দাম্পত্য জীবন সব সময় সুখের হয় না। বিবাহ পরবর্তীতে জীবনের বিবেচনায় কাবিননামা একটি আইনি সুরক্ষা দলিল। বিয়ের আগে এই ব্যাপারটি ভালোভাবে না বুঝার কারণে পরবর্তীতে দেনমোহর ও কনেপক্ষ থেকে তালাক দেওয়ার মতো আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। বিবাহ ও দাম্পত্য জীবনের তাৎপর্যের কারণে কাবিননামাকে সরকারি দলিলের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
মুসলিম শরীয়াহ আইন অনুযায়ী পবিত্র কালেমা পাঠ করে সাক্ষীদের সম্মুখে অভিভাবকের অনুমতিতে কাজী সাহেব বিয়ে পড়িয়ে দিলেই বৈধ বিয়ে বলে গন্য হবে। কিন্তু আইনগত সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশে প্রচলিত মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিয়ে সম্পন্ন করতে কাবিননামার প্রয়োজন হয়। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর কাজীর আইনগত দায়িত্ব হলো স্বামী ও স্ত্রীর উভয় পক্ষকে কাবিননামার বিষয়বস্তু ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়ে দুই পক্ষকে ওই কপি সরবরাহ করা।
অনেক সময় কাজী সাহেব অথবা যেকোনো পক্ষের মনের মধ্যে কোনো বদ মতলবের কারণে কাবিনামায় ছয়নয় করা হয়। এজন্য কাবিনামায় সই করার আগেই বিষয়বস্তু ভালোভাবে বুঝে শুনে করতে হবে। বিবাহ ও দাম্পত্য জীবনের তাৎপর্যের কারণে এটিকে সরকারি দলিল মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কাবিননামায় মোট ২৫ টি বিষয় সন্নিবেশ করা হয়েছে। এই ২৫ টি বিষয়ের মধ্যে ১৫, ১৮ ও ১৯ নম্বর কলামটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ।
এই দলিলের ১৫ নম্বর ক্রমিক বলা হয়েছে- ‘বিয়ের সময় দেনমোহরের কোনো অংশ পরিশোধিত হয়েছে কিনা, যদি হয়ে থাকে তাহলে সেটার পরিমাণ কতটুকু’ এই অংশ কাজী সাহেবের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে বরপক্ষ যদি সম্পুর্ণ পরিশোধিত লেখা হয় তবে পরবর্তীতে এই দেনমোহর নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।'
আবার ১৮ নম্বর কলামটি মেয়ে পক্ষের জন্য আর বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শরীয়াহ আইনমতে স্ত্রীর হাতে স্বামীকে তালাক দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু মুসলিম পারিবারিক আইনমতে, এই ১৮ নম্বর কলামটি স্ত্রীর পক্ষ হতে স্বামীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই কলামের ঘরটিতে যদি কাজী অথবা বর পক্ষের প্রতারণার কারণে কনেপক্ষ পরবর্তীতে তালাক না দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন, তবে স্ত্রীপক্ষ যেকোনো কারণে স্বামী তালাক দেওয়ার অধিকার থাকবে না। এজন্য কনেপক্ষ পরবর্তীত বিষয় চিন্তা করে ‘হ্যাঁ’ লিখতে পারেন।
ইত্তেফাক/কেকে