বরিশালের এক মহকুমা শহর পিরোজপুরে কেটেছে আমার শৈশব। বহু স্মৃতি জড়িয়ে আছে, হিন্দু আর মুসলমান আমরা হাতে হাত রেখে চলেছি সব কাজকর্মে। খুব করে মনে পড়ে মাঘ মাসের মাঘোত্সবের কথা। মনে পড়ে, আমাদের পিরোজপুরে মাঘ মাসের ১১ তারিখে ব্রাহ্ম সমাজের মাঘোত্সব উদযাপিত হতো মোক্তারদের চেম্বারদের ঠিক উলটোদিকে। সেই মেলা হতো তিন দিন ধরে—প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে সেই মেলায় যেতাম।
মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতেই ছিল দেলবাহারের ছোট্ট একটি দোকান। এক পয়সা দিয়ে দেলবাহার কিনতাম আর তা খেতে খেতে মেলায় ঢুকতাম। সে তো দারুণ আনন্দ। দেলবাহারের স্বাদ অবিকল রসগোল্লার মতো। মেলায় দেখেছি কৃষিপণ্য, হস্তশিল্প সামগ্রী, পুতুলনাচ, শরীরচর্চা, নাচ-গান। সন্ধ্যার পরক্ষণেই হতো আতশবাজি উত্সব।
আরও পড়ুন: গোলাপ গ্রামে ফুলের সমাহার
বাবার মুখে শুনেছিলাম, মাঘোত্সব রাজা রামমোহন রায় প্রবর্তিত ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বীদের একটি বাত্সরিক উত্সব।
মাঘ নিয়ে ক্লাসে পণ্ডিত স্যার বলতেন, মাঘের শীতে বাঘ পালায়; মাঘ মাসে আমের মুকুল আসে; খনার বচনে রয়েছে—যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্যি রাজার পুণ্যি দেশ; মাঘের পূর্ণিমাকে বলা হয় মাঘী পূর্ণিমা।
পণ্ডিত স্যারের বলা সেই কথাগুলি আজো কানে বাজে। কোথায় হারিয়ে গেল মাঘোত্সব!
ইত্তেফাক/এএইচপি