বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বদলে যাচ্ছে নারীর পোশাকের ধারা

আপডেট : ২৩ মার্চ ২০১৯, ০২:২৪

বদলে যাচ্ছে নারীর পোশাকের ধারা। ডিজিটাল দুনিয়ায় সারা বিশ্বের ফ্যাশন এখন হাতের মুঠোয়। ভারতীয়-পাকিস্তানি কিংবা পশ্চিমা বিশ্বের যে কোনো ফ্যাশন দ্রুতই চলে আসছে হাতের নাগালে। ফলে নারীরাও তাল মিলেয়ে বদলে ফেলছেন নিজেদের পোশাক। এ ক্ষেত্রে ডিজাইনাররাও তাল মিলেয়ে দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে ফিউশনধর্মী পোশাক তৈরি করছেন। দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা ট্র্যাডিশনাল সালোয়ার-কামিজে আনছেন ব্যাপক পরিবর্তন। কামিজের জায়গা দখল করে নিচ্ছে টপস, ফতুয়া, কুর্তি, শার্ট, টি-শার্ট, প্লাজো, লেঙ্গিস, পেন্সিল প্যান্ট, নানা ধরনের পায়জামা কিংবা ওয়ান পিসগুলো। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের মেয়েরা এখন হিজাব পরার দিকেও ঝুঁকছে। যে কোনো পোশাকের সঙ্গে হিজাব পরা এখন ট্রাডিশন। নানা ধরনের ফ্যাশনেবল হিজাব এখন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের মার্কেটগুলোতে চোখে পড়ে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সারাবিশ্বেই এখন ফ্যাশনের দুটি ধারা, যা ট্র্যাডিশনাল ও ফিউশন নামে পরিচিত। বাংলাদেশের মেয়েরাও এ দুই ধারার পোশাক পরতেই পছন্দ করেন। একদল সব সময় ট্র্যাডিশনাল ধারা বজায় রাখার চেষ্টা করে। ফ্যাশন দুনিয়ায় যাই ঘটুক না কেন, এতে তাদের কিছুই আসে-যায় না। আরেক দল আছে, যারা সময়ের সঙ্গে নিজের বসন-ভূষণে পরিবর্তন পছন্দ করেন। চলতি হাওয়ায় গা ভাসাতে আনন্দ পান তারা। এ দলের বেশিরভাগই তরুণ। আমাদের এখানেও সেই ধারা অব্যাহত আছে।

জানা যায়, ষাটের দশক থেকে আশির দশক পর্যন্ত শিশুরা পরিধান করতো ফ্রক আর হাফপ্যান্ট। কিশোরী মেয়েরা পরতো সালোয়ার-কামিজ সঙ্গে দোপাট্টা। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েরা পোশাক হিসেবে পরতো শাড়ি। তবে এ ধারা বদলাতে শুরু করে আশির দশকে। সেই পরিবর্তনটাই এখনও হচ্ছে ব্যাপকভাবে।

বর্তমানে নারীদের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে ঘরে ও বাইরে। ফলে ১২ হাতের শাড়ি পরে দ্রুত চলাফেরা আর সম্ভব হয়ে উঠছে না। আর দীর্ঘসময়ের ট্র্যাডিশনাল সারোয়ার-কামিজের মধ্যেও থাকতে চাইছে না তারা। সে কারণে ডিজাইনারাও এ যুগের কর্মব্যস্ত নারীদের কথা মাথায় রেখে ট্র্যাডিশনাল পোশাকের সঙ্গে ভারতীয় পোশাক বা পাশ্চাত্যের পোশাকের সংমিশ্রণে তৈরি করেছেন ফিউশনধর্মী সব পোশাক।

আড়ং-এ কেনাকাটা করতে আসা রাশনা বলেন, আমি তাগা বা ওয়ানপিসগুলো পরতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। ভার্সিটিতে যেতে ওয়ানপিস বা তাগাই পরতে ভালো লাগে। তা ছাড়া একটি পছন্দসই থ্রিপিস কিনতে সর্বনিম্ন আড়াই হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা লাগে, সেখানে একটা ওয়ানপিস কিনতে ১২শ থেকে ১৬শ টাকায় পাওয়া যায়। আর ওয়ান পিসগুলো ল্যাঙ্গিস, প্যান্ট বা প্লাজোর সঙ্গেও পরা যায়। আর এটা দেখতে ফ্যাশনেবল।

জাতিসংঘের একটি পার্টনার সংগঠনে কর্মরত সাফিয়া কাকন বলেন, ট্র্যাডিশনাল থ্রিপিস বিভিন্ন উপলক্ষে পরা হয়। আর সব সময় প্যান্টের সঙ্গে একটা টপস পরে নেই। সেটা হতে পারে একটু লম্বা বা শর্ট ঝুলের। তবে কর্মজীবী মেয়েরা এখন সবই পরছে। বিশেষ করে রাজধানীতে।

বিক্রেতা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, সব ধরনের পোশাকই সমান তালে বিক্রি হয়। যারা সালোয়ার-কামিজ কিনেন তারা টপস বা ওয়ানপিস কিনেন না। আর যারা টপস কিনেন তাদের দেখা যায় সব ধরনের পোশাক কিনতে। আর উত্সবে কমবেশি বড়-ছোট সবাই শাড়ি কিনে থাকেন। তবে ঈদ-পূজো কিংবা ফাল্গুন-বৈশাখে শাড়ি বিক্রি বাড়ে।

অঞ্জন’স ফ্যাশন হাউজ এর প্রধান নির্বাহী শাহীন আহম্মেদ বলেন, আমাদের দেশে শাড়ির ব্যবহার আগের থেকে কমেছে। তবে উত্সবে নারীরা এখনো শাড়ি পরছেন। সালোয়ার কামিজের জায়গায় কিছু পরিবর্তন এসেছে। যেমন কামিজটা হয়তো একটু ছোট হয়ে ফতুয়া কিংবা টপস বা সিঙ্গেল কামিজ হয়েছে। এখন মেয়েরা বাজেটের কথা চিন্তা করেই একটা পায়জামা বা প্যান্টের সঙ্গে কামিজ বা টপস পরছে, তেমনি ওড়না অনেক সিঙ্গেল কামিজের সঙ্গেও ব্যবহার করতে পারছে। তাই থ্রিপিসের ব্যবহার কিছুটা কমেছে।

রঙ বাংলাদেশে’র প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাস বলেন, ডিজিটাল দুনিয়ায় ফ্যাশনটা এখন হাতের মুঠোয়। ভারত-পাকিস্তান-ইউরোপে কি ধরনের ফ্যাশন চলছে সব ঘরে বসেই দেখা যায়। ফলে দ্রুতই বদলে যাচ্ছে ফ্যাশন জগত্টাও। এখন বিশ্বে ফ্লোরাল ফ্যাশন সবত্রই চলছে। মেয়েদের পোশাকেই পরিবর্তনটা বেশি আসছে।

ফ্যাশন হাউজ বিবিয়ানা’র স্বত্বাধিকারী লিপি খন্দকার বলেন, ট্রেডিশনাল পোশাক শাড়ি ও সালোয়ার কামিজের ট্রেন্ড আর আগের মতো নেই। শাড়িটা হয়ে গেছে উত্সবের পোশাক। আগে আমরা স্কুলের কোনো শিক্ষিকাকে শাড়ি ছাড়া কল্পনাই করতে পারতাম না। এখন সেটার পরিবর্তন হয়েছে। টপস, ফতুয়া এখন বয়স্ক নারীরাও পরছে। আগে রঙিন শাড়ি-পোশাক বেশি বয়সীরা পরতো না। এখন সেই ধারাটাও বদলেছে। তার মতে, ফ্যাশন সব সময় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পরিবর্তনটা হয় ধীরে ধীরে। তাই সেটা হঠাত্ করে চোখেও পড়ে না। কয়েক বছর পরে গিয়ে হয়তো মনে হয়, বড় একট পরিবর্তন ঘটেছে।

আরেকটা দিক বদলাচ্ছে, সেটা হলো কাট-প্যাটার্ন। শুধু আমাদের দেশে নয়, বহির্বিশ্বে ফ্যাশনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

ইত্তেফাক/আরকেজি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন