বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগও হবে পিএসসির মাধ্যমে

আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ০৭:৫৩

তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগেরও দায়িত্ব পাচ্ছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। সম্প্রতি সরকার ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেডের সকল নিয়োগে সুপারিশ করার জন্য পিএসসিকে প্রস্তাব করেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এই প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে পিএসসি। তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির সকল নিয়োগ কোন প্রক্রিয়ায় করা যায়—সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী সপ্তাহে বিশেষ সভায় বসছে পিএসসি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আইম নেছারউদ্দিন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে ইত্তেফাককে বলেন, সাংবিধানিকভাবে প্রজাতন্ত্রের সকল নিয়োগের দায়িত্ব পিএসসির। তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগের জন্য শুধু পিএসসির পরামর্শকরণ প্রবিধানমালার সংশোধন করলেই চলবে। মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব বাস্তবায়নের সক্ষমতা রয়েছে পিএসসির। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে কমিশন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগের জন্য পিএসসিকে আলাদা অনুবিভাগ খোলার কথা বলা হয়েছে। কেননা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এতদিন আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ দিত। এতে আপত্তি জানায় অর্থ মন্ত্রণালয়। আউট সোর্সিংয়ে জনবল নিয়োগ ব্যয়বহুল। তাছাড়া নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে এক ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে আগামীতে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির জনবল নিয়োগ দেওয়া যায় কিনা—সে বিষয়ে সুপারিশ করে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ প্রস্তাব আকারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি কর্ম কমিশনে পাঠিয়েছে।

প্রস্তাবনা অনুযায়ী, সরকারের সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির সকল নিয়োগ আগামীতে পিএসসির সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগ সম্পন্ন করতে পারবে। পিএসসির বিশেষ সভায় সরকারের প্রস্তাব অনুমোদন পেলে দুই জন সদস্যর নেতৃত্বে ঐ অনুবিভাগ চালু করা হতে পারে। কেননা ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য আলাদা বিভাগ আছে পিএসসিতে। একইভাবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জন্য এক জন করে সদস্য দায়িত্ব পালন করতে পারেন। চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বর্তমান ১৪ সদস্যর প্রত্যেকেই কোনো কোনো বিভাগের দায়িত্ব পালনের মধ্যদিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

এদিকে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগের কার্যক্রম শুরুর আগে পিএসসির পরামর্শকরণ প্রবিধানমালার সংশোধন করা লাগবে। যদিও স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এটি সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পিএসসির বিশেষ সভায় সরকারের প্রস্তাব অনুমোদনের পর মূলত নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করতে পারবে কমিশন। এজন্য প্রাথমিকভাবে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগের জন্য শূন্য পদের চাহিদাপত্র পাঠাবে পিএসসি। মন্ত্রণালয়গুলো থেকে শূন্যপদের চাহিদা পেলে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে কমিশন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি চাকরিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগের লক্ষ্যে ভিন্ন ভিন্নভাবে সারা বছর নিয়োগ প্রক্রিয়া চলতে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়োগের আবশ্যিকতা থাকলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অদক্ষ কর্মকর্তার কারণে নিয়োগ প্রদান করা সম্ভব হয় না। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়োগের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরেও ভুলের কারণে তা বাতিল করার নজির রয়েছে। এ জাতীয় ঘটনার শিকার হয়ে চাকরির বয়সসীমা পার করে কেউ কেউ চিরতরে সরকারি চাকরি করার সুযোগও হারাচ্ছেন। এছাড়া নিয়োগের ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও স্বজনপ্রীতির কারণে মেধাবীরা চাকরি না পেয়ে অযোগ্যরা চাকরি পেয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। পিএসসি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিলে একদিকে যেমন মেধাবীরা চাকরি পাবেন তেমনি চাকরি প্রত্যাশীদেরও হয়রানি কমবে। কেননা বর্তমানে পিএসসির প্রতি পরীক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের আস্থা-বিশ্বাস তৈরি হয়েছে।

এসব ব্যাপারে পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক ইত্তেফাককে বলেন, সংবিধান, আইন ও বিধি অনুযায়ী রাষ্ট্র ও সরকারের যে কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কমিশন তার সাধ্যমতো প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।

ইত্তেফাক/জেডএইচ