বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নদী ও নদীর প্রবাহ দখলমুক্ত রাখা হবে: নৌ প্রতিমন্ত্রী

আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২০, ১৬:৫৮

নদী ও নদীর প্রবাহ দখলমুক্ত রাখা হবে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, ঢাকার মানুষের জন্য নদীগুলা কতবেশি প্রয়োজন প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বেশি কেউ বুঝে না। নদীগুলোকে ঘিরে যেন মানুষের জীবন জীবিকার একটা ব্যবস্থা হয় সে প্রকল্প আমরা নিয়েছি। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রথমে আমাদের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে হয়েছে। এ উচ্ছেদ করতে গিয়ে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সাহস ও সমর্থনের কারণে আমরা সফল হয়েছি।

প্রতিমন্ত্রী সোমবার উচ্ছেদকৃত বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদের তীররক্ষা প্রকল্প পরিদর্শন এবং বিরুলিয়ায় বৃক্ষরোপন কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। সকালে সদরঘাট থেকে জাহাজযোগে নদীতীর পরিদর্শন করে, বিরুলিয়া ব্রিজের পাশে নদীতীরে বৃক্ষরোপন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

কর্মসূচির উদ্বোধন শেষে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নদীর দুই ধারে সীমানা পিলার ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান হয়ে গেছে। কি ওয়াল ও ওয়াক ওয়ে তৈরির কাজ চলছে। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে একটি প্রকল্প জমা দিয়েছি। এর অনুমোদন হলে আমরা এ কাজটি আরো গতিশীল করতে পারব। ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এ কাজটি সমাপ্ত করতে পারব।

নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদী দখলের সঙ্গে অনেক ধরনের ক্ষমতাবান লোকজন জড়িত ছিল। আমরা সেগুলোকে কখনোই আমলে নেইনি। দখলদারকে আমরা দখলদার হিসেবেই দেখেছি। আমরা আমাদের সমর্থ দিয়ে চেষ্টা করেছি। রাজধানীর চারপাশে ৯০ ভাগ নদীর জায়গা দখলমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি।

বৃক্ষরোপন কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম, উদ্ধারকৃত জায়গায় বৃক্ষরোপন করব। একটা সবুজ বেষ্টনী করার পরিকল্পনা নেব। আজকে আমরা এটি করতে পেরেছি। সবুজ বেষ্টনী দিয়ে সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে চাই। সীমানা পিলারসহ অন্যান্য কর্মসূচিও চলমান থাকবে। 

রাজধানীর ভেতরেও নৌ চলাচল সম্ভব জানিয়ে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী একটি মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত অনুমোদন করেছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে, সিটি কর্পোরেশন, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে কাজ করব। আমরা যদি মাস্টারপ্ল্যানটি বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে ঢাকার চারপাশে চারটি নদীকে ঘিরে যে খালগুলো আছে, যেগুলো বিভিন্ন দিকে বেরিয়ে গেছে বা নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এগুলো উদ্ধার করে নব্যতা ফিরিয়ে আনার এ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন হলে ঢাকার চারপাশে শুধু নৌ চলাচল নয়; ঢাকার মধ্য দিয়েও নৌ চলাচল সম্ভব বলে আমি মনে করি।

তিনি বলেন, নদীকে ঘিরে এ ব-দ্বীপ। নদীমাতৃক বাংলাদেশকে আমরা পৃথিবীর বুকে একটি মর্যাদার জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। যে জায়গা থেকে প্রধানমন্ত্রী শত বছরের ডেল্টা প্ল্যান দিয়েছেন। একটি কাঠামোও তৈরি করেছেন। 

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের ইশতিহার ঘোষিত ১০ হাজার কি.মি. নৌ পথ তৈরির কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ হচ্ছে। ইশতিহার বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে পারব।

নদীর পানি দূষণমুক্ত করার আদালতের রায়ের বিষয়ে এক সাংবাদিক দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, উচ্চ আদালতের অনেক রায় এখনো পেন্ডিং আছে। বাস্তবায়ন হয়নি। নদীর পানি দূষণমুক্ত করার বিষয়টি সরকার অনুভব করে। প্রধানমন্ত্রী এটা অনুভব করেন। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতীক হচ্ছে নৌকা। এ বিষয়গুলো আমরা অনুভব করি বলেই, আমরা মনে করি, এ বিষয়গুলো আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব। 

তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি, জাতির পিতার খুনিদের বিচার করে দেশকে সাংবিধানিক ধারায় নিয়ে এসেছি। সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতিতে যেখানে দেশপ্রেমিক মানুষ জন্ম হবার কথা, সেখানে শায়খ আব্দুর রহমানকে জন্ম দেয়া হয়েছিল। আমরা বাংলাদেশকে একটা সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। নদী ও নৌপথকেও আমরা সুস্থধারায় ফিরিয়ে আনতে পারব।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদীর পানি দূষণমুক্ত করতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। কীভাবে নদীর পানি দূষণমুক্ত করা যায়, তার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। রাতারাতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। দীর্ঘদিনের একটা অন্ধকার আমাদের ঘাড়ের মধ্যে আছে। অন্ধকার থেকে আমরা আলোর পথে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছি।

নদীর জায়গায় রাজধানীর এক এমপির পাওয়ার প্ল্যান্ট নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে আমাদের একটি অভিযান সম্পন্ন হয়ে গেছে। আমরা কাউকেই ছাড় দেই নাই। আমরা আগেই বলেছি, এখানে দখলদারকে আমরা দখলদার হিসেবেই চিহ্নিত করেছি; মন্ত্রী বা সংসদ সদস্য হিসেবে না। যাদেরকে পাওয়ার প্ল্যান্ট দেয়া হয়েছিল তাদেরকে কিন্তু নদীর জায়গা দখল করার জন্য পাওয়ার প্ল্যান্ট দেয়া হয়নি। নদী দখল করে পাওয়ার প্ল্যান্ট করবে এমন চুক্তিও কারো সঙ্গে করা হয়নি। কাজেই যে যেই কাজ করবে, তাকে সেই ফল ভোগ করতে হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার দেশ পরিচালনায় এমন দুঃসাহস কেউ দেখাবে বলে আমি মনে করিনা।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অনল চন্দ্র দাস, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম মোহাম্মদ সাদেক এবং  প্রকল্প পরিচালক নুরুল হক উপস্থিত ছিলেন। নদীতীর পরিদর্শনের সময় প্রতিমন্ত্রী কর্মকর্তাদের নদীতীরে বালু উত্তোলনকারী অবৈধ ড্রেজারগুলো জব্দ করার নির্দেশ দেন।

ইত্তেফাক/কেকে