কোভিডের দীর্ঘ সময়টাতে চেনাজানা জীবনটা হঠাৎই বদলে গেছে। প্রতিদিনের যাপিতজীবনে আনন্দ-বেদনার সেই চিত্র আর নেই। সেখানে মানুষকে সম্মুখীন হতে হচ্ছে অজ্ঞাত ভয়, উদ্বেগ, অনিশ্চয়তা ও নানান সংকটের নজিরবিহীন পরিস্থিতির সাথে। করোনাকালে শুধু শারীরিকভাবেই সুস্থ থাকা প্রয়োজন নয়, যত্ন নিতে হবে মনেরও। এ জন্য জটিল কিছু করার দরকার নেই, ছোট ছোট কিছু বিষয় মনে চলুন দেখবেন মানসিক অস্থিরতা, বিষন্নতা কাটিয়ে কাটিয়ে উঠবেন।
১.লকডাউনে ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তায় পরেননি এমন মানুষ খুব কমই আছেন। সারাক্ষণ মানসিক অস্থিরতার মধ্যে না থেকে মনকে শান্ত রাখতে হবে। মানসিক ধৈর্য এ সময়টাতে খুব প্রয়োজন। মনের উপর থেকে চাপ কমাতে ডায়েরি লিখতে পারেন। সহজ করে মনের কথাগুলো লিখে রাখুন। কী করতে ইচ্ছে করছে, কেন মন খারাপ হচ্ছে, কেনই-বা এসময়টাতে ভয় গ্রাস করে ফেলছে-সব লিখে রাখুন ডায়েরির পাতায় পাতায়। নিয়ম করে প্রতিদিন লিখুন, সে দিনের যে সময়টাতে আপনার পছন্দ হয় কিংবা অবসর মেলে। এক সপ্তাহ লেখার পর দেখবেন মন কিছুটা হলেও শান্ত হয়েছে। অস্থিরতা কম লাগছে।
২.মন ভালো রাখতে শরীরচর্চার বিকল্প নেই। কারণ ভগ্ন মন, শরীরের উপর ভর করে। এতে শরীরও ঙেঙ্গে পরে। অন্যদিকে শরীরচর্চার ফলে করোনাকালে আপনি থাকবেন ফিট। রোগ-ব্যধির এই অনিশ্চিত সময়টাতে শরীরকে চাঙ্গা রাখতে প্রতিদিন ব্যায়াম করা অত্যন্ত প্রয়োজন। সারাক্ষণ মানসিক চাপে থাকলে তা শরীরের উপরে প্রভাব ফেলে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। তাই শরীরের যত্ন নিন। পুষ্টিকর খাবার খান, ব্যায়াম করুন।
৩.সবসময় কোভিড-১৯ যেনো আপনার চিন্তার কেন্দ্রবিন্দুতে না থাকে। সময়টা নিঃসন্দেহে আশঙ্কার, সংকটের ও অনিশ্চয়তার। তাই বলে সবসময় অসুখবিসুখ নিয়ে ভাববেন না। মন উদ্বিগ্ন হলে ধ্যান করুন। অশান্ত পরিস্থিতিতে নিঃশ্বাসের ব্যায়াম করুন। শারীরিক পরিশ্রম করলে আমাদের শরীরে এমন কিছু হরমোনের ক্ষরণ হয়, যা মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। জীবনের অনেক সুন্দর দিক আছে, সেদিকে মনোযোগ দিন।
৪.জীবনে ‘না’ বলতে পারাটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সব কিছুতে হ্যাঁ-হ্যাঁ বলার কিছু নেই। না বললেই আপনি মন্দ মানুষ হয়ে যাচ্ছেন না। কোভিডের সময়টাতে আপনি হয়তো অনেককেই সহযোগিতা করেছেন। সেটা আর্থিক-মানসিক দুই দিক থেকেই। এখন যদি অন্যের সমস্যা শুনলে আপনার নিজেরই সমস্যা বৃদ্ধি পায় তাহলে সোজাসাপটা ‘না’ বলে দিন। মনকে বিশ্রাম দিতে জানতে হবে। নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছাগুলোকে প্রাধান্য দিন, দেখবেন বিষণ্নতা কাটিয়ে উঠতে পারছেন।
৫.ঘরবন্দি থেকে থেকে দমবন্ধ হয়ে আসাটা স্বাভাবিক। প্রয়োজন মুক্ত বাতাসে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়া। শরীরে ভিটামিন ডি-এর প্রয়োজনে একটুআধটু গায়ে রোদ লাগাতে হবে। পার্কে হাঁটতে যেতে দ্বিধা থাকলে বাড়ির আশপাশে হাঁটতে পারেন কিংবা বাড়ির ছাদে।
৬.কোভিডের কারণে নিত্যদিনের রুটিনে পরিবর্তন চলে এসেছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অথবা অনেকে কর্মহীন হয়ে পরায় ঘুমটা এলামেলো হয়ে গেছে। সকালে যখন ইচ্ছে উঠলাম, দুপুরে অনেকটা ঘুমিয়ে নিলাম, অনেক রাত জেগে নেটফ্লিক্সে চালিয়ে বসে থাকলাম। ঘুমের অনিয়ম করে এগুলো করলে স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। রাতে ৮ ঘণ্টা অবশ্যই ঘুমানোর চেষ্টা করুন। ঘুমনোর এবং ঘুম থেকে ওঠার সময়টা নির্দিষ্ট করে ফেলুন। দেখবেন শরীর-মন দুই-ই ভালো থাকবে।
ইত্তেফাক/আরএম