বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনা চিকিৎসাসেবায় সমন্বয়ের অভাব

আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৩৮

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। গতকাল সোমবার নতুন করে ৩৫ জন শনাক্ত হয়েছেন। মারা গেছেন আরো তিন জন। দেশের ১৫ জেলায় বিস্তৃত হয়েছে ভাইরাসটি। রাজধানীসহ নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর ও গাইবান্ধা জেলায় ‘ক্লাস্টার’ (একই এলাকায় কম দূরত্বে একাধিক আক্রান্ত) ব্যক্তি পাওয়ার তথ্য মিলেছে। করোনা ভাইরাস দেশে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিলেও আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে নেই সে ধরনের প্রস্তুতি। করোনা চিকিৎসাসেবায় সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।

অন্যদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ের অভাব থাকায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত চিকিৎসাধীন রোগীদেরও চিকিৎসাসেবা নিয়েও নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে রেসপেটরি মেডিসিন, বক্ষব্যাধী বিশেষজ্ঞ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, অ্যানেসথেলজিস্ট ও ইপিডিওমোলজিস্ট—এই পাঁচ ধরনের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং টিম গঠন করা জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোলরুমে কিংবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মনিটরিং টিম গঠন করা যেতে পারে। তিন শিফটে এই টিম কাজ করবে। সেখানে অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখতে হবে, যাতে কোথাও করোনা আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হলে কিংবা সর্দি, কাশি, জ্বর, গলাব্যথা নিয়ে কোনো রোগী হাসপাতালে গেলে অথবা আইসোলেশনে কোনো রোগীর চিকিৎসাসেবা নিয়ে ফোনে এই বিশেষজ্ঞ টিম তাৎক্ষণিক পরামর্শ দিতে পারবে। যে হাসপাতালে রোগী থাকবে, ঐ হাসপাতালের ডাক্তাররা রোগীর পরিস্থিতি সম্পর্কে জানালে ফোনে বিশেষজ্ঞরা তাৎক্ষণিক সেবা দিতে পারবেন। রোগীর কাছেও যেতে পারেন। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালসহ যে কোনো হাসপাতালে যারা চিকিৎসাধীন আছেন, ঐ সব হাসপাতাল থেকে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা রোগীদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে জানালেই বিশেষজ্ঞ টিম তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দেবেন। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, এই ব্যবস্থা চালু হলে করোনা আক্রান্ত রোগীরা সুচিকিৎসা পাবেন। আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনে থাকা রোগীরা কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞ মনিটরিং টিমের পরামর্শে সঠিক চিকিত্সা পাবেন। কেউই বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ জানান, জনগণ সেভাবে সচেতন হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সরকারকে আরো কঠোর হওয়া দরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া জানান, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবার জন্য রেসপেটরি মেডিসিন, বক্ষব্যাধী বিশেষজ্ঞ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, অ্যানেসথেলজিস্ট ও ইপিডিওমোলজিস্ট—এই পাঁচ ধরনের বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম গঠিত হলে করোনা রোগীরা সুচিকিৎসা পাবেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। এখন ডাক্তারদের যুদ্ধ। রোগীদের সঠিক চিকিৎসাসেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলার এই যুদ্ধে ডাক্তারদের উত্সাহ দিতে হবে। ডাক্তারদের আগ্রহ নিয়ে সেবায় এগিয়ে আসবে হবে। তাদের চাপ হলে চিকিৎসকরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। বরং তাদের উৎসাহ দেওয়া জরুরি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের দেশের ডাক্তাররা সেবা দিতে গিয়ে মারা গেলে তার পরিবারকে ১ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। নার্স মারা গেলে তার পরিবার পাবেন ৫০ লাখ টাকা। সব স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের জন্য বিভিন্ন অঙ্কের টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, মৃত ব্যক্তিদের বীর হিসেবে ঘোষণা করা হবে। যুদ্ধে সৈনিক মারা গেলে যেমন শহিদ খেতাব দেওয়া হয়, ঠিক তেমনি করোনা আক্রান্ত রোগীর সেবা দিতে গিয়ে ডাক্তার মারা গেলেও তাদের বীর হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। এভাবে ডাক্তারদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এমন কোনো কিছুই করা হয়নি। অথচ ইতিমধ্যে ৯ জন ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা অপরিবর্তিত। আক্রান্ত সাত জন ডাক্তার ভালো আছেন। কয়েক জন নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীও করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। এর আগে ডেঙ্গুতে ১২ জন ডাক্তার, এক জন নার্স ও এক জন টেকনোলজিস্ট মারা গেছেন। অথচ এসব ডাক্তার-নার্সদের ধন্যবাদ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে এক জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আক্ষেপ প্রকাশ করেন।

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় বড়ো রকমের ঝুঁকির মুখে রয়েছে বাংলাদেশ। যেখানে আমেরিকাসহ ইউরোপের দেশগুলো করোনা রোগীদের সেবা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। কোনো কোনো সরকারপ্রধান ব্যর্থ হয়ে সৃষ্টিকর্তার সাহার্য চাচ্ছেন। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। একদিকে নমুনা পরীক্ষার জন্য কিট সংকট। পর্যাপ্ত আইসিইউ নেই। ভেন্টিলেটর অপ্রতুল। জনসচেতনতাও কম। চাহিদার তুলনায় চিকিত্সক, নার্সসহ সেবাকর্মীদের পিপিই সংকট। হাসপাতালগুলোতে বেশির ভাগেরই কার্যত প্রস্তুতি নেই। ডাক্তার-নার্সরা আতঙ্কিত হওয়ায় ইতিমধ্যে ভেঙে পড়েছে সামগ্রিক চিকিত্সাব্যবস্থা। এমন অবস্থার মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, করোনা ভাইরাস দেশে ছড়িয়ে পড়লে চিকিত্সাসেবা পাবে না অনেক রোগী। এখনই বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। দেশের সর্বোচ্চ চিকিত্সা বিদ্যাপিঠ হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ করোনা মোকাবিলায় গঠিত কমিটিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউকে রাখা হয়নি। বর্তমান সময়ের চিকিত্সা বিজ্ঞানের যুদ্ধে নন-মেডিক্যাল পারসনদের পরামর্শ গ্রহণ কতোটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা যা দরকার আর্থিক বরাদ্দসহ সব করে যাচ্ছেন। সঠিকভাবে তা বাস্তবায়ন করতে একের পর এক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়টি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব। যার কাজ তাকে দিয়ে করানো হচ্ছে না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে নন-মেডিক্যাল পারসনদের কাজ হলো শুধু লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়া আর চিকিত্সকদের কাজ হলো চিকিত্সাসেবা দেওয়া। এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। যা করোনা রোগীদের চিকিত্সাসেবা দেওয়ার ওপর প্রভাব পড়েছে। এদিকে দেশে এনেসথেসিওলজিস্ট আছেন ১ হাজার ২০০। আইসিইউ ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকেন এনেসথেসিওলজিস্টরা। এই পরিস্থিতিতে অবসরপ্রাপ্ত এনেসথেসিওলজিস্টদের কাজে লাগানো উচিত। আইসিইউতে দায়িত্ব পালন করার মতো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সেরও সংকট। সম্প্রতি তেজগাঁওয়ের ইএনটি ইনস্টিটিউট থেকে ৩৫ জন নার্সকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। তারা আইসিইউ ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে কিছুই জানেন না। অন্যান্য হাসপাতাল থেকে এ ধরনের অনভিজ্ঞ নার্সদের সেখানে দেওয়া হয়েছে। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের এক জন কর্মকর্তা এর সত্যতা স্বীকার করেছেন। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে জনবল চেয়েছে। তাদের ১৬ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর মধ্যে ১০ জন পালিয়ে গেছেন। চার জন কোয়ারেন্টাইনে আছেন। নার্সের বেশির ভাগ অনভিজ্ঞ। শুধু ডাক্তার আছেন। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জন পরিচালক কুর্মিটোলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, পিপিই চার দিন ওয়াশ করে পরতে পারবেন। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী পিপিই ওয়াশ করে ব্যবহার করা যাবে না। ওয়ানটাইম ব্যবহার করতে হবে।

সোমবার করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে অনলাইন ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, পরীক্ষার আওতা বাড়ার পর দেশে নোভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে; এক দিনে নতুন ৩৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় যতজন আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ১২ জন নারায়ণগঞ্জের। নতুন রোগীর এই সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় দ্বিগুণ। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো কারো দেহে সংক্রমণ ধরা পড়ার পর এক দিনে মৃত্যু ও আক্রান্তের এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যা। আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো তিন জনের মৃত্যু হয়েছে, তাতে দেশে কোভিড-১৯ এ মৃতের সংখা বেড়ে হয়েছে ১২ জন। মহাপরিচালক বলেন, সারাদেশ থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৬৮টি। আর এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ১১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। আক্রান্তদের ৩৫ জনের বয়স ছিল ৪১ থেকে ৫০ বছর, তাদের মধ্যে ৩০ জনই পুরুষ। এর বাইরে ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সি ২১ জন আক্রান্ত হন। আক্রান্তদের মধ্যে মোট ৩৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৩৯ জনকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭০৯ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে এবং ৩০ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এর বাইরে ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে ২৩ জনকে। আবুল কালাম আজাদ বলেন, দুদকের যে পরিচালক করোনায় মারা গেছেন, তার বয়স ছিল ৪৮ বছর। তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, এ পর্যন্ত সারাদেশ থেকে ৪ হাজার ১১ জন ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ নমুনার সবগুলোই পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বাংলাদেশের ১৫টি জেলায় কেইস পেয়েছি। ক্লাস্টার আমরা বলব, যেখানে একাধিক ব্যক্তি আছেন এবং এক জায়গার মধ্যে সীমাবদ্ধ আছেন, সে জায়গাটা। এ ধরনের ব্যবস্থা (ক্লাস্টার) হতে পারে ঢাকা মহানগরী, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর, গাইবান্ধায়। গত রবিবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত্ আইভীও গোটা সিটি করপোরেশন এলাকা ও সদর উপজেলা লকডাউন করতে প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে চিঠি দিয়েছেন। আইভী তার সিটিতে কারফিউ জারির দাবির পর কড়া অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন। এ পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে রবিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জরুরি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় নারায়ণগঞ্জের দুই বাসিন্দা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখন নারায়ণগঞ্জের দিকে বিশেষ নজর রাখছে। আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সোমবার ব্রিফিংয়ে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় যাদের সংক্রমণ আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি তাদের ১২ জন নারায়ণগঞ্জের। নারায়ণগঞ্জে ক্লাস্টার হিসেবে চিহ্নিত করেছি, সেখানে বেশ কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে ওখান থেকে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে না পড়ে। পরবর্তী সময়ে রয়েছে মাদারীপুরের এলাকা। নারায়ণগঞ্জের দুই রোগীই হাসপাতালে আসার কিছুক্ষণ পর মারা যান বলে জানান ডা. ফ্লোরা। তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জের যে দুই জন মারা গেছেন, সঙ্গে সঙ্গেই তাদের কন্টাক্ট ট্রেসিং শুরু করেছে আইইডিসিআর। এ পর্যন্ত তাদের কন্টাক্টে যতজন পাওয়া গিয়েছে তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘পুরো নারায়ণগঞ্জকে হটস্পট হিসেবে আইডেন্টিফাই করে সেখানে কোয়ারেন্টাইন কার্যক্রমকে আরো বেশি শক্তিশালী করার জন্য আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। ওখানে প্রশাসন আমাদের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। রোগী যখন চিহ্নিত হয় তখন থেকেই আমরা কোয়ারেন্টাইন কার্যক্রম শুরু করি। রোগী জীবিত না মৃত সেটা কিন্তু বিবেচনার বিষয় নয়। কারণ কোয়ারেন্টাইন করা হয় যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে। ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ১২৩ জনের গত ২৪ ঘণ্টায় সে ৩৫ জন আক্রান্ত রোগীর কন্টাক্ট ট্রেসিং চলছে। এদের কারো কন্টাক্ট ট্রেসিং কমপ্লিট হয়ে যায়নি। যারা মিসিং কন্টাক্ট তাদের নাম তালিকাভুক্ত থাকে। ১২৩ জনের মধ্যে বিভিন্ন রকমের কন্টাক্টের সংখ্যা রয়েছে। কন্টাক্ট ট্রেসিং প্রক্রিয়াটি কিন্তু খুব সহজ নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা সব কন্টাক্টকে ট্রেস করতে পারি। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে যেটা হয়—কেউ যদি গণমাধ্যমে চলাফেরা করে থাকেন সেই মুহূর্তে অথবা এমন কোনো অনুষ্ঠানে গেছেন যেখানে বড়ো সমাবেশ ছিল, সেক্ষেত্রে কিছু মিসিং কন্টাক্ট থাকে। আমাদের হিসাবের মধ্যে মিসিং কন্টাক্ট কতজন সেটাও আমরা তালিকাভুক্ত করে সে এলাকাটিও কনটেইনমেন্টের মধ্যে নিয়ে আসি। ক্লাস্টার এলাকার বিষয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, ‘যদি কোথাও একই জায়গায় কম দূরত্বের মধ্যে একাধিক রোগী থাকে তখনই আমরা সেটাকে ক্লাস্টার হিসেবে আইডেন্টিফাই করে ইনভেস্টিগেশন করে থাকি।

কোন জেলায় কতজন করোনায় আক্রান্ত

করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা মহানগর। ঢাকায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬৪ জন। ঢাকা ছাড়া অন্যান্য জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা—নারায়ণগঞ্জে ২৩, মাদারীপুরে ১১, চট্টগ্রামে ২, কুমিল্লায় ১, গাইবান্ধায় ৫, চুয়াডাঙ্গায় ১, গাজীপুরে ১, জামালপুরে ৩, শরীয়তপুরে ১, কক্সবাজারে ১, নরসিংদীতে ১, মৌলভীবাজারে ১, সিলেটে ১, রংপুরে ১ এবং ঢাকার মহানগরীর বাইরে চার উপজেলায় ৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।

ইত্তেফাক/আরকেজি