শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ইসির বিধি-বিধান বিএনপির জন্য লাভজনক: তথ্যমন্ত্রী

আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২০, ১৯:২২

আসন্ন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিধি-বিধান বিএনপির জন্য লাভজনক। কারণ আমাদের দেশে মন্ত্রী বা এমপিবৃন্দ প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন না।’

মঙ্গলবার বিকালে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি খোরশেদ আলম খসরুর নেতৃত্বে কমিটির সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলে মন্ত্রী। এ সময় তথ্যসচিব কামরুন নাহার উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ আছে কি না-সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনে তো ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ আছেই এবং সেটি বিএনপির পক্ষে। কারণ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত পৃথিবীর সবচাইতে বড় গণতান্ত্রিক দেশ। যেখানে ভোটারের সংখ্যা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। সেই দেশে মন্ত্রীরা সরকারি প্রটোকল বাদ দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারে। যে পর্যায়েরই মন্ত্রী হোক না কেন? সংসদ সদস্যরা তো পারেই। সংসদীয় গণতন্ত্রের সূতিকাগার যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও পৃথিবীর অন্যান্য সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশেও মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা বাদ দিয়ে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারে। আমাদের দেশে আমরা পারছি না। এটি বরং বিএনপিকে সুবিধাজনক অবস্থান দিয়েছে। সুতরাং প্লেয়িং ফিল্ডটা তাদের পক্ষে।’

বিএনপি প্রার্থীর ওপর হামলার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান বলেন, ‘প্রথমত বিষয়টি পুরোপুরিভাবে না জেনে মন্তব্য করা সমীচীন নয়। দ্বিতীয়ত আমি মনে করি পরিবেশকে ঘোলাটে করার জন্য একটি মহল সক্রিয়। এটি সেই পক্ষের কারসাজি কি না? সেটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আর বিএনপির প্রথম থেকেই প্রচেষ্টা হচ্ছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। সুতরাং নানা ধরণের ঘটনা প্রবাহের মধ্যদিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যে প্রক্রিয়া, এটি সেই প্রক্রিয়ারও অংশ কি না-সেটিও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’

দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদকসহ প্রথম আলোর বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার বিষয়ে মন্তব্য চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এর মাধ্যমে এটিই প্রমাণিত হয় যে, দেশে আইন এবং আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করছে। তাদের জামিন পাওয়ার মাধ্যমে এটিই প্রমাণিত হয়েছে।’

আরো পড়ুন: পশ্চিম রেলে লুটপাটের সুনামি

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘চলচ্চিত্রের বন্ধ্যাত্ব কেটে গেছে এবং মধ্যবিত্ত আবার হলমুখী হয়েছে। চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের চলচ্চিত্র নির্মাতা-শিল্পী ও কুশলীরা মেধাবী। অতীতেও তারা মেধার স্বাক্ষর রেখেছে এবং তা অব্যাহত থাকবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’

মন্ত্রী এ সময় চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। চলচ্চিত্রের জন্য বাৎসরিক অনুদান ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা উন্নীত করা, চলচ্চিত্র প্রতি অনুদানের পরিমাণ ৬০ থেকে ৭৫ লাখ করা। অনুদানের চলচ্চিত্রের হলে মুক্তিপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা, চলচ্চিত্র শিল্পীকল্যাণ ট্রাস্ট গঠনে অগ্রগতির কথা জানান তিনি।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতাপূর্ব পূর্ব বাংলায় যখন ভারতীয় ও পাকিস্তানে নির্মিত চলচ্চিত্রের বাজার, সেই প্রেক্ষাপটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী হিসেবে ১৯৫৭ সালে এফডিসি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এফডিসি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বাংলা সিনেমার বিকাশ ঘটে। সেই থেকে আমাদের এই জনপদে কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। আমাদের দেশে বহুকালজয়ী শিল্পীরও আর্বিভাব হয়েছে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে আবার শুধু স্বর্ণযুগই ফিরে আসবে না, আমরা যেন বিশ্ববাজারেও স্থান করে নিতে পারি, সেজন্যও আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’

সভার শুরুতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরুর নেতৃত্বে সদস্যবৃন্দ তথ্যমন্ত্রী ও তথ্যসচিবকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। খোরশেদ আলম খসরু এ সময় প্রতিটি চলচ্চিত্র নির্মাণ শেষে বিএফডিসি থেকে সেন্সর বোর্ডকে প্রদেয় ছাড়পত্রের জন্য নবনির্ধারিত এক লাখ টাকা ফিস কমানোর আবেদন জানান। চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে সরকার গৃহীত নানা পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। 

সমিতির কার্যকরী কমিটির ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি কামাল মো. কিবরিয়া (লিপু), সহ-সভাপতি মো. শহীদুল আলম, সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল ও মো. আলিম উল্যাহ, কোষাধ্যক্ষ মেহেদী হাসান সিদ্দিকী মনির, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মোরশেদ খান হিমেল, কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্যবৃন্দ এম.এন. ইস্পাহানী, রশিদুল আমিন হলি, জাহিদ হোসেন, আলমগীর আলম জোয়ার্দ্দার রানা (এ.জে. রানা), মোহাম্মদ হোসেন, ইয়ামিন হক ববি, কামাল হাসান, অপূর্ব রায়, মো. নাদির খান, আজিজ আহমেদ পাপ্পু ও মো. আসিকুর রহমান নাদিম, সদস্যবৃন্দ মোহাম্মদ হোসেন জেমী, জাহাঙ্গীর আলম, হুমায়ন কবীর সুজন, কাজী মো. ইসলাম মিয়া প্রমুখ সভায় অংশ নেন।

ইত্তেফাক/এএএম