মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান, বেরিয়ে আসছে নানা তথ্য

আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০১৯, ০২:০৭

প্রশাসনে দুর্নীতিগ্রস্তদের সন্ধান করতে গিয়ে এখন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসছে। দুর্নীতিসহ রাজনৈতিক সুপারিশে চাকরি পাওয়া থেকে শুরু করে পদ-পদবি বাগিয়ে নেওয়ার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী শুরু হওয়া দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের ধারাবাহিকতায় প্রশাসনেও শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন ও সচিব মো. ফয়েজ আহমেদ যৌথভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেন, যা অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু সংস্থাও অনুসন্ধান শুরু করে।

অনুসন্ধানকাজে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে অন্তত একজন সচিবের দুর্নীতির সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। রূপপুর বালিশকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে ঐ সচিবের নাম এখন সামনে এসেছে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে মঙ্গলবার ইত্তেফাককে বলেন, ঐ সচিব এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। তার নিজের উপস্থিতিতে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত ঐ সচিব একটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকার সময়ে তার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার বিদেশযাত্রার প্রাক্কালে ২ হাজার ডলার দিয়েছিলেন তার সামনেই।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত ঐ সচিব বলেছিলেন, ‘স্যার, দেশের বাইরে যাচ্ছেন। অনেক খরচ-খরচা আছে, এটা সামান্য কিছু; একটু সঙ্গে করে নিয়ে যান।’ সচিবালয়ে এই আলোচনা এখন বেশ চাউড়।

অন্যদিকে মুন্সিগঞ্জ জেলা ও ঢাকায় কর্মরত ২৪তম ব্যাচের দুই কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছে চাকরি পাওয়া থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি বাগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে। টাকার ছড়াছড়ি আর রাজনৈতিক তদবিরের সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

২০০৩ সালে পিএসসি চেয়ারম্যানের কাছে একটি সমালোচিত ভবনের তালিকায় এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার একজন আসামির (তত্কালীন ঢাকার এমপি) লিখিত সুপারিশ রয়েছে আলোচ্য দুই কর্মকর্তার মধ্যে একজনের পক্ষে। তালিকায় অবশ্য দুই জনের নাম রয়েছে। এই দুই জন কর্মকর্তার মধ্যে একজন দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি জেলার যুবদল নেতার ভাই। এরা দুই জনই একটি অখ্যাত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই সঙ্গে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সনদ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এসব কর্মকর্তা ঢাকার সহকারী কমিশনার ভূমি থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সব পদে চাকরি করেছেন। একজন ঢাকার এডিসি হতে দেনদরবার করার প্রক্রিয়ায় চাকরি পাওয়ার বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি। এখন একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত আছেন।

সূত্রগুলো নিশ্চিত করছে, মাঠ পর্যায়েও এরকম বেশকিছু কর্মকর্তার নাম পাওয়া যাচ্ছে। আদর্শিকভাবে যেমন তারা সরকারের বিরোধী তেমনি আর্থিকভাবেও সততার ঊর্ধ্বে নয়। কিন্তু তারা এখন আওয়ামী লীগের প্রতি এতটাই প্রীত ভাব দেখাচ্ছেন যে, আওয়ামী লীগ বিভাজন করে রাখাসহ নানা কায়দায় নিজ স্বার্থ হাসিল করে চলেছেন। এসব কর্মকর্তার নাম ও পারিবারিক অবস্থান নিয়ে তদন্ত চলছে।

ইত্তেফাক/বিএএফ