায়ের সফল ব্যক্তিত্ব এবং স্বয়ং রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীও কৃষিপ্রধান অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা কিংবা কেউ কেউ কৃষক পরিবারের সন্তান। কৃষিপ্রধান দেশের নাগরিক হিসেবে কৃষিপণ্য সংক্রান্তে আমাদের সকলেরই কম-বেশি ধারণা আছে।

গত সোমবার মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রীর কচুরিপানার কিছু করা যায় কিনা, সে বিষয়ে গবেষকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলার প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে যে রসিকতা, সমালোচনা ও মন্তব্য শুরু হয়েছে, তাতে করে আমার মনে হয় ভুলেই যাচ্ছি কচুরিপানা গরু-ছাগলের খাদ্য হলেও এমন বহু সবজি আছে, যা আমরা মানুষরাও খাই, আবার গরু-ছাগল-মহিষও খায়। আবার এমন অনেক লতাপাতা প্রকৃতির খাদ্য আছে, যা গরু খায় না কিন্তু মানুষ খায়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। মানুষ এবং পশুপাখি, জীবজন্তুর খাবারের ভিন্নতার মাঝেও বহু খাবার আছে, যা মানুষ, পশুপাখির একই।

কচুরিপানা মানুষ না খেলেও ধর্মীয় বিধান মতে কচুরিপানা কোনো হারাম খাদ্য নয়। পরিকল্পনামন্ত্রী নিজেও বলেছেন, ‘কচুরিপানার ফুল তো আমি নিজে খেয়েছি, বেসনে ডুবিয়ে মা ভাজত, এগুলো খুব মিস করি’। কচুরিপানা কিংবা কচুরিপানার ফুল অন্য কেউ আগে খেয়েছে কিনা সে বিষয় প্রকাশ হয়নি, তবে কৃষিপ্রধান দেশের দরিদ্র প্রকৃতির লোকজন যে কচুরিপানা কখনোই খায়নি, সে বিষয়েও জোর দিয়ে বলা যাবে না, ধরে নিলাম কেউ খায়নি, তবে গবেষণার খাতিরে এমন অনেক উদ্ভিদ-লতাপাতার কথা আসতেই পারে যা শুনলে আশ্চর্যজনক মনে হবে।

যারা গ্রামীণ পরিবেশে বড়ো হয়েছে এবং কৃষিপণ্যের সঙ্গে পরিচিত আছে তাদের জানা থাকবে যে, গ্রামের জমিতে এমন বহু উদ্ভিদ আছে, যেগুলোকে শাক হিসেবে ধরে নিয়ে খাওয়া হয়, যেমন : বুত্তা, আম খুদুরি (কুমিল্লার আঞ্চলিক ভাষা) যেগুলো মূলত গম-সরিষার জমিতে আগাছা হিসেবে বড়ো হলেও শাক হিসেবে তুলে গ্রামে খাওয়া হয় এবং গ্লুই, তারা, চুহাট্টা (চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা) এবং আরো কয়েক প্রজাতির শাক, সচরাচর বাজারে পাওয়া না গেলেও পাহাড়ি অঞ্চল কিংবা কৃষিজমি থেকে সংগ্রহের মাধ্যমে খাওয়া হয়। সেই সঙ্গে কচুর পাতা, লতি, কচুর ডগা, কুমড়োর পাতা, ডগা, লাউয়ের পাতা, ডগা, সরিষা ফুল, লাউ-কুমড়োর ফুল, চাষ করা কিংবা ময়লাযুক্ত পানিতে বড়ো হওয়া কলমিশাক, লালশাক, বিভিন্ন গাছের মধ্যে লতাপাতাযুক্ত পটল, পালংশাক, মুলাশাকসহ অসংখ্য লতাপাতা প্রকৃতির খাদ্য আছে যা গ্রাম-পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় থাকলেও গরু-ছাগলও এসব খায়, এসব খাবার কি গরু-ছাগল আগে খাওয়া শুরু করেছে নাকি মানুষ আগে থেকে খেতো, সে বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক সমাধান নেই।

কচুরিপানা খাওয়ার জন্য আমিও বলছি না, গবেষণা হবে কিনা তা গবেষকদের ও কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ব্যাপার। তবে আনুষ্ঠানিক গবেষণার বাইরে বহু লতাপাতা আছে, যা মানুষ বহুকাল আগে থেকেই খাচ্ছে। এখনো গ্রামাঞ্চলের মানুষের শাক-সবজির তালিকায় জমি থেকে তুলে আনা বহু লতা-পাতা, খাওয়া সূত্রে যার বিভিন্ন নামকরণ করা হয়েছে। এসব লতাপাতা, ডগার অনেকগুলোই গরম পানিতে সিদ্ধ করার মাধ্যমে খাবারের উপযোগী করা হয়। কৃষিপ্রধান দেশের সরকারি কৃষি গবেষণা সংস্থা নিজেদের প্রয়োজনে যেকোনো কৃষিজ পণ্য নিয়ে গবেষণা করতে পারে, গবেষণা করার জন্য দাবি তুলতে পারে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেকোনো কিছু হঠাত্ শুনলেই সমালোচনায় মেতে উঠে লোকজন, কোন্ প্রসঙ্গে একটা কথা এসেছে, কেন এসেছে, বক্তা কিভাবে কথাটা বলেছে, সে সব বিষয় যাচাই না করে আংশিক বক্তব্য কিংবা শুধু একটা বাক্য নিয়েই শুরু হয় সমালোচনার পালা, বহু মিডিয়াও মানুষের হুজুগে মন-মানসিকতাকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা লোটার জন্য অতিরঞ্জিত শিরোনাম করে, যেখানে মানুষজন শিরোনাম দেখেই মন্তব্য করে বসে থাকে। আলোচনা, সমালোচনা করার মতো বহু সমস্যা এবং সম্ভাবনাময় বিষয় থাকলেও মানুষের সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। নেই কাজ তো খই ভাজ, এটাই বাংলাদেশের বহু মানুষের দৈনন্দিন কাজ, যা কাম্য নয়।

লেখক : শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড

ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম)

ইত্তেফাক/জেডএইচ

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন