করোনা ভাইরাসের কারণে সবাই যখন অনলাইনে ব্যস্ত, তখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইলেক্ট্রলাইটিক রেডিয়েশন স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
দীর্ঘক্ষণ ইলেক্ট্রোনিক ডিভাইস ব্যবহার করলে নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশুদের ওপর এর প্রভাব অত্যন্ত বেশি। শিশুরা মোবাইল হ্যান্ডসেট অনেকক্ষণ ব্যবহার করলে তাদের স্মৃতি ও দৃষ্টিশক্তি লোপ পায়। শরীরে টিউমার হতে পারে। রেডিয়েশনের প্রভাবে একটা শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে।
শুধু শিশুরা নয়, বড়রাও যদি শিশুদের কোলে নিয়ে মোবাইল ব্যবহার করেন তাহলে এর প্রভাব শিশুদের ওপর পড়ে। ফলে অনলাইনে শিশুদের ক্লাসে আপত্তি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। তবে সেটা যদি ল্যাপটপে হয় তাহলে অন্তত কিছুটা ভালো। তারা বলছেন, খুব বেশি প্রয়োজন হলে ৪০-৪৫ মিনিট পর ডিভাইসের সামনে থেকে শিশুদের সরিয়ে নিতে হবে।
স্মার্ট ডিভাইজের ক্ষতিকর দিক নিয়ে অনেকদিন ধরেই সোচ্চার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। তিনি বলেন, প্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাস করতে পারছে। কিন্তু এপিজে আবুল কালামের একটা কথা আছে, প্রযুক্তি হলো দুই দিকে ধারাল অস্ত্র। বামে গেলেও কাটবে, ডানে গেলেও কাটবে। সঠিক ব্যবহার যেমন মঙ্গলজনক, তার অপব্যবহার কিন্তু অসম্ভব ক্ষতিকারক। এই যে অনলাইন ক্লাসগুলো হচ্ছে তাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকের আই টু আই সংযোগ হচ্ছে না।
দ্বিতীয়ত শিক্ষার্থীর চোখ দেখলেই শিক্ষকরা বুঝতে পারে সে বিষয়টি বুঝেছে না বুঝতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে সেটা বুঝা যায় না। তাছাড়াও ঘাড় সোজা করে বসে এই যে ক্লাসগুলো করছে এখানে একটি ইলেক্ট্রলাইটিক রেডিয়েশন আছে যে রেডিয়েশনটা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিক্ষারক। ছোট্ট পর্দায় এই যে মনোযোগ দিচ্ছে তাতে ঘাড়ে ব্যথা হচ্ছে, মাথাব্যথা হচ্ছে, চোখের দৃষ্টিশক্তি লোপ পাচ্ছে।
তিনি মনে করেন, কোনো অবস্থাতেই একটানা ৪০-৪৫ মিনিটের বেশি ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে না। তার মতে, মোবাইলের অপব্যবহারে শিশুদের মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুধু শিশু নয়, সব বয়সি মানুষের টিউমার, স্মৃতি ও দৃষ্টিশক্তি লোপসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই মোবাইল ব্যবহারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি তো মনে করি, এখন গবেষণার সময় এসেছে সিগারেট বেশি ক্ষতি করছে না মোবাইল ফোন বেশি ক্ষতি করছে। আমার মতে, মোবাইলের ক্ষতি সিগারেটের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। ফলে ডিভাইস ব্যবহারে আমাদের অনেক বেশি যত্নবান হতে হবে।’
জাতীয় নাক কান ও গলা ইনস্টিটিউটের চিকিত্সক ডা. মাহবুব আলম বলেছেন, দীর্ঘক্ষণ হেডফোন দিয়ে কথা বললে কানে নানা ধরনের সমস্যা হয়। তাই দীর্ঘসময় হেডফোন ব্যবহার না করাই উচিত। একটানা না শুনে গ্যাপ দিয়ে দিয়ে কথা শুনতে হবে। দীর্ঘসময় মোবাইলের ছোট্ট পর্দায় তাকিয়ে থাকলে চোখেরও সমস্যা হয়। অবশ্যই এ ক্ষতিগুলো খুব সহজে বোঝা যায় না, লম্বা সময় পর ধীরে ধীরে বোঝা যায়। বিশেষ করে শিশুদের স্মার্ট ডিভাইস দেওয়ার সময় অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে। পাশাপাশি বড়রাও মোবাইল ব্যবহারের সময় শিশুদের দূরে রাখতে হবে। কারণ মোবাইলের রেডিয়েশনটা শিশুদের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, শিশুরা দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকায় এমনিতেই তাদের সামাজিক দক্ষতা কমে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে মানবিক গুণাবলি কমে যাচ্ছে। এর মধ্যে তারা স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করছে। এই স্মার্ট ডিভাইসে তাদের আসক্তি সমাজের জন্য এক বিরাট ক্ষতি। পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকি তো আছেই। তাই আমি মনে করি, শিশুদের হাতে স্মার্ট ডিভাইস যত কম দেওয়া যায় ততই মঙ্গল। আর বড়রা এটা ব্যবহার করলে শিশুদের দূরে রাখতে হবে। বড়দের এই রেডিয়েশন সহ্য করার এক ধরনের ক্ষমতা তৈরি হলেও শিশুদের সেটা নেই। ফলে ক্ষতিটা বেশি হচ্ছে শিশুদেরই।
ইত্তেফাক/জেডএইচ