বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রণোদনা সুবিধায় নেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু খাত

আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২০, ১৩:২০

করোনার অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সব খাত। রাস্তার পাশের ক্ষুদ্র দোকানি থেকে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান—বাদ নেই কেউ। বিশ্ব জুড়েই এই পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্তরা প্রণোদনা পাচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো সব খাত প্রণোদনার আওতায় আনা হয়নি।

এমন কোনো কোনো খাত রয়েছে, যা শিল্প খাত বিবেচিত হলেও বাস্তবে তেমন কোনো সুবিধাই পাচ্ছে না। করোনায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ করোনার এই দুর্যোগের সময়ে অন্যতম ফ্রন্টলাইনার হিসেবে কাজ করছেন এমন খাতের কর্মীরা। প্রাণ হারানোর পাশাপাশি আক্রান্তও হয়েছেন অনেকে।

আলোচ্য খাত করোনার সময়ে ব্যাবসায়িকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রণোদনার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি। তাই দুর্যোগের সময় প্রলম্বিত হলে এই খাতের কর্মীরা আরো বেশি অসহায় হয়ে পড়বেন, চাকরিচ্যুতির শঙ্কায় ভুগবেন এমনটাই স্বাভাবিক। প্রতিষ্ঠান আয় না করলে কর্মীদের বেতনভাতা প্রদান করবে কীভাবে? সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবং সার্বিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দেওয়ায় নির্ভরশীল খাতের এখন ত্রাহিদশা। সুনির্দিষ্ট কোম্পানি আইনে পরিচালিত হলেও এই খাত রয়ে গেছে অবহেলিত। ব্যাংকগুলোর ভাষ্য, সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না পেলে ঋণ আবেদন গ্রহণ করা যাচ্ছে না। ফলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে যে অন্যান্য খাত প্রণোদনা পেলে সব খাতকেই প্রণোদনা দিতে হবে। কারণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সবাই।

বিশেষজ্ঞদের কারো কারো মতে, প্রণোদনা থেকে এখনো বাদ পড়েছে বেশ কিছু খাত। জনগণকে ক্রান্তিকালে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য সংবাদ পরিবেশন করে এমন গুরুত্বপূর্ণ খাতও রয়ে গেছে প্রণোদনা সুবিধার বাইরে, যা সংশ্লিষ্টদের হতাশ করেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের দিকে তাকালে দেখা যায়, তারা ধনী-গরিবনির্বিশেষে সবাইকে প্রণোদনার সুবিধা দিয়েছে। করোনায় অন্তত সবাইকে এক লাইনে দাঁড় করিয়েছে যে এই অতিমারিতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। বরং কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাকি হয় তা সবার অজানা। প্রতিনিয়তই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। মৃত্যুহারও বাড়ছে। এ অবস্থায় খুলছে না বা শিগিগর অফিস-আদালত খোলার কোনো লক্ষণ নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য পুরোদমে চালু না হলে করোনার ‘চেইন ইফেক্টে’ ক্ষতিগ্রস্ত নির্ভরশীল খাতগুলো টিকে থাকতে পারবে না—এমনটি নির্দ্বিধায় বলা যায়।

প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে সরকার ১৯টি প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে, যার মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমেই ৭৬ হাজার কোটি বা চার ভাগের তিন ভাগ অর্থ বিতরণ করার কথা। সেটিও দ্রুততম সময়ে পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। এই সুবিধার আওতায় নেই অনেক খাত।

আরো পড়ুন: পলিটেকনিকে যে কোনো বয়সে ভর্তির সিদ্ধান্তে আপত্তি

সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ বলেন, করোনা কত দিন চলবে—এই প্রশ্নের উত্তর নেই খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছেও। কোথাও ঘুরেফিরে আবার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ বৃদ্ধির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব খবর সরবরাহে যেসব খাত জড়িত, তারা কি প্রণোদনা পাচ্ছে? এখন পর্যন্ত বিষয়টি কেউ ভাবেনি। করোনার অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে প্রণোদনার আওতায় আনতে না পারলে ক্ষতি হবে সমাজেরই। সবাইকে নিয়েই একযোগে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ এখন উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। মধ্য আয়ের তালিকায় পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। সহস্রাব্ধ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বে অনন্য নজির রেখেছে। এখন কাজ হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) নিয়ে। আর এসডিজির মূল প্রতিপাদ্যই হচ্ছে—কাউকে বাদ দিয়ে নয়। অর্থাত্, সবাইকে নিয়েই একযোগে, সমানতালে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই উন্নয়ন টেকসই হবে। কেউ এগিয়ে গেল, আর কেউ পেছনেই পড়ে থাকল, তাহলে হবে না। এসডিজির এই প্রতিপাদ্য মেনেই বলতে হয়, ক্ষতিগ্রস্ত সব খাতই প্রণোদনার সুবিধা প্রাপ্য। এটা ন্যায্য দাবিও।

ইত্তেফাক/এএএম