শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পেট্রোলের মান কমাতে চায় রিফাইনারিগুলো

আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২০, ০৮:৪৬

ভেজাল ও মানহীন জ্বালানি তেলের চক্র থেকে বের হতে পারছে না দেশের পরিবহন, কৃষি ও শিল্প খাত। সিংহভাগ দেশীয় রিফাইনারিগুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী গ্যাসের উপজাত (কনডেনসেট) পরিশোধন করতে না পারায় এ চক্র ভাঙছে না। রিফাইনারিগুলো নিজেদের মেশিনারিজ আপগ্রেড না করে এখন জ্বালানি তেল পেট্রোলের মান কমিয়ে আলাদাভাবে দেশীয় মানদণ্ড নির্ধারণ করতে বলছে শিল্প মন্ত্রণালয়কে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) মতামত দিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধও করেছে মন্ত্রণালয়টি।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিফাইনারিগুলো নিজেদের আধুনিকায়ন করলেই মানসম্পন্ন পেট্রোল উত্পাদন সম্ভব। কিন্তু তারা সেটি না করে বরং মান নির্ধারক সূচকই কমাতে বলছে। এটি অনেকটা শরীরের মাপে কাপড় না কেটে কাপড়ের মাপ অনুযায়ী কেন শরীর হয়নি—সেরকম প্রশ্ন তোলার মতো ঘটনা।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী পেট্রোলে রিসার্চ অকটেন নাম্বার (আরওএন) অন্তত ৮৭ থাকতে হয়। সে অনুযায়ী রিফাইনারিগুলোর জন্য পেট্রোলে আরওএন ৮৭ মাত্রায় রাখার জন্য বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। কিন্তু বেসরকারি খাতের ১৩টি রিফাইনারির (কনডেনসেট ফ্র্যাকশনেসন প্ল্যান্ট) মধ্যে ১১টি সে মান অনুযায়ী পেট্রোল উত্পাদন করতে পারে না। তাদের পেট্রোলে আরওএনের পরিমাণ ৮০র বেশি থাকে না। বরং অনেক সময় তা আরো কম থাকে। গত বছরের অক্টোবরে এবং চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এ সংক্রান্ত পৃথক দুইটি সংবাদ ইত্তেফাক প্রকাশ করে। সে ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ঐ ১১টি রিফাইনারিতে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে পাওয়া কনডেনসেট বিক্রি-সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে সরকারের আরেক সংস্থা পেট্রোবাংলা।

এ প্রেক্ষাপটে রিফাইনারিগুলো তেলের রিসার্চ অকটেন নাম্বার কমাতে শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। তারা আরো এন ৮০ নির্ধারণের অনুরোধ করেছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের কয়েক জন শীর্ষ কর্মকর্তারও তাতে প্রাথমিক সম্মতি রয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় গত ১৫ জুলাই এ বিষয়ে মতামত চেয়ে বিপিসিকে চিঠি পাঠিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।

নিম্নমানের পেট্রোলের কারণে গাড়ির যন্ত্র অপেক্ষাকৃত দ্রুত সময়ে নষ্ট-বিকল হয়। যন্ত্রের জীবনকালও কমে যায়। পরিবেশ দূষণও বাড়ে। এর ফলে জনগণ দুইভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশে মানসম্পন্ন তেল সরবরাহ নিশ্চিত করতে সম্প্রতি বিপিসি, বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট। বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ও সে অনুযায়ী সংস্থা-প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে। এমন অবস্থায় রিফাইনারিগুলো নিজেদের আপগ্রেড না করে মান সূচকই পালটে ফেলতে বলছে।

এ প্রসঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব বলেন, রিফাইনারিগুলোর চাওয়া এবং অনুরোধ বিপিসিকে জানিয়ে মতামত দিতে বলা হয়েছে। তাদের মতামত পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিপিসির চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান বলেন, দেশের ও জনগণের স্বার্থেই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রক্ষা করে তেল উত্পাদন ও বিপণন করা জরুরি। এর ব্যত্যয় হলে ক্ষতি হতে পারে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে আমরা জানাব।