শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আত্মত্যাগ ও উৎসর্গের খুশির ঈদ

আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২০, ১২:৪৫

মুসলিম সম্প্রদায়ের বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা আজ। ত্যাগ আর উৎসর্গের আদর্শে মহিমান্বিত পবিত্র এই দিনটি। বাঙালি সমাজে ‘কোরবানির ঈদ’ নামেও পরিচিত এই অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদুল আজহার জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করবেন।

এবার ঈদ এসেছে এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। করোনা মহামারির সঙ্গে বন্যার আঘাতে বিপর্যস্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অগণিত মানুষ। তাদের জীবনের ওপর নেমে আসা এ দুঃসময়ের অন্ধকার কবে কাটবে, তাও অজানা। ঈদের আনন্দ অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস। করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে শুরু হয় বন্যা। পাশাপাশি আজ থেকে শুরু হচ্ছে শোকাবহ আগস্ট।

রাজধানীসহ সারা দেশে মুসলিম সম্প্রদায় ঈদুল আজহা উদযাপন করবে। তবে করোনা মহামারির অনিশ্চিত আশঙ্কার মধ্যেই এসেছে এবারের পবিত্র হজ এবং ঈদুল আজহা। সীমিত আকারে হজ পালন হলেও দেশে ঈদুল আজহা উদযাপনে আছে স্বাস্থ্যবিধি পালনের নির্দেশনা।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে সবাইকে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।

করোনা দেশে তিন হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়েছে। লাখো মানুষের জীবিকা ছিনিয়ে নিয়েছে। রোজগার হারানো মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামমুখী হয়েছে। সঞ্চয় ভেঙে, ত্রাণে কিংবা ধারদেনায় যাদের জীবন চলছে তাদের ঘর থেকে ঈদ দূর আকাশের চাঁদের মতোই দূরের বিষয় হয়ে গেছে।

এবার ঈদে ছুটি তিন দিন ঘোষণা করেছে সরকার। ঈদ উপলক্ষে শুক্রবার ৩১ জুলাই, ১ আগস্ট শনিবার ঈদের দিন এবং ২ আগস্ট রবিবার ছুটি থাকবে। মহামারির কারণে এবারের ঈদের ছুটির সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাধ্যতামূলক কর্মস্থলে থাকতে হবে। তারা কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না।

করোনা মোকাবিলায় ও সংক্রমণ বিস্তার রোধে ঈদুল ফিতরের মতো এই ঈদেও সরকারের নির্দেশনায় খোলা মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। ঈদ জামাত হবে এলাকার মসজিদের ভেতরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামাত আদায় করা যাবে। কোলাকুলি এবং হাত মেলানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এবার পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজের জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে বাসা থেকে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন।

পবিত্র কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, চার হাজার বছর আগে আল্লাহর নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু নিজ সন্তান হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু আল্লাহর কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর এই ত্যাগের মনোভাবের কথা স্মরণ করে প্রতিবছর মুসলমানরা কোরবানি করে থাকেন।

জিলহজ মাসের ১০ তারিখ পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোনো দিন পশু কোরবানি দেয়া যায়। সে হিসেবে রবি ও সোমবারও কোরবানি করা যাবে।

ইত্তেফাক/আরকেজি