মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বাংলাদেশের স্যানিটেশন শ্রমিকরা

আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ২২:১৩

বাংলাদেশের স্যানিটেশন শ্রমিকদের বিপজ্জনক কর্ম পরিবেশের মাঝে কাজ করতে হয়। ফলে স্বাস্থ্য এমনকি জীবনের জন্য মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে তারা। বাংলাদেশের অধিকাংশ সুইপার দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে এবং প্রায়শই কোনো সরঞ্জামাদি ও কোনো ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিয়ে কাজ করছে। সোমবার প্রকাশিত ‘স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও স্যানিটেশন শ্রমিকদের মর্যাদা’ শীর্ষক রিপোর্টে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের স্যানিটেশন শ্রমিকদের ব্যাপারে নানা তথ্য উঠে আসে।  

বিশ্ব টয়লেট দিবসকে সামনে রেখে ওয়াটারএইড, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), বিশ্ব ব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) যৌথভাবে রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে। স্যানিটেশন শ্রমিকদের নির্মম কর্ম পরিবেশের কথা উল্লেখ করে তা পরিবর্তনের উপর বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়েছে রিপোর্টটিতে।

রিপোর্টে বলা হয়, উন্নয়নশীল বিশ্বে এখনও স্যানিটেশন শ্রমিকদের ভয়াবহ অবস্থার চিত্র চোখে পড়ার মতো। স্যানিটেশনের বিশাল লম্বা চেইনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুরুষ ও নারী স্যানিটেশন শ্রমিকরা কাজ করে। মানুষের টয়লেটে যাওয়া থেকে শুরু করে বর্জ্য নিষ্পত্তি বা পুনঃব্যবহার করা পর্যন্ত কাজে নিয়োজিত থাকে এই স্যানিটেশন শ্রমিকরা। টয়লেট পরিষ্কার করা, গভীর কূপ ও সেপটিক ট্যাংক খালি করা, সুয়ারেজ লাইন ও ম্যানহোল পরিষ্কার করা এবং পাম্পিং ষ্টেশন ও ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট পরিচালনা করা স্যানিটেশন শ্রমিকদের কাজের মধ্যে পড়ে। এসব শ্রমিকরা কোনো সরঞ্জামাদি ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিয়ে মনুষ্য বর্জ্য নিষ্কাশনের কাজে নেমে পড়ে, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য চরমভাবে বিপজ্জনক। 

রিপোর্টে আরও বলা হয়, সুয়ারেজ লাইন ও সেপটিক ট্যাংকে টক্সিক গ্যাস যেমন- অ্যামোনিয়া, কার্বন মনোঅক্সাইড ও সালফার ডাইঅক্সাইড থাকায় শ্রমিকরা অজ্ঞান হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুর মুখে পতিত হন। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে বিনা বেতনে কাজ করতে হয় আবার কখনও কখনও কিছু শ্রমিকদের কাজের বিনিময় অর্থ না দিয়ে খাবার দেয়া হয়। অনেক বাংলাদেশসহ অনেক দেশে স্যানিটেশন শ্রমিকদের কাজকে সামাজিকভাবে হেয় বা কলঙ্কজনক কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। আর তাই শ্রমিকরা প্রায়ই রাতে কাজ করে যেনো অন্যান্যদের থেকে লুকিয়ে থাকা যায়। 

আরও পড়ুন: লিবিয়ায় বিমান হামলায় ৫ বাংলাদেশি নিহত

এ প্রসঙ্গে ওয়াটারএইড’র সিইও টিম ওয়েইনরাইট বলেন, ‘স্যানিটেশন শ্রমিকদের বিপজ্জনক কর্ম পরিবেশের মাঝে কাজ করতে হয়, যা তাদের স্বাস্থ্য এমনকি জীবনের জন্য মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া উপযুক্ত সরঞ্জামাদি, সম্মান এবং জীবন রক্ষাকারী কাজে নিয়োজিত হওয়ায় সে অনুযায়ী মর্যাদা পাওয়ার পরিবর্তে তাদেরকে বৈষম্য ও দারিদ্র্যের শিকার হতে হয় যা সত্যিই হতাশাজনক। দুর্বল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও বিপজ্জনক কর্ম পরিবেশের কারণে প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে , যা আমরা মোটেই চলতে দিতে পারি না।”

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সেকটরাল পলিসিজ ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর অ্যালেটে ভ্যান লিউর বলেন, ‘স্যানিটেশন শ্রমিকদের ঘিরে নীতি, আইন ও নিয়মের অভাব আছে। যেসব জায়গায় তারা বসবাস করে তা অপর্যাপ্ত। পাশাপাশি, প্রয়োজনীয় আর্থিক ও আনুষঙ্গিক প্রয়োগকারী প্রক্রিয়ার অভাবও লক্ষ্যণীয়।”

বিশ্ব ব্যাংকের গ্লোবাল প্র্যাকটিস বিভাগের ডিরেক্টর জেনিফার সারা বলেন, ‘স্যানিটেশন শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে সবাইকে এগিয়ে এসে কাজ করার এখনই সময় । স্যানিটেশন শ্রমিকরা যেসব সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা বোঝার জন্যই এই রিপোর্টটি প্রকাশ করা হলো যা এই সমস্যা থেকে উত্তরণের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। 

রিপোর্টে আরো ব্যাখ্যা করা হয়েছে, কিভাবে কি করলে বর্তমান চিত্রের পরিবর্তনের পাশাপাশি কার্যকরী উপায়ে তা সমাধান করা যেতে পারে। বিশ্ব ব্যাংকের ‘আরবান স্যানিটেশন প্রোগ্রাম’ এর আওতায় স্যানিটেশন শ্রমিকদের উন্নয়নে কাজ চলছে।  

ইত্তেফাক/এসইউ