শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রতিষেধক মিলতে পারে এক মাসের মধ্যে

আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০২:০৩

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রভূমি চীনের হুবেই প্রদেশে এক দিনে নতুন রোগীর সংখ্যা অনেকটা কমে এলেও মৃত্যুর মিছিল থামেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এ ভাইরাসের সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১২৮ জনে, যাদের মধ্যে ১০ জন ছাড়া বাকি সবার মৃত্যু ঘটেছে চীনে।

জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে আটকে পড়া ডায়মন্ড প্রিন্সেস প্রমোদতরির দুই প্রবীণ যাত্রী সংক্রমণে মারা গেছেন। ভাইরাসের কারণে ইয়োকোহামা বন্দরে জাহাজের ডকে এই প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দেশ হিসেবে ইরানের তেহরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কোম শহরে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে দুই বৃদ্ধ মারা গেছেন। তাদের নমুনা পরীক্ষায় করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা ভাইরাতে আক্রান্ত হয়ে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া নতুন করে দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে আরো ২২ নাগরিক। এ নিয়ে দেশটিতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৪ জনে। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক আসতে দেড় বছর লাগার কথা জানালেও যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, আগামী এক মাসের মধ্যেই প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের প্রতিষেধক পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দেশটির মূল ভূখণ্ডে ৩৯৪ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭৪৯ জন। ২৫ জানুয়ারির পর বৃহস্পতিবারই সবচেয়ে কম নতুন রোগী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৫৭৬ জনে। আর অন্তত ২৮টি দেশ ও অঞ্চলে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে এ পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এ ভাইরাসে।

এদিকে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ভাইরাস ঠেকাতে নেওয়া ব্যবস্থা হয়তো পর্যাপ্ত ছিল না। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রতিষেধক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জেনার ইনস্টিটিউটের প্রফেসর সারাহ গিলবার্ট জানিয়েছেন, তিনি ও তার দল করোনা ভাইরাস থেকে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ বিস্তার রোধে দ্রুত কাজ করছেন। শিগগিরই ইতালিতে এই প্রতিষেধক প্রস্তুত করা হবে। এছাড়া পরীক্ষামূলকভাবে (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল) এর অন্তত এক হাজার ডোজ ব্যবহার করা হবে। সারাহ গিলবার্টের এই দলটিই ২০১২ সালে ছড়িয়ে পড়া মার্স (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম) ভাইরাস মোকাবিলায় গবেষণা করেন। একই গোত্রের হওয়ায় করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরিতে আগের অভিজ্ঞতাই কাজে লাগাচ্ছেন তারা। ইতিমধ্যে ইতালিয়ান ওষুধ প্রস্তুতকারক অ্যাডভেন্ট এসআরএল করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক উত্পাদনে রাজি হয়েছে। ফলে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলছে কাজ।

সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, করোনা ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় কি না তা এখনও প্রমাণিত নয়। ফলে মাস্ক ব্যবহার করেই যে করোনা ভাইরাসের বিপদ থেকে দূরে থাকা যাবে—সে নিশ্চয়তা নেই। বরং সংক্রমণ ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে হাতের মোবাইল ফোনটিকেই তালিকায় সবার আগে রাখছেন সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মেডিক্যাল সেবার পরিচালক কেনেথ ম্যাক।

এদিকে, পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল সেতু নির্মাণে কমপক্ষে ৭১৩ জন চীনা কর্মী নিয়োজিত আছেন। এর মধ্যে ৩৩২ জন কর্মী চীনা নববর্ষ পালনের জন্য নিজ দেশে গিয়েছিলেন। কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত সতর্কতার কারণে তারা সেখানে আটকা পড়েছেন। পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজে ফিরতে পারছেন না। তবে তাদের কেউই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হননি বলে জানিয়েছেন পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের। তিনি আরো জানান, এই চীনা কর্মীরা শিগগির কাজে না ফিরতে পারলে পদ্মা সেতুর কাজের গতি কমবে। প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের জানান, ‘চীনের উহানে পদ্মা সেতুর হেড অফিস। কাজেই কর্মচারীরা উহানের আশপাশেরই বাসিন্দা। ছুটি কাটাতে যারা দেশে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ৩৩২ জন এখনো কাজে ফিরতে পারেননি। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে না ফিরলে পদ্মা সেতুর কাজের গতি কমে যাবে।’

অপরদিকে করোনা ভাইরাস পরীক্ষায় বাংলাদেশকে ৫০০ পিসিআর কিট দিয়েছে চীন। গতকাল সকালে এসব কিট বুঝে পেয়েছেন বলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন। করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয় পলিমেরেজ চেইন রি-অ্যাকশন বা পিসিআরের মাধ্যমে। পিসিআর করতেই এসব কিট ব্যবহার করা হবে বলে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান।