করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই ঈদুল আজহায় গ্রামে ফিরছেন হাজারো মানুষ। ট্রেনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও বাস-লঞ্চে ছিল উপেক্ষিত।
প্রতি ঈদের আগের দিনগুলোর মতো এবার সড়ক, নৌ ও রেলপথে ছিল না উপচেপড়া ভিড়। তবে দক্ষিণাঞ্চল এর ব্যতিক্রম। বাড়িমুখী মানুষের ঢল নেমেছিল দেশের দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলায় যাতায়াতের অন্যতম প্রধান পথ মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া- কাঁঠালিয়া ও রাজবাড়ীর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে।
ঘর ফেরা এসব মানুষের অধিকাংশই কোনো প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মানার তোয়াক্কা করেননি। কারো মাঝে ছিল না সামাজিক দূরত্ব। লঞ্চের ডেকে গাদাগাদি করে সবাই ফিরছেন বাড়ি। এদিকে গতকাল এক অনুষ্ঠানে দেশে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার হার কমলেও পবিত্র ঈদুল আজহা ও বন্যাকে কেন্দ্র করে সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে নিজের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। তিনি করোনা থেকে রক্ষার জন্য সবাইকে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
ট্রেন
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সময়মতো রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়লেও অনেকটা ফাঁকা ছিল পুরো স্টেশন। অনলাইনে টিকিট বিক্রি হওয়ায় কাউন্টারে ছিল না জটলা। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিডিউল বিপর্যয় ছাড়াই নির্দিষ্ট সময়ে গতকাল কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়েছে ১২টি ট্রেন। তবে এবার ঈদ উপলক্ষ্যে নামানো হয়নি কোনো বিশেষ ট্রেন।
যেখানে অন্য বছরের ঈদযাত্রায় ছিল ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়, যাত্রীদের পোহাতে হতো ভোগান্তি। তবে এবার ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। বিনা টিকিটের যাত্রী স্টেশনে যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে ছিলেন রেলের কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধির বিষয় যথাযথ মেনে প্রতিটি ট্রেন ছেড়েছে বলে জানিয়েছেন কমলাপুর রেল স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ আমিনুল হক জুয়েল।
তিনি বলেন, টিকিটবিহীন কোনো যাত্রীকে স্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। রেলের বর্তমান সিস্টেমের প্রেক্ষাপটে রেলসেবা অ্যাপ থেকে টিকিট কেটে সেটির পিডিএফ কপি প্রিন্ট করে স্টেশনে প্রবেশ করতে হয়েছে। এই কপি বা টিকিট ছাড়া স্টেশনে প্রবেশ নিষেধ। একই সঙ্গে যাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিও কঠোরভাবে মনিটরিং করা হয়েছে। যাত্রী ওঠার আগে প্রতিটি ট্রেনকে জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। ট্রেনে অর্ধেক আসন খালি রাখা হচ্ছে অর্থাত্ এক সিট বাদ দিয়ে যাত্রীরা বসছেন। রেলের তরফ থেকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করছি। একই সঙ্গে যাত্রীদেরও অনুরোধ করব তারাও যেন স্বাস্থ্যবিধির বিষয়গুলো খেয়াল রাখেন।
বাস
অন্যবারের তুলনায় যাত্রী কিছুটা কম হলেও ঈদে গাবতলী হয়ে ঘরমুখো মানুষের গতকাল যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। নামিদামি পরিবহনের বাসের টিকিটেও সংকট ছিল, বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি রুটের বাসের ক্ষেত্রে। যানজটের কারণে গাবতলী টার্মিনালে পৌঁছাতে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় রাস্তায় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সায়েদাবাদ ও গাবতলীতে যাত্রীর চাপ থাকলেও মহাখালী বাস টার্মিনাল ছিল অনেকটা ফাঁকা।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফেরিঘাটে জ্যামে আটকা পড়ায় বাসগুলো সময়মতো গাবতলীতে ফিরে আসতে একটু সময় লেগেছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসের অর্ধেক সিট ফাঁকা রাখার কারণে বাসের সংকটটা আরেকটু বেড়েছে। তবে কিছু বাস করোনা সংক্রমণ রোধে অর্ধেক সিট ফাঁকা রাখার নিয়ম যথাযথভাবে মানছেন না বলেও অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
সোহাগ পরিবহনের ম্যানেজার মঈনউদ্দীন জানান, তাদের বাসের ক্যাপাসিটি কম। গতকালের সব টিকিট আগাম বিক্রি হয়ে যায়। ফলে অনেকে টার্মিনালে এসে টিকিট পাননি। তবে তারা লোকাল বাসে চড়ে গন্তব্যে গেছেন। তিনি বলেন, সোহাগ পরিবহনের বাসে যারা চড়েছেন তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই গাড়িতে উঠতে হয়েছে।
হানিফ পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার মোশারফ হুসাইন বলেন, টার্মিনালে কয়েক দিন ধরে যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তিনি বলেন, নামিদামি পরিবহনগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলাচল করছে। তবে ছোটখাটো পরিবহনের বাসে কোনো স্বাস্থবিধি মানা হচ্ছে না। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে। তিনি আরো বলেন, গতকাল ঐসব রুটে যাত্রীর যে পরিমাণ চাপ ছিল তাতে করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ছিল রীতিমত অসহায়।
সায়েদাবাদ-পিরোজপুর রুটে চলাচলকারী দোলা পরিবহনের সায়েদাবাদ কাউন্টারের সেলসম্যান শুভ জানান, অন্য দিনের চেয়ে গতকাল টার্মিনালে যাত্রীর চাপ ছিল। স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য না করে বলেন, যতটুকু সম্ভব হয়েছে, আমরা চেষ্টা করেছি। কিন্তু যাত্রীরা কথা শোনে না। তারা উলটো আমাদের বাজে কথা শোনায়। অপর দিকে মহাখালী বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, মহাখালীতে যাত্রীর কোনো ধরনের চাপ ছিল না।
লঞ্চ
গতকাল সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে যাত্রীদের সচেতনতার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। প্রবেশপথে যাত্রীদের মাস্ক আছে কি না, তা মনিটরিং করা হচ্ছে। লঞ্চে যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে লাল রঙের চিহ্ন এঁকে দেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য দিন থেকে গতকাল লঞ্চ টার্মিনালে ছিল অনেকটা উপচেপড়া ভিড়। লঞ্চের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির যাত্রীরা শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেও ব্যতিক্রম দেখা গেছে ডেকের তৃতীয় শ্রেণির যাত্রীদের ক্ষেত্রে। তারা শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই যাতায়াত করছেন। ফলে শারীরিক দূরত্ব মানাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও লঞ্চ মালিকদের হিমশিম খেতে হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, গতকাল ১০০ কাছাকাছি লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছেড়ে গেছে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকি থাকায় যাত্রীদের সতর্কভাবে চলাচলের আহ্বান জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। অতি প্রয়োজন না হলে ঈদযাত্রা না করারও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
ইত্তেফাক/জেডএইচ