মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাসের পর এবার পণ্য পরিবহন বন্ধের ডাক

আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:৩৫

নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবি তুলে দেশের পরিবহন সেক্টরে ধর্মঘটের নামে ফের নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। অথচ আইনটি পাস হওয়ার পর পরিবহন মালিকরা সংবাদ সন্মেলন করে আইনটিকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। গত বছর আইনটি পাস হলেও এটি কার্যকর হয় গত ১ নভেম্বর। এরপর দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় দিয়ে গত রবিবার থেকে এই আইনে মামলা-জরিমানা করা শুরু করে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে গত সোমবার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বাস ধর্মঘট শুরু করেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এর একদিন পরই সারাদেশে পণ্য পরিবহন বন্ধের ডাক দিয়েছে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।


এদিকে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে বাস ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে সারাদেশে। দেশের প্রায় সকল পণ্য ট্রাকে পরিবহন করা হয়। ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেলে এর প্রভাব সরাসরি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ওপর পড়বে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে যাবে। বিশেষ করে পণ্য পরিবহন বন্ধ হলে সবজির বাজারে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে করে সবজি রাজধানীতে নিয়ে আসা হয়।

আজ থেকে ধর্মঘটের ডাক

গতকাল মঙ্গলবার ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মা?লিক সমিতির তেজগাঁও কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ স্থগিত করে তা সংশোধনসহ নয় দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্য প?রিবহন ব?েন্ধর ঘোষণা দিয়েছে বাংলা?দেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মা?লিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। আজ বুধবার সকাল ৬ থেকে তারা আর পণ্য পরিবহন করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের আহবায়ক মো. রুস্তম আলী খান। সংবাদ সম্মেলনের পরই পরিবহন শ্রকিকরা তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে রেলগেট পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় সড়কে যানচলাচল বন্ধ থাকে।

জানা গেছে, আইনটি পাশ হওয়ার পর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ একে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তবে এ ব্যাপারে রুস্তম আলী খান বলেন, ‘আমরা স্বাগত জানাইনি। আমরা শুরু থেকেই এই আইনের কিছু ধারা সংশোধনের দাবি করেছি, যা সংবাদ সম্মেলনেও জানিয়েছি।’ প্রসঙ্গত, গত বছর অক্টোবরের শেষের দিকে একই দাবিতে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন ও পণ্য পরিবহন মালিক ঐক্য পরিষদ পৃথক কর্মবিরতি পালন করেছিল। সেসময় এক ছাত্রীসহ পথচারীদের মুখে পোড়া মবিল লাগিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা।

ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান সড়ক পরিবহন মন্ত্রীর

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল বিকালে গাজীপুরে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় বলেছেন, ধর্মঘট করে মানুষকে কষ্ট দেবেন না। সড়ক পরিবহন আইন মেনে চলুন। এ আইন কারো ক্ষতি করবে না। জনস্বার্থে এ আইন করা হয়েছে। সড়কের যে আইন হয়েছে সে জন্য আমি পরিবহন মালিক, শ্রমিক, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ জানাবো আইনটি মেনে চলুন। এ আইন সড়কের শৃংখলার জন্য, কাউকে শাস্তি দেওয়ার জন্য নয়।

এদিকে সড়ক পরিবহন আইনে কোনো সমস্যা থাকলে মানুষকে জিম্মি করে নয় টেবিলে বসে সমাধানের আহবান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম। গতকাল ১৪ দলের এক সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে যদি কারো কথা থাকে মালিক হোক, শ্রমিক হোক টেবিলে বসে সমস্যার সমাধান করুন। ধর্মঘট করে, মানুষকে জিম্মি করে আন্দোলন আমরা সমর্থন করি না।

ট্রাক শ্রমিকদের কর্মবিরতির ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী জানিয়েছেন, এ আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। ২১ ও ২২ নভেম্বর ফেডারেশনের বৈঠক হবে। সেখান থেকেই আমাদের কর্মসূচি কী হবে জানিয়ে দেওয়া হবে।

পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ৯ দফা

সংবাদ সম্মেলনে ধর্মঘট ডাকা সংগঠন বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহবায়ক রুস্তম আলী খান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য শুধু চালক বা শ্রমিক একা দায়ী নয়, এর পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তাই শুধু চালক বা শ্রমিকদের দোষারোপ করলে চলবে না। এসময় তিনি ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:সড়ক পরিবহন আইন স্থগিত করে মালিক শ্রমিকদের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জরিমানা বিধান ও দন্ড উল্লেখ করে আইন সংশোধন করা, সড়ক সংশ্লিষ্ট যতগুলো কমিটি রয়েছে সেগুলোতে শ্রমিক প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, সড়ক দুর্ঘটনাজনিত কোনও মামলায় চালক আসামি হলে তা অবশ্যই জামিনযোগ্য ধারায় হতে হবে, প্রকৃত দোষী নির্ণয় করতে মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের সংযুক্ত করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে হবে, সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় কোনও গাড়ির মালিককে হয়রানি করা যাবে না ইত্যাদি।

বাস ধর্মঘটে মানুষের দুর্ভোগ

গত সোমবার খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের ১৪ জেলাসহ ১৬ জেলায় বাস ধর্মঘট পালিত হয়। গতকাল মঙ্গলবারও ১০ জেলায় বাস চলেনি। পিইসি ও ইবতেদায়ী পরীক্ষা চলাকালীন এ ধর্মঘটের কারণে শিশুরা পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে ও ফিরতে দুর্ভোগ পোহায়। পাশাপাশি এ সব জেলার সাধারণ মানুষদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে যারা ঢাকা থেকে সেসব জেলায় গিয়েছেন, তাদের ফিরতে গিয়ে পথে পথে নাস্তানাবুদ হতে হয়। কারণ শ্রমিকরা কোন ঘোষণা না দিয়েই হুট করে গত সোমবার ধর্মঘট শুরু করে। কবে নাগাদ এই ধর্মঘট প্রত্যাহার হবে- সে বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।

এ প্রসঙ্গে খুলনা বিভাগীয় শ্রমিক ফেডারশনের যুগ্ম সম্পাদক মোর্তজা হোসেন বলেন, ১০ জেলায় পরিবহন শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি পালন করছেন। নতুন আইনের অনেক ধারার ব্যাপারে শ্রমিকদের আপত্তি রয়েছে। সরকার সমাধানের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।

ধর্মঘট যৌক্তিক, বললেন বিএনপি নেতা

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, বাংলা?দেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আন্দোলন যৌাক্তিক। তাদের দাবি মেনে নেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

ইত্তেফাক/এসি