শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ভাতের সঙ্গেই মিলবে পুষ্টি উপাদান জিংক

আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:৩৭

দেশে পাঁচ বছরের নিচে এমন বয়সী ৪৪ শতাংশ শিশু জিংক স্বল্পতায় ভুগছে। আবার বিভিন্ন বয়সী ৫৭ শতাংশ নারীর রয়েছে জিংক স্বল্পতা। ১৫ থেকে ১৯ বছরের শতকরা ৪৪ ভাগ মেয়ে জিংকের অভাবে খাটো হয়ে যাচ্ছে। এর সমাধান খুঁজতেই ভাতের মাধ্যমে জিংকের অভাব দূর করতে ৮ জাতের জিংকসমৃদ্ধ ধান উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, অধিক পরিমাণে জিংক থাকা সত্ত্বেও এই ভাতের স্বাদ ও রঙয়ের কোনো তারতম্য হয় না।

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বাংলাদেশের উচ্চ ফলনশীল ধানের সঙ্গে পরাগায়ন ঘটিয়ে জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাতগুলো উদ্ভাবন করা হয়েছে। সাধারণ জাত, এগুলো জিএম ধানও নয়। এ ধান থেকে কৃষকরা নিজেরাই বীজ তৈরি করে রোপণ করতে পারবেন।

বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মীর্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবন করেছে বিনাধান ২০। এটি জিংকসমৃদ্ধ। এর চালের রঙ লালচে ও বাদামি। প্রতি কেজি চালে ২৬ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম জিংক রয়েছে। এ জাতটি চাষাবাদ উচ্চ ফলনশীল ধানের আবাদের মতোই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটি হাইব্রিড জাতের জিংক ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। বিইউ হাইব্রিড ধান-১ নামে এই জাতে মানবদেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় আয়রন ও জিংক রয়েছে। এটি সুগন্ধি গুণসম্পন্ন। প্রতি কেজি চালে ২২ মিলিগ্রাম জিংক রয়েছে।

বেসরকারি সংস্থা হারভেস্টপ্লাস বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার ড. মো. খায়রুল বাশার বলেন, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এ পর্যন্ত ১৬টি বায়োফরটিফাইড ক্রপ জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর মধ্যে জিংকসমৃদ্ধ ধানের জাত ৮টি, জিংক ও আয়রন সমৃদ্ধ মসুরের জাত ৩টি, জিংকসমৃদ্ধ গমের জাত একটি।

তথ্য অনুযায়ী, রোপা আমন মৌসুমের জন্য দুটি জিংকসমৃদ্ধ জাত ব্রি ধান৬২ এবং ব্রি ধান৭২ (স্বল্প জীবনকাল) উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট।ব্রি ধান৬২ এর প্রতি কেজি চালে প্রায় ২০ মিলিগ্রাম জিংক রয়েছে। হেক্টরপ্রতি এর ফলন ৪ থেকে সাড়ে ৪ টন। বছরের অন্যান্য মৌসুমেও এ ধানের আবাদ করা যায়। ব্রি ধান৭২ এর প্রতি কেজি চালে জিংক রয়েছে ২২ দশমিক ৮ মিলিগ্রাম। হেক্টরপ্রতি ফলন ৫ দশমিক ৭ থেকে ৭ দশমিক ৫ টন। এ ধান চাষাবাদে প্রচলিত জাতের চেয়ে কম পরিমাণে ইউরিয়া সার লাগে। ইনস্টিটিউটের পরিচালক (গবেষণা) কৃষিবিদ তমাল লতা আদিত্য জানান, জিংকসমৃদ্ধ আরও নতুন জাত উদ্ভাবনে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। এদিকে বোরো মৌসুমের জন্য ব্রি ধান৬৪ উদ্ভাবন করা হয়েছে, যার প্রতি কেজিতে ২৫ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম জিংক রয়েছে। হেক্টরপ্রতি এর ফলন ৭ টন। চাষাবাদ উচ্চ ফলনশীল বোরো ধানের মতো। ব্রি ধান৭৪ এর প্রতি কেজি চালে জিংক রয়েছে ২৪ দশমিক ২ মিলিগ্রাম। হেক্টরপ্রতি ফলন ৮ টনেরও বেশি। এ জাতটি মধ্যম মানের ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী। ব্রি ধান২৮ এর বিকল্প হিসেবে সম্প্রতি উদ্ভাবন করা হয়েছে ব্রি ধান৮৪, এটিও জিংকসমৃদ্ধ।

গতকাল রাজধানীতে পুষ্টি নিরাপত্তায় বায়োফরটিফাইড শস্য বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় বলা হয়, বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম জিংকসমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, দেশের পুষ্টি নিরাপত্তায় বায়োফরটিফাইড ক্রপের কোনো বিকল্প নেই। তাই এটিকে উত্সাহিত করতে গেলে যেমন গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, তেমনি কৃষক পর্যায়ে আবাদের জন্য ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে হবে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সরকার যেভাবে আইন করে লবণে সোডিয়াম মেশানো বাধ্যতামূলক করেছে, ঠিক এভাবে যদি জিংকসমৃদ্ধ ধান চাষে কৃষকদের উত্সাহিত করে তাহলে ভালো ফল আসবে। এ ছাড়া সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের সময় যদি জিংকসমৃদ্ধ ধান-চাল ক্রয় করা হয় তবে কৃষকদের মধ্যে এ ধান আবাদে আগ্রহ বাড়বে।

ইত্তেফাক/আরকেজি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন