শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দুই সপ্তাহের মধ্যে করোনা সংক্রমণের 'চূড়ায় ' পৌঁছাতে পারে বাংলাদেশ

আপডেট : ১৯ মে ২০২০, ১৪:৪৫

দেশে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছাতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

গতকাল সোমবার বাংলাদেশে রেকর্ড ১৬০২ জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া নতুন করে মারা করোনায় মারা গেছেন ২১ জন। 

এ বিষয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালের করোনা পরীক্ষার কিট উদ্ভাবনকারী দলের প্রধান অণুজীব বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল বলেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছাতে পারে।

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়। এরপর থেকেই বাংলাদেশে ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে করোনা আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা। 

 গত ১ মে বাংলাদেশের করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৬ হাজার। আর এখন বাংলাদেশের করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৮৭০ জনে। আর মৃত্যু হয়েছে ৩৪৯ জনের। অর্থাৎ গত ১৮ দিনে বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার করোনা রোগী বৃদ্ধি পেয়ছে। 

 করোনা ভাইরাসের কার্যকরি কোন ওষুধ এখনো বিশ্বে আবিষ্কৃত হয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধে হার্ড ইমিউনিটির অর্জনের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। 

 গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষক ড. বিজন কুমার শীল জানায়, সরকার করোনা পরীক্ষার জন্য গণস্বাস্থ্যের কিটের চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে তারা আরো বেশি পরীক্ষা করতে পারবেন । আর শনাক্ত বেশি হলে ধীরে ধীরে রোগীর সংখ্যা কমতে পারে। 

 সার্স ভাইরাসের কুইক টেস্ট পদ্ধতিও আবিষ্কার করেছিলেন ড. বিজন কুমার শীল। সার্স ভাইরাস প্রতিরোধে সিঙ্গাপুর সরকারের একজন বিজ্ঞানী হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। 

ড. বিজন কুমার শীল জানায়, দুই ভাবে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। যারা আক্রান্ত হয়েছেন ও আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছেন তাদের দ্রুত সম্ভব আইসোলেশনে পাঠাতে হবে এবং তাদের আশপাশের মানুষদের লকডাউনের থাকতে হবে।   আরেকটি হলো হার্ড ইমিউনিটির মাধ্যমে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা। 
 
  বাংলাদেশে লকডাউন করে করোনা নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি  ফলপ্রসূ হয়নি দাবি করে  ড. বিজন কুমার শীল বলেন, বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত রোগী পুরো দেশে ছড়িয়ে গেছে এবং বাতাসেও করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা চাইলেও মানুষকে দীর্ঘ সময়ের জন্য আটকে রাখতে পারবো না। এমন পরিস্থিতিতে  আর বাংলাদেশের জন্য এখন একমাত্র উপায় হচ্ছে হার্ড ইমিউনিটির মাধ্যমে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা। 

বাংলাদেশে কিছু মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাসের এন্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে জানিয়ে ড. বিজন কুমার শীল আরো বলেন, এখন আমাদের মানুষের শরীরের  রক্ত পরীক্ষা করে জানতে হবে যে কত মানুষের শরীরে করোনা ভাইরাসের এন্টিবডি তৈরি  হয়েছে। যদি ৫০ শতাংশ মানুষের শরীরে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি হয় তাহলে বলা যায় যে এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব । 

 বাংলাদেশের করোনা ভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য গার্মেন্টস মালিকদের দুষছেন রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএসএম আলমগীর। বাংলাদেশে গত ২৬ মার্চ থেকে অঘোষিত লকডাউন শুরু হলেও হাজার হাজার গার্মেন্টস কর্মীরা লকডাউন ভেঙে এই মাসের শুরুর দিকে কাজ যোগ দেন। তখন বেশিরভাগ শ্রমিক তাদের গ্রাম থেকে আবার ঢাকার ফেরত আসেন। 

এ বিষয়ে ড. এএসএম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজারের বেশি হতো না যদি গার্মেন্টস মালিকরা তাদের কারখানা বন্ধ রাখতেন। হঠাৎ করে কারখানা খুলে দেয়ায় হাজার হাজার নিম্ন আয়ের মানুষ রাজধানীতে প্রবেশ করেছেন। 

 বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ নিয়ে  ড. এএসএম আলমগীর বলেন,  মে মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কমে যেতে পারে। তবে এ জন্য করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের শিকল সরকারকে ভাঙতে হবে । আর এমনটি করতে পারলে  অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি সহনীয় থাকবে বলেও জানান ড. এএসএম আলমগীর।   

  এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে যে করোনা ভাইরাস পৃথিবী থেকে কখনো সম্পূর্ণ নির্মূল হবে না। এটি নিয়েই মানুষকে বেঁচে থাকতে হবে । 

  বাংলাদেশ ডক্টর্স ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. শাহেদ রাফি পাভেল বলেন, এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের সকল সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে করোনা ইউনিট স্থাপন করা উচিৎ। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ করোনা ভাইরা সংক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে উল্লেখ করে ডা. শাহেদ রাফি পাভেল বলেন, জুনের প্রথম দিক থেকেই কমতে শুরু করবে বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। 

  বাংলাদেশ করোনা টেস্ট আরো বাড়াতে হবে উল্লেখ করে  ডা. শাহেদ রাফি পাভেল বলেন , প্রতিদিন ১০ হাজার টেস্ট খুব কম। যত বেশি টেস্ট করানো যাবে আমরা তত আক্রান্তের সঠিক সংখ্যা পাবো। 

 এ বিষয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বলেন, প্রতিদিন ১৫ হাজার টেস্ট করানোর জন্য সরকার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আন্দালু এজেন্সি। 

ইত্তেফাক/এআর