শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

যক্ষ্মায় দিনে মারা যায় ১২৯ জন

আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:৩২

‘হামার কইলজা পচিয়া গেইচে, ওষুধে আর ভালো হইবে না, আর বাইচপার ন...’—কথাগুলো বলছিলেন যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত চিলমারীর দিনমজুর রমজান আলী। বয়স আনুমানিক ৫০। রমজান আলীর যক্ষ্মা শনাক্ত হয়েছে আরো ৩ মাস আগে। কিন্তু তার পরিবারে যাতে কেউ আক্রান্ত না হয়, সে কারণে তিনি শহরে এসে কাজ করছেন। রমজান মিয়ার ধারণা যক্ষ্মা হলে মানুষ বাঁচে না।

তাই নিজের চিকিৎসা না করিয়ে পরিবারের জন্যে নিভৃতে কাজ করে তিনি মরে যেতে চান। তাই গ্রাম ছেড়ে তার শহরে আসা। রাজধানীর শ্যামলীতে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি তার অসুখের কথা লুকিয়ে কাজ করছিলেন। ঠান্ডার কারণে তার কাশি বেড়ে যাওয়ায়, কফ ফেলে মাটি চাপা দিতে গিয়ে তার সহকর্মী দিনমজুর একজন দেখে ফেলেন। তবে রমজান বিষয়টি তার সহকর্মীদের কাছে গোপন করে বলেন, ‘হামার দাতের গোড়া থাকিয়া রক্ত পড়চে।’ তবে বিষয়টি আড়ালে এই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যক্ষ্মা চিকিত্সায় সফলতা আসলেও বাংলাদেশ এখনো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি। তাই আমাদের এক্ষেত্রে যে সকল চ্যালেঞ্জ আছে, তা নিয়ে আরো বেশি কাজ করতে হবে। যক্ষ্মার চিকিত্সা বাংলাদেশ সরকার বিনামূল্যে করছে। এটা একটা বড়ো সাফল্য এবং প্রশংসার বিষয়। তবে অনেকে এ তথ্য জানেন না। এ তথ্য প্রচারে আমাদের আরো উদ্যোগ নিতে হবে।

তারা বলছেন, যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে ১২৯ জন। বছরে এ সংখ্যা ৪৭ হাজার। এই বিপুল সংখ্যক রোগী মোকাবিলায় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি দাতা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সকল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্টেক হোল্ডারদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। একই সাথে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে ওষুধের গুণগত মান ও সঠিক রোগী শনাক্ত করা জরুরি। তবে এ নিয়ে প্রচারণা বাড়ানো ও সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে ৯৭৮ জন। এরমধ্যে প্রতিদিন ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় শিকার হচ্ছে ১৬ জন। আর প্রতিদিন মারা যায় ১২৯ জন। যক্ষ্মারোগী শনাক্ত করতে ‘জিনএক্সপার্ট’ মেশিন দরকার ১ হাজার ২০০টি। সেখানে সারা দেশে চালু আছে মাত্র ২২১টি যক্ষ্মা শনাক্তকরণ যন্ত্র। এ বছরে এই সংখ্যা ৪০০ হবে বলে জানা গেছে। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ২ লাখ ৯২ হাজার ৯৪২ জন যক্ষ্মারোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৩৫০ জন শিশু।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এমএ ফয়েজ বলেন, শুধু চিকিত্সা ও চিকিত্সক দ্বারা যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এ জন্য দরকার সামাজিক বিষয়গুলোতে জোর দেওয়া। যক্ষ্মা চিকিৎসায় সফলতা থাকলেও মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ এখনো যক্ষ্মায় ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি। নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করলে আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা আছে তা পূরণ করা সম্ভব হবে।

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম বলেন, এটা সত্যি যে, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে আশাব্যঞ্জক কাজ হচ্ছে। কারণ জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল বেসরকারি সংস্থা সফল অংশীদারিত্বে কাজ করছে। তবে এখন আমাদেরকে রোগ প্রতিরোধে আরো বেশি কাজ করতে হবে। এজন্য প্রচারণা বাড়ানো ও সচেতনতা সৃষ্টিতে আরো কাজ করতে হবে।

ইত্তেফাক/আরকেজি