আমার অফিসের সামনে এক চিলতে পার্ক আছে। ছোট্ট ত্রিকোণাকার সেই পার্কে আছে কয়েকটি দেবদারুগাছ। পার্কে মনুষ্য প্রবেশ করতে দেখিনি কোনোদিন, মজবুত লোহার শিক দিয়ে বেষ্টনী দেওয়া। পার্কটি বৃক্ষ আচ্ছাদিত, রকমারি গাছের সঙ্গে আছে কয়েকরকম পাতাবাহার।
পার্কটিকে ঘিরে সারা দিন মুখর থাকে চারপাশ, ধোঁয়াময় থাকে, চলে চায়ের কাপে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা। সকালে অফিসে ঢোকার আগে কদাচিত্ আমিও দাঁড়াই, চেনাজানা কারো আমন্ত্রণে চা খাই, আমিও আমন্ত্রণ জানাই কাউকে কাউকে।
কোনো কোনো দিন বিষাদ লাগে সবকিছু। জানালার ফাঁক গলে একটু রোদ এলে সিট ছেড়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াই, দৃষ্টি মেলে দেই আকাশে। কেন জানি না, মতিঝিলের আকাশে প্রায় বারো মাসই আমি চিল দেখি, মধ্যদুপুরে ‘চিইও চিইও’ কান্নার সুর ভেসে আসে। যেহেতু আট তলার ওপর আমার অফিস, তাই কান্না খুব স্পষ্ট শোনা যায়, চিলের এমন সকরুণ আর্তি আগে কখনো শুনিনি। বিকেলের দিকে অনেক চিল একসঙ্গে ভেসে বেড়ায় আকাশে, তখন কিন্তু কান্নার লেশমাত্র থাকে না, একই জায়গায় ঘুরে ঘুরে ওড়ে।
আরও পড়ুন: গোলাপ গ্রামে ফুলের সমাহার
অনেকদিন এমনও হয় ছ’টার পরেও কাজের প্রয়োজনে অফিসে থাকতে হয়। এমনই একদিন, তখন বর্ষাকাল; অফিস থেকে নামতে নামতে সাতটা বেজে গেছে, তার আগেই এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে, রাস্তা ভেজা, জায়গায় জায়গায় এক-আধটু পানি জমেছে। অফিস থেকে নেমে রাস্তায় দাঁড়াতেই হালকা একটা গন্ধে আবিষ্ট হয়ে গেলাম, চেনা নয়, অনুমানে মনে হলো ফুলের গন্ধও নয়। আমার পাশেই ছিলেন ডিজিএম নাজ আপা। নাজ আপা বললেন—দেবদারু গাছের ঘ্রাণ, ওরা রাতের বেলা সুগন্ধ ছড়ায়। কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়ে তিনি এই ঘ্রাণ পেয়েছেন পাহাড়ি রাস্তায় রাতের বেলা।
বহুদিন ভেবেছি, মানুষ কেন অফিস অঞ্চলে কিংবা আবাসিক ভবনের সম্মুখভাগে সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে দেবদারুগাছ লাগায়? সেদিন উত্তর পেলাম। এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই অনেক দিন পর।
ইত্তেফাক/এএইচপি