বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘ডিজিটালাইজেশনে ব্যর্থ ক্যাবল অপারেটরদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার’

আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০৬

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, 'নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যে সব ক্যাবল অপারেটর তাদের অপারেটিং সিস্টেম ডিজিটালাইজড করতে ব্যর্থ হবে, তাদের বিরুদ্ধে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।' রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, 'আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এজন্য একবছরের বেশি সময় লাগা সমীচীন নয়, যদিও আলোচনা করেই সময় দেব। কিন্তু, ইচ্ছা থাকলে এক বছরে মধ্যেই তা করা সম্ভব। আর যাদের ইচ্ছা থাকবে না, তারা পারবে না। তখন আমরা প্রয়োজনে নতুন কেবল অপারেটর লাইসেন্স দেবো, যারা ডিজিটালাইজড হয়ে আত্মপ্রকাশ করবে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা এর আগে তাদের (ক্যাবল অপারেটরদের) সঙ্গে বৈঠক করে এবছরের ৩০ জুন ডিজিটালাইজেশনের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম । ঢাকা ও চট্টগ্রাম গত ডিসেম্বরের মধ্যেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি করা হয়নি। কেন হয়নি, সে জবাব তাদেরকেই দিতে হবে। তাগাদা দেয়া হয়েছে। অতীতে যেমন টেলিভিশনের সিরিয়াল ঠিক করতে পারেনি, পরে ঠিক করা হয়েছে। এখানেও সরকার বদ্ধপরিকর, যারা পারবে তারা করবে, আর যারা পারবে না এবং সরকারের আদেশ মানতে ব্যর্থ হবেন তাদের ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।'

টেলিভিশনসহ সম্প্রচার ক্ষেত্রে যে শৃঙ্খলা দরকার ছিল সেটি হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই দেশে বেসরকারি খাতে টেলিভিশনসহ সম্প্রচার জগতের যাত্রা শুরু হয়। গত এগারো বছরে এই খাতে ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। কিন্তু এটির পাশাপাশি সম্প্রচারের ক্ষেত্রে যে শৃঙ্খলা দরকার ছিল, বিশেষ করে টেলিভিশন সম্প্রচারের ক্ষেত্রে যে শৃঙ্খলা ও ডিজিটালাইজেশন প্রয়োজন ছিল, সেটি হয়নি।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী আমাকে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার পর আমরা স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই আপনাদের সবার সহযোগিতায় সেই শৃঙ্খলা অনেকটাই ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি, এখন টিভিগুলোর সিরিয়াল ঠিক রাখার জন্য দেন দরবার করতে হয় না। কিন্তু ক্যাবল অপারেটরদের সঙ্গে কয়েক দফা বসে তাদেরকে আমরা ডিজিটালাইজেশনের জন্য যে অনুরোধ জানিয়েছিলাম, তারাই বলেছিল গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে অপারেটিং সিস্টেম ডিজিটাল করা সম্ভবপর হবে। কিন্তু সেটি তারা করতে পারেনি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে কেবল অপারেটিং সিস্টেম ডিজিটাল করা হয়েছে।'

দেশ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডিজিটাল হলেও কেবল অপারেটিং সিস্টেম ডিজিটাল না হওয়ার পেছনের কারণকে ‘মানসিকতার অভাব’ বলে চিহ্নিত করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অপারেটরদের কিন্তু এলাকা নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে। কিন্তু তারা সেটি মানেন না, তারা এককভাবে আবার কয়েক ক্যাবল অপারেটর যৌথভাবে অন্য এলাকায় গিয়ে সম্প্রচার করে। ফলে নানা জটিলতা এমনকি এ নিয়ে বিরোধ অনেক সময় সাংঘর্ষিক রূপও নেয়। আবার বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বন্ধের আইন আমরা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারছি না ডিজিটাল পদ্ধতির অভাবে।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টেলিভিশন গ্রাহক আছে। এখান থেকে ক্যাবল অপারেটররা প্রচুর আয় করে। কিন্তু সরকারের খাতায় ট্যাক্স-ভ্যাট জমা হচ্ছে খুব কম। ডিজিটাল পদ্ধতি হলে এই ফাঁকি দেয়া সম্ভব হবে না। আমরা হিসাব করে দেখেছি যদি এই ক্যাবল অপারেটিং সিস্টেম ডিজিটাল হয়, তাহলে সরকার এ খাতে ক্যাবল অপারেটরদের কাছ থেকে বছরে ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট পাবে, যেটি এখন পাচ্ছে না।’

‘এক ক্যাবল অপারেটরের সাথে আরেক কেবল অপারেটরের দ্বন্দ্ব, রশি টানাটানি এবং একই সঙ্গে তাদের ইচ্ছমতো বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ফিস নেয়া, তারপর নিজেরা আবার অনেক সময় টেলিভিশন চ্যানেলের মতো কাজ করা- এই বিশৃঙ্খলা এটি কোনোভাবেই সমীচীন নয়’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘আমরা কিছুটা শৃঙ্খলা আনতে সক্ষম হয়েছি, দেশ এবং জাতির স্বার্থে পুরোপুরি শৃঙ্খলা আনতে আমরা বদ্ধপরিকর। একইসাথে সরকার যাতে ট্যাক্স-ভ্যাট সঠিকভাবে পায় এবং সেটি জনগণের কাজে ব্যয় করা সম্ভবপর হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আমরা বদ্ধপরিকর।’

ইত্তেফাক/জেডএইচডি