শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কক্সবাজার বিমানবন্দর

রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ শুরুতেই হোঁচট খেল

আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২০, ০৫:৩৯

কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে। বিশ্বব্যাংক কর্তৃক কালো তালিকাভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠানকে এ কাজের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারের ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি প্রকল্পের দরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নানা অভিযোগ তুলে তা ফেরত দিয়েছে। কমিটির পক্ষ থেকে প্রকল্পের অনিয়ম তদন্তে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন (আইএমইডি) বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এর ফলে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ আবার জটিলতায় পড়ল।

আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীসহ অন্য শহরের সঙ্গে যোগাযোগ নিবিড় করার লক্ষ্যে কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধন হিসেবে গড়ে তোলা এবং বাংলাদেশকে বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে একটি রিজিওনাল হাব গড়ে তোলাই ছিল এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। প্রকল্প সারপত্রে দেখা যায়, বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৯ হাজার ফুট। এটিকে মহেশখালি চ্যানেলের দিকে আরো ১ হাজার ৭০০ ফুট সম্প্রসারণ করা হবে। অন্য রানওয়ের সম্প্রসারণের চেয়ে এ কাজটি অত্যন্ত জটিল। কারণ সম্প্রসারিত রানওয়ের সিংহভাগই থাকবে সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপর। ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর প্রকল্পটির দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে মোট ১০টি দরপত্র জমা পড়ে। প্রস্তাবগুলো মূল্যায়নের পর চীনা প্রতিষ্ঠান সিআরসিসি হারভার-সিসিইসিসির নাম ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়। কিন্তু প্রস্তাবটি পাশ না করে কমিটি তা আইএমইডিতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মন্ত্রিসভা কমিটি দরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ভয়াবহ অনিয়ম দেখতে পেয়েছে। আইএমইডিকে এসব বিষয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যেসব অনিয়ম দেখতে পেয়েছে তার মধ্যে রয়েছে—দরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে মূল্যায়ন কমিটি ‘পোস্ট কোয়ালিফিকেশন’ সম্পাদন না করা। এক্ষেত্রে কমিটি চলমান করোনা পরিস্থিতির অজুহাত দিয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবে দাখিলকৃত বিভিন্ন আর্থিক ও কারিগরি দলিলপত্রও যাচাই করা হয়নি। কিন্তু পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট (পিপিআর)-২০০৬ অনুযায়ী এ কাজটি করা অত্যাবশ্যকীয় ছিল। এছাড়া মন্ত্রিসভায় যে কোম্পানিটির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল পিপিআরের শর্ত অনুযায়ী সেটির বার্ষিক টার্নওভারও যাচাই করেনি মূল্যায়ন কমিটি। উল্লেখ্য, পিপিআরের যে কোনো ধারা লঙ্ঘন ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এদিকে শর্ত অনুযায়ী কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজে অংশ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ১৫ বছরের কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু মূল্যায়ন কমিটি সিআরসিসি হারবার নামের যে কোম্পানিটির নাম সুপারিশ করেছে সেটির অভিজ্ঞতা ১৩ বছরের। ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বলা হয়েছে যে, বিভিন্ন দেশে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কাজ করার সময় নানা ধরনের অনিয়মে যুক্ত থাকার দায়ে সিআরসিসি হারবারকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে বিশ্বব্যাংক।

এছাড়া ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি সমগ্র প্রস্তাব পর্যালোচনা করে মূল্যায়ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে গুরুতর অনিয়ম পেয়েছে বলে আইএমইডি সূত্র জানিয়েছে। অনুমোদিত মূল্যায়ন কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে যুগ্ম সচিবকে (প্রশাসন) মূল্যায়ন কমিটির সদস্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু অদৃশ্য কারণে হঠাত্ করেই অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে দিয়ে মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। মন্ত্রিসভা কমিটির একজন সদস্য বলেন, অতিরিক্ত সচিবকে মূল্যায়ন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হলে আগেই কমিটির সংশোধিত গঠন আদেশ জারি করা অত্যাবশ্যকীয় ছিল। এমতাবস্থায় এ কমিটি দিয়ে মূল্যায়িত যে কোনো প্রস্তাব আইন ও বিধিবহির্ভূত তথা অবৈধ।

কক্সবাজার বিমানবন্দর মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন বেবিচকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। কিন্তু এ বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইত্তেফাককে বলেন, এ বিষয়ে আমি বিশেষ কিছু জানি না। আপনি প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। প্রকল্প পরিচালক এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, এ পদে আমি নতুন যোগ দিয়েছি। আইএমইডিতে প্রস্তাব ফেরত পাঠানোর কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এটা একটি প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত বলতে অস্বীকৃতি জানান।

ইত্তেফাক/এসআই